বিজ্ঞাপন

জরাজীর্ণ আশ্রয়ন প্রকল্প, চলে গেছেন অর্ধেক বাসিন্দা

May 17, 2022 | 9:00 am

মনিরুল ইসলাম দুলু, লোকাল করেসপন্ডেন্ট

মোংলা (বাগেরহাট): সংস্কারের অভাবে জরাজীর্ণ রামপাল উপজলার একটি আশ্রয়ন প্রকল্পের অর্ধেক বাসিন্দা ঘর ছেড়ে চলে গেছেন। ভেঙে পড়েছে সেখানের স্যানিটেশন ব্যবস্থাও। আগামী বর্ষা মৌসুমের আগে সংস্কার করা না হলে, যারা এখনও বসবাস করছেন তাদেরও আশ্রয়ন ছেড়ে চলে যেতে হবে বলে আশংকা করছেন কয়েকজন বাসিন্দা।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার উপজেলার বাঁশতলী ইউনিয়নের কালিগঞ্জ বাজারের পশ্চিম পাশে সরকারি খাস জমিতে ভূমিহীনদের পুণর্বাসনের জন্য ২০০২ সালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রানালয়ের অধীনে একটি আশ্রয়ন প্রকল্প নির্মাণ করা হয়। এ প্রকল্পে ১০ কক্ষবিশিষ্ট ৮টি ঘর নির্মাণ করে ৮০টি ভূমিহীন পরিবারকে পুণর্বাসন করা হয়েছিল।

আশ্রয়নের বাসিন্দারা জানান, নির্মাণের পর এখন পর্যন্ত ব্যারাকগুলাতে কোনো সংস্কার করা হয়নি। এমনকি ঘর বুঝে পাওয়ার সময় মেঝেতে কোনো মাটি ছিল না। ছিল না রান্না ঘরও। ঘর পাওয়ার পর তারা নিজেদের উদ্যগে মেঝের মাটি ভরাটের পাশাপাশি রান্নাঘর নির্মাণ করেন।

বিজ্ঞাপন

আশ্রয়নের ৮টি ব্যারাকের সব কয়টি এখন বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বসবাস করতে না পেরে ৩৯টি পরিবার প্রকল্প ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। এদের মধ্যে ৭-৮টি পরিবার কুমারখালি নদীর চরে সরকারি খাস জমিত বসবাস করছেন। বেশিরভাগ ব্যারাকের টিনের চালা ফুটো হয়ে গেছে। মরিচা ধরে টিনের বেড়া ভেঙে গেছে। জোড়া তালি দিয়ে কোনরকমে রাত কাটাচ্ছেন তারা।

বাসিন্দারা জানান, বৃষ্টি হলেই পানিতে ঘরের ভেতর সয়লাব হয়ে যায়। রাতে বৃষ্টি হলে তাদের নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়। প্রায় সব ঘরের বাসিন্দাদের টিনের চালে পলিথিন দিয়ে রাখতে দেখা গেছে। ভারি বৃষ্টি হলে পলিথিনেও ঠেকানো যায় না। বেশির ভাগ রান্না ঘর স্যাঁতসেতে। বৃষ্টি হলে রান্না বন্ধ রাখতে হয়।

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে, স্যানিটেশন ব্যবস্থাও একেবারই নোংরা, অস্বাস্থ্যকর। ব্যারাকের অবকাঠামোগত অবস্থা নড়বড়ে হওয়ায় আকাশে মেঘ দেখলেই বাসিন্দারা ভয়ে থাকেন।

জরাজীর্ণ আশ্রয়ন প্রকল্প, চলে গেছেন অর্ধেক বাসিন্দা

বিজ্ঞাপন

বেশ কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, ‘সামান্য বাতাস হলেই বেশির ভাগ ঘরের টিন উড়ে যেতে পারে। ঝড়ের খবর পেলে আমরা ভয়ের মধ্যে থাকি। বসবাসের অনুপযোগী হওয়ায় অর্ধেক পরিবার আশ্রয়ন ছেড়ে চলে গেছে। এখন অর্ধেক ঘর পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকায় ভূতুড়ে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।’

শত সমস্যা মাথায় নিয়ে পড়ে থাকা বাসিন্দারা জানান, তাদের যাওয়ার জায়গা না থাকায় তারা এখানে পড়ে আছেন। এর আগে কয়েকবার আশ্রয়ন সংস্কারের আশ্বাস দেওয়া হলেও আজও কোনো সংস্কার করা হয়নি। ফলে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয় বাঁশতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান সোহল বলেন, ‘এই আশ্রয়নের দুরবস্থার কথা উপজেলা পরিষদের গত মাসিক সমন্বয় সভায় তুলে ধরেছি। আগামী বর্ষা মৌসুম শুরুর আগে সংস্কারের করা না হলে অবস্থা আরও খারাপ হবে। দুর্ভোগে পড়বেন বসবাসরতরা।’

উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা মো. মতিউর রহমান বলেন, ‘ওই আশ্রয়ন প্রকল্পসহ ক্ষতিগ্রস্ত সব আবাসন প্রকল্পের ঘর সংস্কারের জন্য আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠিয়েছি। সংস্কারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি প্রতিনিধি দল ইতিমধ্যে পেড়িখালীর সিকিরডাঙ্গা, গৌরম্ভাসহ ৩টি আবাসন প্রকল্প পরিদর্শন করেছেন এবং শিগগিরই আবাসনের বাসিন্দাদের ঘর পুনর্নির্মাণ করার আশ্বাস দিয়েছেন।’

প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আরও জানান, সরকারিভাবে বরাদ্দ পাওয়া গেলে সব আবাসন প্রকল্পের ঘর সংস্কার করা হবে।

সারাবাংলা/এমও

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন