বিজ্ঞাপন

অলোক বসু-এর ছোটগল্প ‘দিব্যদৃষ্টির ছবি’

May 2, 2022 | 5:49 pm

গত ক’দিন ধরে ব্যাপারটা হাসিঠাট্টার পর্য়ায়েই ছিল। কেউ আঁচ করতে পারেনি যে ঘটনাটা এমন বিপজ্জনক রূপ নেবে। জামান সাহেবকে নিয়ে তার অফিসের সহকর্মীরা বেশ মজেই ছিল ক’টা দিন। মজে থাকার কারণটা একটু পরেই বলা যাক।

বিজ্ঞাপন

জামান সাহেবকে অফিসে সবাই একটু সামলেই চলেন। খিস্তি-খেউড় আর নানারকম রসিকতায় তিনি সকলকে জমিয়ে রাখতে বেশ পারঙ্গম। পারতপক্ষে সকলে একটা দূরত্ব বজায় রেখে চললেও তার জনপ্রিয়তা কিন্তু কোনো অংশে অন্য কারও থেকে কম নয়। সাংঘাতিক কাজের মানুষ। এজন্য তার ওপর কাজের চাপও থাকে প্রচুর। যে পরিমাণ কাজ করেন সে পরিমাণ মূল্যায়ন তিনি অফিস থেকে পান না। এজন্য তার মনে অনেকদিন ধরেই একটা ক্ষোভ কাজ করছে। আর এই ক্ষোভ মেটাতেই জামান সাহেব নানারকম খিস্তি-খেউড় করেন মাঝেমধ্যে। তিনি পছন্দ করেন না এমন কোনো বিষয় নিয়ে তার সামনে কথা তুললেই আর থামাথামি নেই। যতক্ষণ চোয়াল ক্লান্ত না হয় ততক্ষণে জামান সাহেবের খামতি নেই। যিনি জামান সাহেবকে চেনেন না বা জানেন না তার জন্য একবারই জামান সাহেবের বাক্যবর্ষণ যথেষ্ঠ। যারা তাকে চেনেন বা জানেন তারা পারতপক্ষে তাকে ঘাটান না। তবে দু’একজন যে আবার জামান সাহেবকে মাঝেমধ্যে একটু নাড়াচাড়া করেন না, তেমন নয়। হিউম্যান রিসোর্সের আহসান সাহেব তেমন একজন। মাঝেমধ্যেই তিনি জামান সাহেবের টেবিলে এসে ‘একটা সিগারেট হবে নাকি’ বলে এমন ভাব করেন যেন তিনি জানেন না যে জামান সাহেব সিগারেট খান না। আজও তাই করলেন আহসান সাহেব। আর তখনই জামান সাহেব শুরু করে দেন তার ঐতিহাসিক বচনামৃত। ‘সস্তা ফাজলামো করবেন না, আপনি জানেন না যে আমি সিগারেট খাই না’ কথাটা বেশ রাগের স্বরেই বলে ওঠেন জামান সাহেব। আহসান সাহেব জামান সাহেবের ঠিক উল্টোস্বরে কণ্ঠ নরম করে বলেন-

: ওহ্ ভুল হয়ে গেছে। আমারতো একেবারেই মনে ছিলো না আপনি সিগারেট খান না।

: এ নিয়ে একশ দিন আপনাকে কথাটা বলেছি। আপনি প্রতিবারই একই কথা বলেন। এধরনের ফাজলামি আমি একেবারেই সহ্য করতে পারি না।

বিজ্ঞাপন

কণ্ঠ আরও মোলায়েম করে আহসান সাহেব আবার বলেন-

: আচ্ছা জামান সাহেব আপনি অফিসে সিগারেট খান না ঠিক আছে…

: অফিসে খাই না মানে? অন্যকোথাও খাই নাকি? কোথাও খাই না, কখনোই খাই না।

বিজ্ঞাপন

: না মানে অফিসে যদি খেতেন, তাহলে আমি চাইলে আমাকে একটা দিতেন না?

: যা খাই না, তা দেবো কোত্থেকে?

: যা খান, তাই একটা কিছু দেন না?

আশেপাশের সবাই ওদের কথা শোনে এবং মুচকি মুচকি হাসে। এই কথপোকথনের শেষটা সবাই অনুমান করতে পারে। অন্যরা জামান সাহেবকে ঘাটানোর সাহস না পেলেও, আহসান সাহেব ঠিকই এমন কিছু করে বসবেন যাতে জামান সাহেব বেশি দূর আর এগুতে পারবেন না। দুজনের কার্যকলাপ কোথায় গিয়ে শেষ হয় সেদিকেই সবার কৌতুহল। আড়ালে অনেকেই মনে মনে পুলকিত হয় এই ভেবে যে, জামান সাহেব কিছুক্ষণের মাঝেই ধরাশায়ী হয়ে পড়বেন। তবে জামান সাহেবের কিঞ্চিত আদিরস মিশ্রিত উচ্চকিত বচনমালা যেমন আড়ালে শুনতে সবাই ভালোবাসে, তেমনি তার ধরাশায়ী হওয়ায়ও সবাই গোপনে আনন্দ প্রকাশ করে। কারণ প্রায় প্রত্যেকেরই জামান সাহেবের তোপের মুখে পড়ে নাজেহাল হওয়ার স্মৃতি রয়েছে। তাই সবাই অপেক্ষা করতে থাকে আহসান সাহেব জামান সাহেবকে কীভাবে বাঘবন্দি করে ফেলেন।

বিজ্ঞাপন

: কি দেবো, কি খাই? জামান সাহেবে আস্তে আস্তে নিজের ভেতর গুটিয়ে আসেন।

: কিছুই খান না? আরে ভাততো খান। দেখি ভাবী আজ কী পাঠিয়েছেন আপনার জন্য।

আহসান সাহেব এমনভাবে কথাগুলো বলেন যে জামান সাহেবের পক্ষে আর নির্লিপ্ত থাকা সম্ভব হয় না, তিনি হটপটটা এগিয়ে দেন। জামান সাহেব হটপট খুলে সেখান থেকে দু’টুকরা বেগুনভাজি বের করে নিজের মুখে পুড়ে দিয়ে বলতে থাকেন-

: ভাবীর সাথে একদিন আমার দেখা হওয়া দরকার।

: কেন?

: উনি কি আপনাকে এখনো চিনতে পারেননি।

: কেন?

: চিনলে আপনাকে রোজ বেগুন ভাজা খাওয়ায়? আপনার মুখ এমনিতেই সারাক্ষণ চুলবুল করে, তার ওপর আবার রোজ রোজ বেগুনভাজা।

: যানতো এখন যান, আমার হাতে কাজ আছে অনেক।

এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে জামান সাহেব কাজে মন দেওয়ার ভান করেন। আহসান সাহেবও নিজের মধ্যে একটা বিজয়ীর ভাব নিয়ে চলে যান। আশেপাশের সহকর্মীরা এমনভাবে কাজে মন দেয় যেন তারা কিছুই দেখেননি, কিছুই শোনেননি। জামান সাহেব বুঝতে পারেন যে অন্যরা এতক্ষণ বেশ মজাই পেয়েছে এবং সেটা তার কারণে নয়, আহসান সাহেব যে তাকে পরাস্ত করতে পেরেছেন সেজন্য। সেই খেদটা মেটাতে আহসান সাহেব রুম থেকে বের হয়ে যাওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে জামান সাহেব বেশ উচ্চকিত কণ্ঠে শুরু করেন-

: যত্তসব আলতু ফালতু লোকজন। কাজ নাই, কম্ম নাই শুধু শুধু অন্যের ডিস্টার্ব করা।

জামান সাহেব লক্ষ করেন তার কথায় কেউ কান দিচ্ছে না। তিনি যে হারেননি সেটা বোঝানোর জন্য গলা আরও চড়িয়ে বলতে থাকেন- জামানকেতো চেনে না, একদিন এমন অপমান করে দেবো যে আর এমুখো হবে না।

ডাকাত চলে যাওয়ার পরে যেমন ভীতু গৃহকর্তা নিস্ফল আস্ফালন করে, তেমনি একপ্রস্থ গর্জন করে থেমে যান জামান সাহেব। মাঝে মাঝে অন্যরা সায় দিলে তিনি স্বস্তি পান, না দিলে নিজের অক্ষমতায় চোখমুখ খিচকে টেবিলে বসে কাজ করতে থাকেন। বেশিরভাগ সময়ই যেটা লক্ষ করা যায়, মেজাজ খারাপ হওয়ার মতো কোনো ঘটনা ঘটার পরে তিনি আর কোনো কাজ করতে পারেন না। কাগজের ওপর নিজের মনে আঁকিবুঁকি করতে থাকেন। সেসব আঁকিবুঁকি কখনো অশ্লীল গালিগালাজ, কখনো বিভৎস কোনো দৃশ্য, কখনোবা ভয়ানক কোনো জন্তুর আকার ধারণ করে। আজ সেটুকু সময় পাওয়ার আগেই অর্থাৎ আহসান সাহেব চলে যাওয়ার অল্পক্ষণের মাঝেই জিএম সাহেব ঘরে ঢুকলেন। ঢুকেই দেখেন একা মনে জামান সাহেব গলা চড়িয়ে বকে যাচ্ছেন। জিএম সাহেব কিছু একটা বলতে গিয়েও বলতে পারলেন না। শুধু বললেন, ‘জামান সাহেব আপনি একবার আমার ঘরে আসুনতো’। বলেই জিএম সাহেব বেরিয়ে গেলেন। তার পেছন পেছন জামান সাহেবও গেলেন।

প্রায় আধাঘণ্টা পরে জামান সাহেব তার টেবিলে ফিরে এসে কাজে মন দিলেন। জিএম সাহেবের ঘরে তাদের দুজনের মাঝে কী কথা হয়েছে কিংবা কী হয়েছে, তা তারা দুজন ছাড়া তৃতীয় আর কেউ জানেন না। জিএম স্যার কী বললেন বা কেন ডাকলেন জানার আগ্রহ সবারই কিন্তু কেউ কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস পেল না। জামান সাহেব নিজমনে কাজ করে চলেছেন। অন্যরাও যথারীতি পরিবেশ গম্ভীর করে যার যার কাজে মন দিলেন।
ঘণ্টাখানেক ধরে অফিসের এই কক্ষে পিনপতন নীরবতায় কাজ চলছিল। কর্তৃপক্ষ এমনটাই চান। কিন্তু বেরসিক জিএম সাহেব আবার এই কক্ষে ঢুকেই চমৎকার কাজের পরিবেশটা ভেস্তে দিলেন। তিনি গটগট করে এসে সোজা দাঁড়ালেন জামান সাহেবের টেবিলের সামনে। জামান সাহেব তখনও তার হাতের কাজে ব্যস্ত। জিএম সাহেব কোনো কথা বলছেন না। পুরো ঘরে একটা থমথমে ভাব। কী হয় কী হয়। মুহূর্তগুলো যেন জগদ্দল পাথর হয়ে গেছে। নড়তেই চাইছে না।

নিরবতা ভাঙলেন জিএম সাহেবই। তিনি গলা খাকাড়ি দিয়ে ডাক দিলেন-

: জামান সাহেব-

হুড়মুড় করে দাঁড়িয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় সবাই জামান সাহেবের দিকে দৃষ্টি নিবন্ধ করে আছেন। কিন্তু জামান সাহেব দাঁড়ালেন না। সবার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। হয়তো জিএম সাহেবেরও। জামান সাহেব স্বাভাবিকের থেকেও স্বাভাবিক ভঙ্গিতে জিএম সাহেবের পা থেকে আস্তে আস্তে উপরের দিকে চোখ তুলছেন। জিএম সাহেবের চোখে চোখ পড়তেই ফিক করে হেসে ওঠেন জামান সাহেব। জামান সাহেব আর জিএম সাহেব ছাড়া ঘরের প্রত্যেকেই একে অন্যের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকেন কিংকর্তব্যবিমূঢ়তায়। কেউ ঘটনার কিছুই আঁচ করতে পারে না। জিএম সাহেব শকুনের মতো ছোঁ মেরে জামান সাহেবের সামনের কাগজ টুকুরা টেনে হিচড়ে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যান। যে যার টেবিল ছেড়ে জামান সাহেবের টেবিলে হাজির হয়। কিন্তু কেউ কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস পায় না। আসলে কীভাবে জিজ্ঞেস করা যায় সেটা নিয়ে যতটা ভাবনা সবার, তার থেকে বেশি ভাবনা জামান সাহেব যদি নিজের থেকে সব খুলে বলেন সেদিকে।

জামান সাহেব বেশ কিছুদিন ধরে তার ছেলের গল্প বলতেন। তার ৭/৮ বছরের ছেলেটি নাকি আজকাল সকলকে দেখতে পান ন্যাংটো অবস্থায়। যে যত দামি কিংবা মোটা কাপড়ই পরুক না কেন তার ছেলে তাকে পুরো উলঙ্গভাবে দেখতে পায়। ছেলে যার দিকে তাকায় তার গায়ে একটি সুতাও দেখতে পায় না। প্রথম দিকে এটা নিয়ে বেশ রসিকতা চলছিল। জামান সাহেব ক্রমেই বেশ চিন্তিত হয়ে পড়েন। শহরের সবচেয়ে নামকরা মনোবিজ্ঞানী, মনোচিকিৎসকের সাথে সিটিংও দিয়েছেন ছেলেকে নিয়ে। ছেলের কথা যখন তিনি যার কাছে বলেছেন, প্রথমে কেউ বিশ্বাস করতে চায়নি। সবাই যাতে বিশ্বাস করে সেজন্য তিনি বেশ গুরুত্ব নিয়ে প্রসঙ্গটি উত্থাপন করতেন। তার বলায় বেশ জোর থাকত। ছেলে আজকাল আর মানুষকে দিগম্বর অবস্থায় দেখতে পায় কিনা জানা হয়নি অন্যদের কিন্তু জামান সাহেবের আজকালকার কথা বলার ভঙ্গিতে মনে হচ্ছিল তিনিও যেন একটু একটু করে তার ছেলের মতোই অন্যদেরকে দিগম্বর দেখতে পান। শুরুটা হয় পা দিয়ে। পায়ে জুতা নাই। পুরুষ মানুষ হলে পরনে প্যান্ট নেই, আন্ডারওয়্যার নেই। আরও উপরে গেলে গেঞ্জি বা শার্ট কিছুই নেই। মেয়েদের ক্ষেত্রেও একই রকম অবস্থা। গত কয়েকদিন ধরে জামান সাহেব এসব প্রসঙ্গে কথা বলতেন অনেকের সঙ্গেই। যাদের সঙ্গে কথা বলতেন তারা বেশ মজা পেত এবং মজেই থাকত জামান সাহেবের কথায়। এমনিতেই তার কথা বলার ভঙ্গি এবং স্বরের ওঠানামার সঙ্গে আদিরসের খানিকটা মিশ্রণ সবাইকে প্রলুদ্ধ করত। সেই সাথে ছেলের কাছ থেকে ধীরে ধীরে পাওয়া তার দিব্যদৃষ্টির এ গুণটি সকলকে আরও উৎসাহিত করত। জামান সাহেবও থেমে থাকার মানুষ নন। দিনদিন তার দিব্যদৃষ্টি খুলে যাচ্ছিল। প্রতিদিনের অনুশীলনে ক্রমশই শানিত হচ্ছিল তার চোখের জ্যোতি। অফিসের বড় সাহেব থেকে পিওন পর্যন্ত সকলের কানেই অল্পবিস্তর তার এই গুণের কথা কোনো না কোনোভাবে পৌঁছে যাচ্ছিল।

আজ প্রমাণ মিলতেই কারও আর কোনো সংশয় রইল না। জিএম সাহেব নিজ কক্ষে ফিরে গিয়ে জামান সাহেবের এই বিশেষ গুণের জন্য সার্টিফিকেট লিখে পাঠালেন। যার মর্মার্থ- আগামীকাল থেকে আপনাকে আর অফিসে আসতে হবে না। আগামী মাসের এক তারিখে এসে অ্যাকাউন্টেন্টস থেকে যাবতীয় পাওনা বুঝে নিয়ে যাবেন। যত তাড়াতাড়ি পারেন অফিস থেকে চলে যাবেন। আর যাওয়ার আগে অবশ্যই একটা রেজিগনেশন লেটার লিখে রেখে যাবেন। অসম্ভব সুন্দর এই সার্টিফিকেট পাওয়ার পিছনের কাহিনীটা এর থেকেও আরও বেশি সুন্দর। জিএম সাহেব জামান সাহেবকে তার কক্ষে ডেকে নিয়ে গিয়ে অফিসের নিয়ম-কানুন মেলে চলার কথা বলেন। আফটার অল ভদ্রলোকের অফিস বলে কথা। জামান সাহেবকে অতি জরুরি কিছু কাজও ধরিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। কাজগুলোর অবস্থা দেখতে এসে জিএম সাহেব যা দেখলেন তা ভয়ংকর। অফিসের জরুরি কাগজের খালি অংশে জামান সাহেব জিএম সাহেবের পূর্ণ অবয়ব একটা ছবি এঁকেছেন। সম্প্রতি তিনি যে দিব্যদৃষ্টি অর্জন করেছেন সেই দৃষ্টি দিয়েই তিনি জিএম সাহেবকে দেখেছেন এবং হুবহু তেমন একটি ছবি এঁকে ফেলেছেন। এঁকেছেনতো এঁকেছেন তা আবার কোনো সাধারণ কাগজে নয়, অফিসের অতি জরুরি একটা কাগজে। সে ছবির প্রদর্শনীর দর্শকও আবার জিএম সাহেব। অতএব সার্টিফিকেট না মিলে আর যায় কোথায়?

সার্টিফিকেটখানা হাতে নিয়ে চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে আছেন জামান সাহেব। গত ক’দিন ধরে যারা জামান সাহেবের কাছে তার দিব্যদৃষ্টিতে দেখতে পাওয়ার গল্প শুনেছেন, তারাই এখন বেশি চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। তারা যদি জামান সাহেবকে প্রচুর উৎসাহিত না করতেন তাহলে হয়তো এমন একটা কান্ড ঘটিয়ে বসতেন না জামান সাহেব। অনেকেই অপরাধবোধে ভুগতে শুরু করেন। কেউ কেউ জিএম সাহেবের সাথে দেখা করে ক্ষমা প্রার্থনার জন্য জামান সাহেবকে পরামর্শ দিলেন। জামান সাহেব কারও কোনো কথায় কান দিলেন না। নিজের চেয়ারে বসে আবার কাজে মন দিলেন। কেউ আর তার কাছে যাওয়ার সাহস পেলেন না।

অফিস ছুটি হওয়ার অনেক আগেই জামান সাহেব বেরিয়ে গেলেন। কেউ বুঝতে পারেননি তিনি কাউকে কিছু না বলে এভাবে চলে যাবেন। প্রথমে কেউ কেউ ভেবেছিলেন হয়তো জিএম স্যারের কক্ষে গেছেন, অল্পক্ষণ পরেই ফিরে আসবেন। আসার সময় হয়ত মুখে এক চিলতে হাসি থাকবে নয়ত মুখ ভার থাকবে। কিন্তু জামান সাহেব অনেকক্ষণ তার টেবিলে ফিরছে না দেখে কেউ কেউ তার টেবিলের দিকে এগিয়ে যায়। তার টেবিলের ওপর পড়ে আছে একটা রিজাইন লেটার। তার নিচে আর একটা ছবি। জামান সাহেবের আঁকা। ছবিতে দেখা যাচ্ছে- জিএম সাহেবের কেতাদুরস্ত পোশাক-আশাক। হাতে একটা ফাইল। ফাইলের ওপর লেখা অফিসের নিয়ম-কানুন। তার পাশেই হিউম্যান রিসোর্সের আহসান সাহেব। তিনি বেগুনভাজা খাওয়ায় ব্যস্ত। অন্য সবাই মুচকি হাসছে। সবারই পরনে সুন্দর সুন্দর পোশাক। শুধু জামান সাহেব ছাড়া। ছবিতে দেখা যাচ্ছে জামান সাহেব দিগম্বর হয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন।

সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন