বিজ্ঞাপন

শ্রম অধিকারের প্রশ্নে জাতির পিতা

May 1, 2022 | 6:22 pm

অনন্য প্রতীক রাউত

সারা বিশ্বের শোষিত-নিপীড়িত মানুষের কাছে আস্থার ঠিকানা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। জীবনের পুরোটা সময়েই যিনি শ্রমজীবি মানুষের অধিকারের প্রশ্নে সরব ছিলেন। জীবনের অনেকাংশে জেল অব্দি যিনি খেটেছেন শুধুমাত্র মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায়৷ এমনকি ছাত্রাবস্থায় ছাত্রত্বকেও বুড়ো আঙুল দেখিয়েছেন চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের স্বার্থে৷ বঙ্গবন্ধু শোষিত, নিপীড়িত মানুষের পক্ষে ছিলেন এবং তার আজীবনের লড়াই ছিল সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার, সে জন্য মে দিবস হয়ে উঠেছিল অনুপ্রেরণার এক অনন্য উদাহরণ। জেলের কয়েদিদের আপনি সন্মোধন কিংবা হঠাৎ ফসলের খেতে কৃষককে জড়িয়ে ধরে আলিঙ্গন বঙ্গবন্ধুর জীবন চলার মনুষ্যত্ববোধ সম্পন্ন উদাহরণের পাল্লা ভারী করে সর্বদাই৷

বিজ্ঞাপন

জাতির পিতা যেমন ছিলেন বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার তেমনি তিনি ‘দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর’ জন্য ছিলেন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। শ্রম অধিকার নিশ্চিতে তিনি তেমন শ্রমিককের পাশে থেকেছেন তেমনি শ্রমজীবিদের বিরোধী তথাকথিত শ্রেণীর বিরুদ্ধে দিয়েছেন চিরচেনা সে বজ্রহুংকার৷ ১৯৭৫ সালের ২৬শে মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহান স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে বঙ্গবন্ধু চাকরিজীবীদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, “আপনি চাকরি করেন আপনার মায়না দেয় ওই গরীব কৃষক, আপনার মায়না দেয় ওই গরীব শ্রমিক। আপনার সংসার চলে ওই টাকায়, আমি গাড়ি চলি ওই টাকায়। ওদের সম্মান করে কথা বলুন৷”

মমতাবোধ, ভালোবাসা সবটাই বঙ্গবন্ধুর শ্রমজীবিদের প্রতি আজীবন ছিল বলেই দৃঢ়তার সাথে দ্বিধাহীনভাবে বলতে পেরেছেন৷ সেদিন তিনি শ্রমজীবী মানুষকে নব জাগরণের প্রেরণা দিয়েছেন। তিনি বুঝিয়েছেন যে, শ্রমজীবী মেহনতি মানুষ হচ্ছে উৎপাদন, শিল্পোন্নয়ন, তথা অর্থনৈতিক উন্নয়নের অপরিহার্য উপাদান, যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের মধ্যে নিহিত থাকে দেশের সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষক-শ্রমিক মেহনতি মানুষকে বেশি ভালবাসতেন। তিনি আজীবন শোষিত, বঞ্চিত, নিপীড়িত ও নির্যাতিত শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের পাশে ছিলেন।

প্রকৃতপক্ষে, দেশ স্বাধীন হবার পরে নানা সংকট বা দূরাবস্থার মাঝেও জাতির পিতা সর্বদাই খেটে খাওয়া মানুষের অধিকারের প্রশ্নে সরব ছিলেন। এমনকি বেশ কিছু জোরালো কর্মসূচীও তিনি গ্রহণ করেছেন।

বিজ্ঞাপন

সংবিধানের ১৪ অনুচ্ছেদে কৃষক ও শ্রমিকের মুক্তির কথা বলা হয়েছে: রাষ্টের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হবে মেহনতি মানুষকে- কৃষক ও শ্রমিকের এবং জনগণের অনগ্রসর অংশ সমূহকে সকল প্রকার শোষণ হইতে মুক্তি দান করা। ১৫ (খ) অনু্চ্ছেদে কর্ম ও মজুরীর অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে: কর্মের অধিকার অর্থাৎ কর্মের গুণ ও পরিমাণ বিবেচনা করে যুক্তিসংগত মজুরির বিনিময়ে কর্মসংস্থানের নিম্চিয়তার অধিকার; যুক্তিসংগত বিশ্রাম বিনোদন ও অবকাশের অধিকার। ৩৪ অনুচ্ছেদে জবরদস্তি-শ্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে: সকল প্রকার জবরদস্তি শ্রম; এবং এই বিধান কোনভাবে লংঘিত হইলে আইনত; দন্ডনীয় অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে। বঙ্গবন্ধু নিখাদ আন্তরিকতায় স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের অধিকারের বিষয় অনেক বেশি গুরুত্ব পেয়েছে।

১৯৭২ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এর সদস্যপদ লাভ করে। বাংলাদেশ ১৯৭২ সালের ২২ জুন আইএলসি সম্মেলনে ৬টি কোর-কনভেনশনসহ ২৯টি কনভেনশন অনুসমর্থন করে। বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালে পহেলা মে কে মে দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেন এবং সরকারী ছুটি ঘোষণা করেন। এর আগে পাকিস্তানী শাসন-শোষণ থেকে বাংলার মানুষকে মুক্ত করার জন্য জাতির পিতা ৬ দফা দাবি পেশ করেন, সেখানও তিনি বাংলার শ্রমিক-কর্মচারীসহ সব শ্রেণী-পেশার মানুষকে মুক্তির মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ করেন। স্বপ্ন দেখান একটি সোনালি দিনের, একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার।

অন্যদিকে, ১৯৭৩ সালে আলজিয়ার্সে অনুষ্ঠিত জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন ন্যাম শীর্ষ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু তার ভাষণে বলেছিলেন,“বিশ্ব আজ দুইভাগে বিভক্ত, এক দিকে শোষক, আর অন্য দিকে শোষিত। আমি শোষিতের পক্ষে”|

বিজ্ঞাপন

শুধু দেশেরই নয়, সারা বিশ্বের শোষিত, বঞ্চিত, নিপীড়িত, নির্যাতিত শ্রমজীবী মেহনতি মানুষকে হৃদয়ে শক্তপোক্ত স্থান দিয়েছিলেন বলেই বিশ্ব দরবারেও এমন মর্মভেদী বাণী উচ্চারণ করেছিলেন। তিনি জানতেন শোষিত নিপিড়িত মানুষের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠিত না হলে সমাজে সাম্যতা আসবে না।

শ্রমিকরা দেশের চালিকাশক্তি তা বঙ্গবন্ধু বহু আগেই অনুধাবন করেছিলেন সুস্পষ্ট ভাবে৷ বিশেষত বঙ্গবন্ধুর “আমার দেখা নয়াচীন” গ্রস্থে চীনের অর্থনৈতিক কিংবা কারিগরি বিকাশকে বঙ্গবন্ধু সুনিপুণ ভাবে বিশ্লেষণ করেছেন। শ্রমিকদের অর্থনৈতিক সক্ষমতা, কর্মপরিবেশ, বিনোদন সবকিছুকেই তিনি নিজস্ব চিন্তার জালে মেলে ধরেছেন এবং বাংলাদেশকে সাজানোর আংশিক রূপরেখা, শ্রমিকদের নির্ভরতা ও সুপার পাওয়ার ন্যাশনে পরিণত যর্থার্থ দিকনির্দেশনাও ছিল তার এই গ্রস্থে। বঙ্গবন্ধু কতোটা শ্রমিক বা শ্রমজীবি অন্তঃপ্রাণ তা উপলব্ধি করতে হয়তো বিস্তর পড়াশোনার প্রয়োজন নেই। তবে পাঠ কার্যক্রম বাড়ালে অবাক হওয়া ছাড়া উপায় নেই৷ কেননা বঙ্গবন্ধু ছিলেন সূক্ষ্ণ বুদ্ধি, চিন্তা ও আপন বলয়ের একজন দূরদর্শী ব্যক্তি। যিনি অর্ধশতকের ভবিষ্যৎ আজকেই দেখতে পেতেন।

শ্রমিক-মুজিব সম্পর্ক একপ্রকার আত্নার আত্নীয়ের মত। জীবনের পুরোটা সময়ই মুজিব কাটিয়েছেন খেটে খাওয়া মানুষের স্বার্থে। মুজিবের হাত ধরে তার সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা শ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় অবিরাম কাজ করে যাচ্ছে। ইদের বোনাস, নারীশ্রমিকদের মাতৃকালীন ছুটি, শ্রমঘন্টা সহ স্বাভাবিক বিষয়গুলোতে পূর্বের দূরাবস্থা আজ অতীতের নামান্তর৷ যদিও স্বার্থনেষী কিছু মালিকের জন্য এসব দূূূর্দশা অনেকাংশে দৃষ্টিগোচর হচ্ছে। এসব বিষয়ে পর্যাপ্ত নজরদারি করা প্রয়োজন৷ পাশাপাশি বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর সঠিক বাস্তবায়ন এবং ত্রুটিপূর্ণ অনুচ্ছেদ গুলো ঢেলে সাজানো এখন সময়ের দাবী৷ শ্রমিকদের স্বার্থ এবং আত্নতৃপ্তি নিশ্চিত করা গেলেই বদলাবে অর্থনৈতিক গতিশীলতার চিত্র। বাড়বে মাথাপিছু আয় এবং সমৃদ্ধি। এসব বিষয়ে নিজের চিন্তা শক্তির জাল উন্নত করে সকলের উচিত শ্রমিকদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া৷ বঙ্গবন্ধু খেটে খাওয়া মানুষের প্রতি যে আদর্শিক অবস্থান দেখিয়েছেন তা ধারণ করাও আমাদের নৈতিক কর্তব্য।

লেখক: শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

বিজ্ঞাপন
প্রিয় পাঠক, লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই ঠিকানায় -
sarabangla.muktomot@gmail.com

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব, এর সাথে সারাবাংলার সম্পাদকীয় নীতিমালা সম্পর্কিত নয়। সারাবাংলা ডটনেট সকল মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে মুক্তমতে প্রকাশিত লেখার দায় সারাবাংলার নয়।

সারাবাংলা/এজেডএস

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন