বিজ্ঞাপন

মালয়েশিয়ায় জনশক্তিতে রফতানিতে ফের সিন্ডিকেটের পাঁয়তারা: বায়রা

May 11, 2022 | 4:15 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানি করতে ফের শক্তিশালী একটি সিন্ডিকেট উঠে-পড়ে লেগেছে বলে দাবি করেছে সম্মিলিত সমন্বয় ফ্রন্ট- বায়রার নেতারা। তাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে এই সিন্ডিকেট তাদের নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানির পাঁয়তারা চালাচ্ছে। বায়রা নেতারা তাদের এই ষড়যন্ত্র মানবে না। এটি হলে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে শ্রমজীবী সাধারণ মানুষ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সাধারণ শ্রমিকদের তখন সরকার নির্ধারিত ফি’র চেয়ে অনেক বেশি টাকা দিয়ে মালয়েশিয়ায় যেতে হবে।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (১১ মে) বেলা ১১টার দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলরুমে এক সংবাদ সম্মেলনে বায়রার সভাপতি ড. মোহাম্মদ ফারুক এসব তথ্য তুলে ধরেন। এ সময় সংগঠনের সিনিয়র সহসভাপতি রিয়াজ উল ইসলাম ও মহাসচিব মোস্তফা মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে ড. ফারুক বলেন, ‘২০১৬, ১৭ ও ১৮ সালে ১০ জন সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানি করা হয়। ওই সময় শ্রমিক রফতানি হওয়ার কথা ছিল প্রায় ১৫ লাখ। কিন্তু যেতে পেরেছে মাত্র দুই লাখ ৭৪ হাজার ৫০০ শ্রমিক। ১২ লাখ শ্রমিক চাকরির সুযোগ হারিয়েছে। এর প্রধান কারণ হলো প্রত্যেক শ্রমিকের কাছ থেকে ৪ লাখ টাকা করে নিয়েছে ওই সিন্ডিকেট। যা অনেকেই দিতে না পেরে ভিসা নিতে পারেননি। অথচ সরকার নির্ধারিত ফি ছিল এক লাখ ৬০ হাজার টাকা। আবার যে ১২ লাখ শ্রমিক যেতে পারেননি তাদের মেডিকেল রিপোর্টের নামে পাঁচ হাজার ২০০ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে।’

২০১৮ সালের পর মালয়েশিয়ায় সরকার পরিবর্তন হলে ওই সিন্ডিকেটকে অবৈধ ঘোষণা করে এবং জনশক্তি রফতানি বন্ধ হয়ে যায়।

বিজ্ঞাপন

ড. ফারুক বলেন, ‘তিন বছর পর মালয়শিয়ার শ্রম বাজার খোলার জন্য ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর দুই দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি সই হয়। চুক্তি সইয়ে পরও জনশক্তি রফতানি এখনো শুরু করা যায়নি। এর মূল কারণ হচ্ছে- সেই সিন্ডিকেট ফের নিজেদের মাধ্যমে জনশক্তি রফতানি করতে চাচ্ছে। ২০১৬ সালে সিন্ডিকেট সংখ্যা ছিল ১০ জন। তবে এবার অন্তত ২৫ জন পাঁয়তারা শুরু করেছে বলে জানা গেছে। এই ২৫ সিন্ডিকেটের ষড়যন্ত্রের কারণে জনশক্তি রফতানি বন্ধ রয়েছে। সিন্ডিকেটের সদস্যরা শত শত কোটি টাকা অবৈধভাবে লেনদেন করছে, যার বিপরীতে হাজার হাজার কোটি টাকা আয় করবে।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে দেশে ১৭০০ থেকে ১৮০০ বৈধ এজেন্সি রয়েছে। যারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে জনশক্তি রফতানি করে আসছে। কেন এবং কি কারণে শত শত এজেন্সিকে বাদ দিয়ে মাত্র ২৫ এজেন্সিকে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক রফতানির জন্য অনুমতি দিতে হবে?’

তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে মালয়েশিয়ায় প্রচুর পরিমাণে বিদেশি শ্রমিকের প্রয়োজন। আগামী তিন বছরে তাদের প্রয়োজন অন্তত ১৫ থেকে ২০ লাখ লোকের। ২৫ জনের সিন্ডিকেট এবারও পাঁয়তারা করছে। তাদের কাছ থেকে এক লাখ ৬০ হাজারের পরিবর্তে দুই লাখ টাকা বেশি করে নিতে পারলে আরও অন্তত ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা বেশি আদায় করতে পারবে। এই টাকা ভিসা ক্রয় বাবদ পাচার হয়ে যাবে। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ভিসা কিনলে প্রতিটির দাম পড়বে দুই লাখ টাকা। আর সমঝোতা চুক্তির মাধ্যমে গেলে তা জিরো কস্ট পড়বে। তখন রিক্রুটিং এজেন্সি টাকা নিলেও তা সামান্য পরিমাণে নেবে এবং তা পাচার হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’

বিজ্ঞাপন

ড. ফারুক বলেন, ‘আমরা চাই মুক্ত বাজার অর্থনীতির মতো সব রিক্রুটিং এজেন্সি মালয়েশিয়ায় শ্রমিক রফতানির সুযোগ পাক। ইতোমধ্যে ওই ২৫ সিন্ডিকেট অবৈধভাবে মেডিকেল টেস্টের জন্য প্রতিষ্ঠানের নাম ঘোষণা করেছে। অথচ শ্রমিক রফতানি নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমেদ খুবই শক্ত ভূমিকায় রয়েছেন। তিনি সিন্ডিকেট চান বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রীকেও নানাভাবে বোঝানোর চেষ্টা করছেন ওই সিন্ডিকেটের সদস্যরা। এজন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছেও স্মারকলিপি দিয়েছি। যাতে সিন্ডিকেট বাদ দিয়ে শ্রমবাজার খুলে দেওয়া হয়। শ্রমিকরা যেখানে কম পাবেন সেই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিদেশে যাবেন- এটাই নিয়ম। কিন্তু সিন্ডিকেটের মাধ্যমে গেলে জিম্মি অবস্থায় যেতে হয় এবং অন্তত চার লাখ টাকা গুনতে হয়। আবার অনেকে যেতে পারবেন না।’

এক প্রশ্নের জবাবে ড. মোহাম্মদ ফারুক বলেন, ‘আমরা এরইমধ্যে প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছি। এমনকি মালয়শিয়ার প্রধানমন্ত্রীকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে।’

সংগঠনের মহাসচিব মোস্তফা মাহমুদ বলেন, ‘আমরা চাই সিন্ডিকেট মুক্ত শ্রমবাজার। তাতে দেশের লাভ, শ্রমিকের লাভ। কম টাকা হলে শ্রমিক বেশি যেতে পারবে। এতে রেমিট্যান্স বাড়বে। অন্যদিকে, সিন্ডিকেটের সদস্যরা শুধু নিজের স্বার্থটাই দেখে। শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষায় কাজ করেন না। আমরা চাই, শুধুমাত্র যে শ্রমিকের ভিসা হবে তিনিই কেবল মেডিকেল ফি বহন করবেন। যার ভিসা হবে না তার মেডিকেল ফি নেওয়ার দরকার নেই।’

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/ইউজে/পিটিএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন