বিজ্ঞাপন

‘এসিডে’ ঝলসে গেছে সূর্যের হাসি!

May 11, 2022 | 8:47 pm

সৈয়দ সোহেল রানা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: তিন মাসের শিশু সূর্য কর্মকার। তার বর্তমান অবস্থা ঘিরেই নানা প্রশ্ন। কোন পাষণ্ড এমন কাজ করতে পারে? কোনো শত্রুও এমন নৃশংস কাজ করতে পারে না। কিন্তু ঘটনা সত্য। শিশু সূর্যকে কে বা কারা কেমিক্যালে ঝলসে দিয়েছে। এই ঘটনা ঘটেছে বগুড়া জেলার গাবতলী থানার তেলিহাতা গ্রামে।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (১১ মে) দুপুরে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও জাতীয় প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগে গিয়ে দেখা যায় এক মর্মান্তিক দৃশ্য। তিন মাসের সন্তান সূর্য তার মায়ের কোলে বসে চিৎকার করে কাঁদছে। শিশু ছেলের কান্না দেখে মাও কাঁদছেন। এমনকি অন্য বেডের রোগীর স্বজনরাও যেন কান্না ধরে রাখতে পারছেন না।

দূরে দাড়িয়ে এই দৃশ্য দেখছিলেন শিশুটির বাবা সাগর কর্মকার। চোখে মুখে তার আতঙ্কের ছাপ। সাগরের সঙ্গে কথা বলতে গেলে প্রথমে ইতস্তত বোধ করেন। পরে আস্তে আস্তে সারাবাংলার এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমার ছেলের কি দোষ? কেন আমার শিশু ছেলেকে এসিড মারল! আমার এবং আমাদের পরিবারেরতো কোনো শত্রু নাই। কেউ যদি শত্রুতা করেও এমন কাজ করে থাকে- তাহলে আমাকে মারতো। আমার নাবালক সন্তানকে কেন মারল?’

সাগর বলেন, ‘আমি সন্তানের দিকে তাকতে পারি না। ওর কষ্টে বুকটা ফেটে যায়। আপনারা আমাদের এলাকায় গিয়ে দেখে আসুন, যাচাই করে আসুন, কারও সঙ্গে আমাদের শত্রুতার কোনো খোঁজ পাবেন না। গ্রামে বাড়ির সামনে আমাদের কর্মকারের দোকান।’

বিজ্ঞাপন

 

সাগর আরও বলেন, ‘দেড় বছর আগে লালমনিরহাটের বীনা রানীকে বিয়ে করি আমি। সেখানে খোঁজ নিয়ে জেনেছি, আমার স্ত্রীরও কোনো শত্রু ছিল না। গাবতলী থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছি। এখন পুলিশ খুঁজে বের করবে কারা আমার শিশুকে এসিড মেরেছে।’

বিজ্ঞাপন

সেদিন কি ঘটেছিল? এমন প্রশ্নের জবাবে শিশুটির মা বীনা রানী সারাবাংলাকে বলেন, ‘সূর্যের দাদী দিপালী রানী (৪২) ও সূর্যকে নিয়ে রাস্তার পাশের কক্ষে ঘুমিয়েছিলাম। রাত আনুমানিক ৩টার দিকে জানালা খুলে কে বা কারা কি যেন ছুঁড়ে মারে। আমার আর শাশুরির শরীরের কাপড় ছিঁড়ে যায়। এ সময় সূর্য চিৎকার করে ওঠে। আলো জ্বালিয়ে দেখি, ওর চোখ, মুখ এসিডে ঝলসে গেছে। তখন পাশের কক্ষ থেকে ছুটে আসে সূর্যের বাবা সাগর ও চাচা আনন্দ।’

বীনা রানী বলেন, ‘দ্রুত সূর্যের চাচা বাইরে দেখতে যায়। কিন্তু সেখানে কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এমনকি কোনো মোটরসাইকেলের আওয়াজও পাওয়া যায়নি। এই কাজ করে এত দ্রুত কেউ পালাতে পারে না। আমাদের বাড়ির আশেপাশের কেউ এই কাজ করেছে।’

সূর্যের মা জানান, রাতেই দ্রুত সূর্যকে নিয়ে বগুড়া সদর হাসপাতালে যান। সেখান থেকে ৬ মে ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে এসে ভর্তি হন।

বীনা রানী আরও বলেন, ‘সেদিন রাতে আমাদের চিৎকারে সর্বপ্রথম সাগরের এক দুঃসম্পর্কের আত্মীয় অজয় আমাদের বাড়িতে আসে। তার বাড়ি আমাদের বাড়ি থেকে একটু দূরে। তার এত দ্রুত আমাদের বাড়িতে আসার কথা না। কিন্তু তার সঙ্গেতো আমাদের কোনো শত্রুতা নেই। তাই সন্দেহ করতে পারছি না।’

বিজ্ঞাপন

বার্ন ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. এসএম আইউব হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত ৬ মে কেমিক্যাল বার্নে দগ্ধ হয়ে এক শিশু তার মা ও দাদী ইনস্টিটিউটে এসেছে। শিশুটির মুখমণ্ডল ও চোখ আক্রান্ত হয়েছে। তাকে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। মা ও দাদীর হাত সামান্য ঝলসে গেছে। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।’

ডা. আইউব বলেন, ‘শিশুটির অবস্থা আগের থেকে একটু উন্নতি হয়েছে। স্থায়ীভাবে সুস্থ হতে অনেক সময়ের ব্যাপার। দুই চোখই আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ডান চোখে বেশি সমস্যা। শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেলের চক্ষু বিভাগে পাঠানো হয়েছিল। সেখানকার চিকিৎসকরা শিশুটিকে চিকিৎসা দিচ্ছে। তবে সেরে উঠতে সময় লাগবে। শিশুটার অবস্থা দেখে খুবই খারাপ লাগছে। আমি নিজেই আসামিদের শাস্তি দাবি করছি।’

ডা.আইউব আরও বলেন, ‘গত কয়েক বছরে এসিড সন্ত্রাস বন্ধ হয়েছিল। আবারও বেড়ে গেছে। এ মাসে আরও একটি এসিড সন্ত্রাসের ঘটনার ঘটেছে।’

বার্ন ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘বগুড়া থেকে আসা এসিড সন্ত্রাসের শিকার শিশুটাকে দেখেছি। মাত্র তিন মাস বয়স শিশুটির। শিশুটির ঘটনা খুবই মর্মান্তিক। ৮৬ সাল থেকে বার্নের সঙ্গে জড়িত আছি। এত ছোট শিশুর এসিড সন্ত্রাসের শিকার এই প্রথম দেখলাম। মাঝখালে কমলেও আবারও বেড়ে গেছে এসিড সন্ত্রাস। এসিড সন্ত্রাসের শাস্তির বিধান খুবই কঠিন। তবে বাস্তবায়িত হলে অবশ্যই কমে যাবে।’

ডা. সামন্ত বলেন, ‘শিশুর ডান চোখ নিয়ে খুবই সন্দিহান। ছোট শিশুর চামড়া খুবই পাতলা। চোখের পাপড়িও ঝলসে গেছে। কিছুদিন পর বুঝা যাবে। তবে মুখের দাগগুলো পুরোপুরি সাড়ানো সম্ভব না। ওকে সাড়া জীবন এই দাগ বয়ে বেড়াতে হবে।’

সারাবাংলা/এসএসআর/পিটিএম

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন