বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রামে ৩ ‘তান্ত্রিকের’ কাছে ৫ কোটি টাকার কোবরার বিষ

May 14, 2022 | 4:33 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে কথিত তিন ‘তান্ত্রিক কবিরাজের’ হেফাজত থেকে দুই পাউন্ড কোবরা সাপের বিষ উদ্ধার করেছে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। ফ্রান্স থেকে অবৈধ পথে আসা এসব সাপের বিষের আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য প্রায় পাঁচ কোটি টাকা। যা উচ্চমাত্রার মাদক হিসেবে অভিজাত মহলে ব্যবহৃত হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।

বিজ্ঞাপন

শুক্রবার (১৪ মে) রাতে নগরীর ডবলমুরিং থানার ডিটি রোডে একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে সাপের বিষসহ তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার তিন জন হলেন- মো. ইসমাইল প্রকাশ মগা বৈদ্য (৩৫), জয়নাল আবেদিন (৫৫) ও রূপন চাকমা শ্যামল (৪২)।

অভিযানে অংশ নেয়া নগর গোয়েন্দা পুলিশের উত্তর জোনের পরিদর্শক আরিফুর রহমান সারাবাংলাকে জানান, গ্রেফতার তিন জন নিজেদের তান্ত্রিক কবিরাজ ও মগা বৈদ্য হিসেবে পরিচয় দেয়। তারা চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে সাপের খেলা দেখানো, বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা, জ্বিন হাজির, তাবিজ-কবজ বিক্রির নামে প্রতারণা করে থাকে।

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বাসায় তল্লাশি করে তাদের হেফাজত থেকে একটি লাল রঙের বিশেষ জারে রাখা কোবরা সাপের তরল বিষ এবং বিভিন্ন প্রজাতির ১০ প্রাণীর রক্ত উদ্ধার করা হয়েছে। জারটির মোট ওজন এক কেজি ৩৫০ গ্রাম। এর ভেতরে ২ পাউন্ড সাপের বিষ আছে। জারটি স্বাভাবিক নিয়মে খোলা যায় না। বিশেষ পিস্তল দিয়ে জারের মুখে গুলি করে সেটি খুলতে হয় বলে জানান গোয়েন্দা কর্মকর্তা আরিফুর রহমান।

বিজ্ঞাপন

জারের ওপরে লেখা আছে- ‘স্নেক পয়জন, মেড ইন ফ্রান্স’। ফ্রান্সের বিখ্যাত রেড ড্রাগন কোম্পানির উৎপাদিতে আমদানি নিষিদ্ধ এসব বিষ অবৈধপথে বাংলাদেশে আনার সঙ্গে আন্তর্জাতিক চোরাচালান চক্র জড়িত বলে জানিয়েছেন নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (উত্তর) মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম।

‘সংঘবদ্ধ একটি চোরাচালানি চক্র সাপের বিষ বাংলাদেশে এনেছে। আমরা যাদের গ্রেফতার করেছি তারা এসব বিষের হেফাজতকারী মাত্র। এই তিনজনের সঙ্গে আরও দুজন আছে। তাদের ওপরে আছে চক্রের সদস্যরা। আমরা কারা তাদের সাপের বিষগুলো দিয়েছে সেটা তদন্ত করে দেখছি’— বলেন জহিরুল ইসলাম।

বিজ্ঞাপন

জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ডিবি পরিদর্শক আরিফুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা যতটুকু তথ্য পেয়েছি, বৈধভাবে এসব সাপের বিষ বিভিন্ন ওষুধ তৈরিতে ব্যবহার হয়। তবে বাংলাদেশে এসব সাপের বিষ উচ্চমাত্রার মাদক হিসেবে ব্যবহার হয়। যাদের সাধারণ মাদকে শরীরে কোনো প্রতিক্রিয়া হয় না, তারাই সাপের তরল বিষ গ্রহণ করে। দাম বেশি হওয়ায় ধনাঢ্য লোকজনই শুধু সাপের বিষ গ্রহণ করে। আন্তর্জাতিক একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এসব সাপের বিষ বাংলাদেশে এসেছে। তাদের একটা চেইন আছে। তিন জন তান্ত্রিক শুধুমাত্র পাচারের বা সরবরাহের বাহক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল বলে আমরা জানতে পেরেছি।’

জব্দ সাপের বিষ পরীক্ষার জন্য সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হচ্ছে। আমদানি নিষিদ্ধ সাপের বিষ উদ্ধারের ঘটনায় ডবলমুরিং থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানান নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম।

এর আগে, ২০২০ সালের ২৫ ডিসেম্বর ঢাকার দক্ষিণখান থেকে প্রায় ৭৫ কোটি টাকার সাপের বিষসহ ছয় জনকে গ্রেফতার করেছিল র‌্যাব। ২০১৬ সালের ৭ মার্চ ঢাকার লালবাগ থেকে ৪৫ কোটি টাকার সাপের বিষসহ তিন জনকে গ্রেফতার করেছিল র‌্যাব। একই সংস্থা ২০১৯ সালের জুনেও ঢাকার লালবাগ থেকে প্রায় ৫০ কোটি টাকার সাপের বিষসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছিল।

এছাড়া খুলনা, জয়পুরহাটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গত কয়েকবছরে সাপের বিষ উদ্ধার হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন