বিজ্ঞাপন

ব্যবসায়ীদের বিশ্বাস করা ভুল হয়েছে— ব্যর্থতা স্বীকার টিপু মুনশির

May 9, 2022 | 2:06 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ইদের এক সপ্তাহ আগে থেকে বাজারে ভোজ্যতেলের সংকট প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, ব্যবসায়ীদের বিশ্বাস করা আমার ভুল হয়েছে। এটি আমার ব্যর্থতা। আমরা ব্যবসায়ীদের বিশ্বাস করেছিলাম। কিন্তু তারা তাদের কথা রাখেনি। বিশেষ করে, বড় ব্যবসায়ীরা তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখলেও মাঝপথে মৌলভীবাজারের ব্যবসায়ীরা (ডিলার ) ও খুচরা বিক্রেতারা তেল নিয়ে কারসাজি করেছে। আর এ কারণে ঈদের ১০ দিন আগে থেকে বাজারে ভোজ্যতেলের সংকট দেখা দেয়। আমরা তাদের খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (৯ মে) দুপুরে সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ভোজ্যতেলের বাজার ব্যবস্থাপনা নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু ‍মুনশি এসব কথা বলেন।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘রমজান মাসে ব্যবসায়ীদের অনুরোধ করেছিলাম দাম সহনীয় পর্যায় রাখতে। কিন্তু ডিলার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা আমার অনুরোধ রাখেনি। তাদের অনুরোধ করা আমার বড় ভুল হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের ব্যর্থতা ঠিক, কারণ বলেছিলাম রমজানকে সামনে রেখে দাম বাড়াবেন না। কিন্তু তারা ইদের ১০ দিন সেই কথা রাখেননি। আমাদের সব অর্গানাইজেশনকে বলেছি, যে দাম নির্ধারিত আছে সেটি যাতে ঠিক রাখা হয়। কিন্তু দাম বাড়বে ভেবে ডিলার ও খুচরা বিক্রেতারা তেল লুকিয়ে রাখে।’

বিজ্ঞাপন

ইদের আগে পরে বাজারে তেল না পাওয়া প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ফেব্রুয়ারির ৬ তারিখ দাম ঠিক করেছিলাম। চিটাগাং পোর্টে যে প্রাইসে মাল রিলিজ হয় সে অনুযায়ী দাম নির্ধারণ হয়। ২০ মার্চ আমরা অনুরোধ করায় সরকার ১০ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করে। তখন ৮ টাকা দাম কমানো হয়। তখন আমরা রমজান মাসে তেলের দাম না বাড়াতে অনুরোধ করেছিলাম, ব্যবসায়ীরা একমত হয়েছিল। তাদের বলা হয়েছিল রমজানের পর আমরা আবার বসব। যারা বড় প্রতিষ্ঠান তাদের কাছ থেকে সাপ্তাহিক তথ্য নিয়েছি। কিন্তু মাঝপথে ঝামেলা হয়েছে। বিশেষ করে রিটেইলার ও ডিলার, তারা কোথাও কোথায় তেল স্টক করে কিংকা সরবরাহ কমিয়ে দিয়ে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছে। কারণ তারা জানত রমজানের পর তেলের দাম বাড়বে। এই কারণে তারা সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। তবে লাখ লাখ রিটেইলার হওয়ার কারণে তাদের চিহ্নিত করা কঠিন। তারপরেও আমাদের অভিযান চলছে। বেশ কিছু জায়গায় মজুত তেল পাওয়া গেছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কোনো নমুনা পাইনি। রিটেইলার, ডিলাররা সুযোগটা নিয়েছে। আমরা চেষ্টা করব রিটেইলার থেকে ডিলার পর্যায়ে কেউ যেন সুযোগ নিতে না পারে। লাখ লাখ ডিলারের সিন্ডিকেট করার সুযোগ নেই।’

তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়েছে। ফলে আমাদের বাধ্য হয়ে তেলের দাম বাড়াতে হচ্ছে। কারণ ব্যবসায়ীরা লাভ করার জন্য ব্যবসা করে। তবে সেই লাভটা যেন সহনীয় থাকে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, শীলঙ্কা, পাকিস্তানে তেলের দাম আমাদের চেয়ে এখনও বেশি। তবে নেপালে তেলের দাম আমাদের সমান।’

সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে ৪০ টাকা বাড়িয়ে ১৮০ টাকা করেছেন মিল মালিকরা। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেই এই মূল্য বাড়ানো হয়েছে বলে দাবি তাদের।

খোলা সয়াবিন তেল এতদিন ১৪০ টাকা ছিল, নতুন দর অনুযায়ী প্রতি লিটার ১৮০ টাকা হয়েছে৷ বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৬০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৯৮ টাকা করা হয়েছে। ৫ লিটারের বোতলের দাম হবে ৯৮৫ টাকা।

আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে মিল মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে ভোজ্যতেলের দাম ঘোষণা করা হলেও এবার মিল মালিকরা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পরামর্শ করে নিজেরাই মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছেন। ইদের পর বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের এক বার্তায় ভোজ্যতেলের নতুন দর ঘোষণা করে।

বিজ্ঞাপন

নতুন মূল্য তালিকা অনুযায়ী, পরিশোধিত পাম সুপার তেল প্রতি লিটারের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য হবে ১৭২ টাকা, যা এতদিন ছিল ১৩০ টাকা। সেই হিসাবে পাম তেলের দাম বেড়েছে ২৪ শতাংশ। আর সয়াবিনের দাম খুচরায় বেড়েছে ২৮ শতাংশ, বোতলজাতের ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ।

করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পরপর সয়াবিনসহ ভোজ্যতেলের দর বিশ্ববাজারে চড়তে থাকায় দেশের ব্যবসায়ীরাও দাম বাড়ানোর পক্ষে বলছিলেন।

এর মধ্যে রোজার ইদের আগে হঠাৎ করেই খুচরা বাজার থেকে সয়াবিন তেল উধাও হয়ে যায়, যদিও আমদানিতে কোনো সংকট ছিল না।

সর্বশেষ গত ফেব্রুয়ারিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল। বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৬৭ টাকা ও খোলা সয়াবিন তেল ১৪৩ টাকা করে নির্ধারণ করা হয়েছিল।

এরপর আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম বৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে মিল মালিকরা দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে মন্ত্রণালয়ে গেলেও সরকার সায় দেয়নি। গত মার্চের মাঝামাঝিতে তেলের আমদানি, পরিশোধন ও বিক্রয় পর্যায়ে ভ্যাট প্রত্যাহারের পর ইদের আগে লিটারে ৭ টাকা করে দাম কমানো হয়েছিল।

এই পরিস্থিতিতে এপ্রিল ও মে মাসে ধীরে ধীরে বাজারে সরবরাহ কমিয়ে দিতে থাকেন মিল মালিকরা। দাম বৃদ্ধির আশায় ডিলার ও পাইকারি বিক্রেতারাও তেলের মজুত শুরু করেন৷ এসব ঘটনা ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতরের অভিযানে ধরা পড়ে।

গতকালও দেশের বিভিন্ন স্থানে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর অভিযান চালিয়ে অন্তত ৫ হাজার লিটার সয়াবিন তেল উদ্ধার করে। কোথাও কোথাও ব্যবসায়ীদের জরিমানাও করা হয়েছে।

সারাবাংলা/জিএস/একে

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন