বিজ্ঞাপন

বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস: গণমাধ্যম ও বাংলাদেশ প্রেক্ষিত

May 3, 2022 | 8:54 pm

ইমরান ইমন

গণমাধ্যম হলো মানবসভ্যতার প্রতিচ্ছবি। আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর চিত্র ধারণ করে সভ্যতার বুকে স্বাক্ষর রেখে চলে গণমাধ্যম। গণমাধ্যমকে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলে অভিহিত করা হয়। গণতন্ত্র ও গণমাধ্যম শব্দ দুটির মধ্যে ‘গণ’ বা জনগণের অংশগ্রহণ বুৎপত্তিগতভাবেই নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত হয়ে আছে। আবার গণতন্ত্রের সঙ্গে গণমাধ্যমের এক ধরনের সমান্তরাল মিথষ্ক্রিয়াও কার্যকর।

বিজ্ঞাপন

অর্থাৎ, গণতন্ত্রের জন্য যেমন গণমাধ্যম দরকার, তেমনি গণমাধ্যমের আক্ষরিক অর্থে গণমাধ্যম হয়ে ওঠার জন্য দরকার গণতন্ত্রের সঠিক চর্চা।গণমাধ্যমকে একটি রাষ্ট্রের দর্পন বা আয়না স্বরূপ বিবেচনা করা হয়।তাই একটি রাষ্ট্রের উন্নতি,অগ্রগতি ও রাষ্ট্রের মূল লক্ষ্য-উদ্দেশ্য পূরণে গণমাধ্যমের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।গণমাধ্যম সরকার এবং জনগণের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করে রাষ্ট্রকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করে।

যেকোনো রাষ্ট্রে গণমাধ্যম হবে গণমানুষের সারথিস্বরূপ। অসহায় মানুষের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, যন্ত্রণা, হতাশা, দুর্দশা, অধিকার, অসাম্য প্রভৃতি বিষয় তুলে ধরে সমাধানের পথ ত্বরান্বিত করবে গণমাধ্যম। আবার দুর্নীতি, অপরাধ, অনাচার, অবিচার তথা সমাজের নেতিবাচক দিকগুলোর বিরুদ্ধেও হবে সোচ্চার।

আর এ সোচ্চার হওয়ার মধ্য দিয়ে মানুষকে সংশোধনের পথ বাতলে দিয়ে একটি সুন্দর, নৈতিক ও মানবিক পৃথিবী গড়ে তোলাই হবে গণমাধ্যমের অন্যতম লক্ষ্য। একমাত্র স্বাধীন গণমাধ্যমই বা গণমাধ্যমের স্বাধীনতাই এ লক্ষ্য অর্জনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু গণমাধ্যমের স্বাধীনতার সঙ্গে গণমানুষের অধিকারের সম্পর্ক খুঁজতে গেলে তাকাতে হবে সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্রের দিকে। ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর ফ্রান্সের প্যারিসে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে এ ঘোষণা প্রদান করা হয়। এ ঘোষণাপত্রের ১৯ তম ধারায় বলা হয়েছে, ‘প্রত্যেক মানুষেরই মতামত পোষণ ও মতামত প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার রয়েছে। অবাধে মতামত পোষণ এবং রাষ্ট্রীয় সীমানা নির্বিশেষে যেকোনো মাধ্যমে ভাব ও তথ্য জ্ঞাপন, গ্রহণ ও সন্ধানের স্বাধীনতাও এ অধিকারের অন্তর্ভুক্ত।’

গণমাধ্যমের একটি শক্তিশালী কাঠামো হচ্ছে গণমাধ্যম নির্বাক মানুষের সবাক বন্ধু। গণমাধ্যম শব্দহীনের মুখে শব্দ ফোঁটায়, শক্তিহীনকে শক্তি দান করে। অন্যদিকে অপরাধী, অন্যায়কারী ও দুষ্টুজনের জন্য মূর্তিমান আতঙ্কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া একটি সংশোধনকারী মাধ্যমও। তাই, স্বাধীন বা নিরপেক্ষ গণমাধ্যম মানেই আপামর জনসাধারণের পক্ষে তাদের অব্যক্ত কথাগুলো বলার একটি বড় মাধ্যম। কিন্তু এদেশের গণমাধ্যমের সার্বিক অবস্থার দিকে তাকালে এর উল্টো চিত্রটাই চোখে পড়ে। এখানে বেশিরভাগ গণমাধ্যম গড়ে তোলা হয়েছে নিজেদের ঠাট বজায় রাখার জন্য।

এখন প্রশ্ন হলো ‘জাতির বিবেক’ খ্যাত এই গণমাধ্যম তার অবস্থান থেকে কতটুকু নিরপেক্ষ বা স্বাধীনভাবে তার দ্বায়িত্ব পালন করছে। বাংলাদেশের গণমাধ্যমসমূহের অবস্থা কেমন? গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে কর্মরত আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘‘রিপোটার্স স্যান্স ফ্রন্টিয়ার্স’’ বা আরএসএফ এর এপ্রিলের শেষার্ধে প্রকাশিত ২০২০-এর রিপোর্টে দেখা গেছে, বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান বর্তমানে ১৫১তম স্থানে- যা এর আগের বছর ছিল ১৫০তম স্থানে। ২০১৮ সালে ছিল ১৪৬তম স্থানে। যা একটি দেশের গণমাধ্যম সোসাইটির জন্য হুমকি স্বরূপ।

বিজ্ঞাপন

এ সম্পর্কে ভয়েস অব আমেরিকার এক রিপোর্টে বলা হয়েছে– দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা টিআইবি, বাংলাদেশের মানবাধিকার সংগঠন আইন ও শালিস কেন্দ্রসহ অনেক সংস্থাই বাংলাদেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতার নিম্নধারার পরিস্থিতিতে বিভিন্ন সময় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
তাছাড়া আমরা যদি বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটের দিকে তাকাই তাহলে এটা প্রতীয়ামান হবে যে, বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যমের স্বাধীনতা আজ চরম হুমকির মুখে।

বেলজিয়ামের ব্রাসেলসভিত্তিক গণমাধ্যম সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব জার্নালিস্টস (আইএফজে)-এর তথ্যমতে, ২০১৮ সালে সারা বিশ্বে মোট ৯৪ জন সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মী হত্যার শিকার হয়েছেন। তবে, ফ্রান্সের প্যারিসভিত্তিক সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক সংস্থা রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার-এর তথ্য অনুযায়ী, এ সংখ্যা ৮০ জন। কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস ও ইউনেস্কোর এক যৌথ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ১৯৯০ দশকের পর থেকে প্রায় ১৩০০ সাংবাদিক নিহত হয়েছেন (দি টেলিগ্রাফ, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৮)। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ৩৪৮ জন সাংবাদিককে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বিভিন্ন গোষ্ঠীর হাতে জিম্মি হয়েছেন ৬০ জন (ডয়চে ভেলে, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৮)।

সংবাদকর্মীদের উপর হামলা সারা বিশ্বে বিভিন্ন সময়ে বিশেষ করে বর্তমানে এতটাই নিত্য নতুন হয়ে উঠেছে যে, অনেকেই সাংবাদিকদের ওপর এমন নিপীড়ণকে অভিহিত করছেন ‘নিউ নরমাল’ হিসেবে। ডয়চে ভেলে ও দি টেলিগ্রাফের পৃথক দুটি প্রতিবেদনে বর্তমান সময়টাকে সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

বিশ্ব নেতা ও গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ দাবিদার যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গণমাধ্যম নিয়ে বেশ কয়েকবার টুইটারে আক্রমণাত্মক মন্তব্য করেছেন। রোহিঙ্গা নির্যাতন নিয়ে প্রতিবেদন করায় মিয়ানমারের দুই সাংবাদিককে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সবচেয়ে বেশি নির্মম ও জঘন্যতম ঘটনা ছিল, সৌদি দূতাবাসের ভেতরে সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ড। এ হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ উঠেছে। সারাবিশ্বে এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার রেশ না কাটতেই গ্রেফতার হলেন জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। ফলে সারাবিশ্বে মুক্তিকামী মানুষের মধ্যে বিরাজমান উৎকণ্ঠাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া আফগানিস্তান, সিরিয়াসহ বিভিন্ন দেশে অনেক সাংবাদিক হত্যার শিকার হয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

তাছাড়া বর্তমানে চীনের উহান নগরী থেকে মহামারি করোনা ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়ার ভিডিওসহ সত্য সংবাদ প্রকাশ করায় তিন জন সাংবাদিককে নিখোঁজ করে ফেলা হয়। যাদের এখনো কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

আমাদের দেশেও সাংবাদিকরা, সংবাদপত্রশিল্প বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মহলের দ্বারা অত্যাচারিত-নির্যাতিত হয়ে আসছে। কখনো সাংবাদিক নিখোঁজ, কখনো পত্রিকা বন্ধ করে দেওয়া এগুলো নিত্য ব্যাপার। সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যাসহ সাংবাদিক নির্যাতনের আরো অনেক ঘটনা রয়েছে এবং প্রতিনিয়ত ঘটছে যেসব বলে শেষ করা যাবে না।

প্রতিবছর ৩ মে, ‘ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ডে’ বা ‘বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস’ পালিত হয়।এবারের দিবসটির মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে : ‘নজরদারির আওতায় গণমাধ্যম’। বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে আরও এক ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ) ২০২১ সালের এই সূচক প্রকাশ করে। ২০১৯ সাল থেকে প্রতিবছর সেই সূচকে এক ধাপ করে পেছাচ্ছে বাংলাদেশ।

সূচকে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৫২তম। সূচকে সবার শীর্ষে রয়েছে নরওয়ে। ২০২০ সালের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৫১তম। আর ২০১৯ সালের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৫০তম। অর্থাৎ, গতবারের সূচকেও বাংলাদেশের এক ধাপ অবনতি হয়েছিল। এবারের সূচকে প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সবার নিচে। বাংলাদেশের চেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে পাকিস্তান (১৪৫), ভারত (১৪২), মিয়ানমার (১৪০), শ্রীলঙ্কা (১২৭), আফগানিস্তান (১২২), নেপাল (১০৬), মালদ্বীপ (৭৯), ভুটান (৬৫)। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গণমাধ্যম কতটা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে, তার ভিত্তিতে ২০০২ সাল থেকে আরএসএফ এই সূচক প্রকাশ করে আসছে। এসব ঘটনা বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের নাজুক পরিস্থিতি তুলে ধরে। তাছাড়া সম্প্রতি আলোচিত মুনিয়া মৃত্যুর ঘটনায় এদেশের সংবাদমাধ্যমগুলোর চরিত্র কেমন, তারা জনগণকে সংবাদ প্রদানের নামে প্রকৃতপক্ষে কি চায় তা গণমানুষের সামনে উঠে এসেছে। মুনিয়া মৃত্যুর সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত বসুন্ধরা গ্রুপের এমডির নাম উঠে আসে। ঘটনার শুরু থেকেই এদেশের তথাকথিত মেইনস্ট্রিম মিডিয়াগুলো বসুন্ধরা গ্রুপের এমডির নামটাও পর্যন্ত মুখে নিতে পারছে না। আবার কিছু কিছু সংবাদমাধ্যম ঘটনার মোড় অন্যদিকে ঘুরানোর জন্য মুনিয়া ও তার পরিবারকে উল্টো ফাঁসানোর চেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। আর এ ঘটনা নিয়ে বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন মিডিয়াগুলো একটা শব্দও লিখেনি। বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন মিডিয়াগুলো চাইলে কৌশলগতভাবে সংবাদ ও সাংবাদিকতার নিয়মনীতি মেনে উক্ত বিষয়ে লেখালেখি করতে পারতো। এতে তাদের নিরপেক্ষতা ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় পাওয়া যেত। কিন্তু তারা তা করেনি। আর যারা এ বিষয়টিকে সামনে এনে গণমাধ্যমের চরিত্রকে বলিষ্ঠভাবে দেখানোর চেষ্টা করেছে তারা যে কতটা একা সেটা বলে বোঝানো যায় না।

এমনও বলা যায়, কেউ কেউ হয়তো কিছুই লেখেনি বা জেগে ঘুমিয়েছে। কিন্তু কেউ কেউ মুনিয়া সম্বন্ধে যেসব কথা লিখেছেন সেগুলো‌ একটা দৈনিক পত্রিকা কোনোভাবে লিখতে পারে না। কারণ লাঠিয়ালের মতো কাজ করা সাংবাদিকতার মধ্যে পড়ে না। আর এসব কর্মকাণ্ড জনগণকে হতাশ করেছে।

এদেশের অধিকাংশ সংবাদমাধ্যম বা মিডিয়া বিভিন্ন সংবাদের বেলায় যে ভূমিকা রেখেছে সেটা গণ্যমাধ্যম চরিত্রে পড়ে বলে মনে হয় না। এক ধরনের মিডিয়ায় দেশ ভরে যাচ্ছে যারা জণগণের কাছে সংবাদ পরিবেশনের ব্রত বা দায়বদ্ধতা নিয়ে কাজ করছে না। এসব পত্রিকায় প্রাধান্য পায় নিজেদের অপকর্ম ঢাকা, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে আক্রমণ পাল্টা আক্রমণ করা। সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক ঘটনায় এ ধরনের চরিত্রের প্রাধান্য লক্ষ্য করা গিয়েছে। এসব ঘটনা এদেশের মানুষ একের পর এক মানুষ দেখেই চলেছে।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, এদেশের সংবাদমাধ্যম বা মিডিয়াগুলোতো জণগণের কাছে সংবাদ পরিবেশনের ব্রত নিয়ে মিডিয়া খুলে নাই। এরা মিডিয়া খুলেছে সেলফ-সেন্সরশিপের জন্য, নিজেদের অপরাধ, অপকর্ম ঢাকতে, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে, আক্রমণ পাল্টা আক্রমণ করতে। একসময় শিল্পপতি, জমিদাররা নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখতে বিদেশি কুকুর, সন্ত্রাসী পালতো। আর এখন পালে মিডিয়া।

সাম্প্রতিক সময়ে এসব ঘটনা এদেশের মানুষ দেখেই চলছে। আর এ জন্য এদেশের মানুষের গণমাধ্যমের প্রতি আস্থাহীনতা দিনদিন বেড়েই চলছে। সাম্প্রতিক সময়ে মুনিয়া মৃত্যুর ঘটনায় এদেশের গণমাধ্যমের টাকা ও ক্ষমতার কাছে নিজেদের নীতি ও নৈতিকতার বলি দেওয়ার ঘটনা এদেশের মানুষকে হতাশ করেছে। যা এদেশের গণমাধ্যমের জন্য অশনিসংকেত। আর এভাবে চলতে থাকলে খুব অল্প সময়ের মাঝেই এদেশের মানুষের গণমাধ্যমের প্রতি আস্থা পুরোপুরি উঠে যাবে। গণমাধ্যম শিল্পের করুণ পরিণতি হবে।

গণমাধ্যম হলো একটা জাতির ফাউন্ডেশন। আর এ ফাউন্ডেশনকে মজবুত রাখতে প্রয়োজন এর নিরপেক্ষতা, সত্য প্রকাশের স্বাধীনতা। সাংবাদিকতা একটি মহান পেশা। আর এ মহান পেশা তখনই মহৎ হয়ে উঠবে যখন একজন সাংবাদিকের হলুদ সাংবাদিকতা পরিহার করে সত্য বলার, সঠিক চিত্র তুলে ধরার ক্ষমতা থাকবে। গণমাধ্যম ও সাংবাদিকের মূল বৈশিষ্ট্য হলো নীতি ও নৈতিকতা। গণমাধ্যম ও সাংবাদিককে তার নীতি ও নৈতিকতার প্রশ্নে সবসময় অটল থাকতে হবে।

আমরা আশা করি, গণমাধ্যমগুলো সংবাদ ও সাংবাদিকতার সকল নিয়মনীতি মেনে দল-মত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবধরনের ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থের উর্ধ্বে থেকে ব্যক্তি,সমাজ, রাষ্ট্রের সঠিক ও সত্য চিত্র তুলে ধরে গণমাধ্যমের প্রকৃত উদ্দেশ্য পূরণে সফল হবে এবং তাদের সে স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে সাংবাদিকদের সার্বিক নিরাপত্তা।

এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, গণমাধ্যম একটি রাষ্ট্রের শান্তি প্রতিষ্ঠা, ন্যায় বিচার, টেকসই উন্নয়ন ও মানবাধিকার রক্ষার এক অবিচ্ছেদ্য সহায়ক অংশীদার। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, নিরপেক্ষতা ও বস্তুনিষ্ঠত সংবাদ পরিবেশন ব্যতীত একটি সমাজ বা রাষ্ট্রের সুষম উন্নয়ন কখনোই সম্ভব নয়। তাই গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, নিরপেক্ষতা ও বস্তুনিষ্ঠতা নিশ্চিতকরণে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। সোচ্চার হতে হবে হলুদ সাংবাদিকতা ও দালাল মিডিয়ার বিরুদ্ধে। গণমাধ্যম হোক দালাল, চাটুকার, দাসসুলভ, লোভী ও মেরুদন্ডহীন সম্পাদক মুক্ত—এটাই প্রত্যাশা‌।

লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট

প্রিয় পাঠক, লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই ঠিকানায় -
sarabangla.muktomot@gmail.com

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব, এর সাথে সারাবাংলার সম্পাদকীয় নীতিমালা সম্পর্কিত নয়। সারাবাংলা ডটনেট সকল মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে মুক্তমতে প্রকাশিত লেখার দায় সারাবাংলার নয়।

সারাবাংলা/এজেডএস

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন