বিজ্ঞাপন

আফগানিস্তানে গোপনে চলছে মেয়েদের স্কুল

May 18, 2022 | 11:11 pm

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

‘সাহসী হও। সাহসী হলে তোমাকে কেউ আটকাতে পারবে না,’— আফগানিস্তানের মেয়েদের উদ্দেশে বলছিল এক নারী শিক্ষার্থী, যে কি না তালেবান সরকারের নজর এড়িয়ে গোপনে চালু থাকা একটি স্কুলে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছে। ১৫ বছরের এই মেয়ের মতো আফগানিস্তানের অনেক মেয়েরই পড়ালেখা করার ইচ্ছা পূরণ করতে হচ্ছে এরকম গোপন স্কুলের আশ্রয় নিয়ে।

বিজ্ঞাপন

আফগানিস্তানে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের পর নারীদের ওপর বিধিনিষেধ শিথিল রাখার এক ধরনের ইঙ্গিত দিয়েছিল তালেবান সরকার। কিন্তু সেই ইঙ্গিত আর পূর্ণতা পায়নি। মেয়েদের ওপর নানা ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করতে সময় নেয়নি তালেবান সরকার। এরই অংশ হিসেবে খড়গ নেমে আসে নারী শিক্ষার ওপর। হাতেগোনা কয়েকটি বাদ দিয়ে অধিকাংশ প্রদেশেই মাধ্যমিক পর্যায়ের গার্লস স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

এ পরিস্থিতি মুখ বুঁজে সহ্য করতে রাজি নয় আফগান মেয়েরা। সে কারণেই আফগানিস্তানের বিভিন্ন শহরের আবাসিক এলাকায় বাসাবাড়ির আদলেই সবার অন্তরালে চালু রাখা হয়েছে স্কুল। প্রচণ্ড ঝুঁকি নিয়ে চলমান এসব ‘গোপন স্কুল’ই ভরসা হয়ে উঠেছে আফগান মেয়েদের।

এমনই একটি গোপন স্কুল পরিদর্শন করেছেন বিবিসির এক জন প্রতিনিধি। তিনি দেখতে পান, স্বাভাবিক স্কুলের মতোই এই গোপন স্কুলেও ক্লাসরুমে বসানো হয়েছে নীল-সাদা বেঞ্চ। সেখানে মেয়েরা পড়তে আসছে যথাসম্ভব গোপনীয়তা বজায় রেখেই।

বিজ্ঞাপন

ঝুঁকি নিয়ে চালানো এরকম একটি ‘গোপন স্কুলে’র এক জন শিক্ষক বলেন, আমরা জানি, আমরা নানা ধরনের হুমকির মধ্যে আছি। এটি নিয়ে আমরা চিন্তিতও। তাই আমরা যতটাসম্ভব গোপনে কাজগুলো করার চেষ্টা করছি। কোনো কারণে ধরা পড়ে গেলে যদি আমাকে আটক করে মারধোর করে, তাতেও আমার কোনো আক্ষেপ নেই। কারণ মেয়েদের শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর তার জন্য এই ঝুঁকি নেওয়াই যায়।

এদিকে, স্কুল না খোলার দুঃখ ভুলতে পারছে না আফগানিস্তানের মেয়েরা। কতটা কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে তাদের যেতে হচ্ছে, সে কথা বলতে গিয়ে চোখ ফেটে কান্নাও আসছে কারও কারও। এমনই এক গোপন স্কুলের ১৯ বছর এক নারী শিক্ষার্থী বিবিসিকে বলেন, ‘দুই মাস হয়ে গেলেও স্কুলগুলো খোলার নাম নেই। ভাবতেই আমার অনেক মন খারাপ হয়। কথাগুলো বলতে বলতেই দু’হাতে মুখ লুকিয়ে কেঁদে ফেলেন তিনি।

আফগানিস্তানজুড়ে মেয়েদের জন্য অবশ্য প্রাথমিক পর্যায় পর্যন্ত পড়ালেখা চালু আছে। এমনকি গ্রাম পর্যায়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করায় সেখানে ছাত্রীর সংখ্যাও বেড়েছে। তবে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের মেয়েরা কবে শ্রেণিকক্ষে ফিরতে পারবে বা আদৌ ফিরতে পারবে কি না, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।

বিজ্ঞাপন

তালেবান নেতারা বলছেন, মেয়েদের শ্রেণিকক্ষে ফেরানোর জন্য সবার আগে সঠিক ‘ইসলামিক পরিবেশ’ নিশ্চিত করতে হবে। ছেলে ও মেয়েদের স্কুল আলাদা হওয়ার পরও কীভাবে সেই পরিবেশ নিশ্চিত হবে, তা অবশ্য তারা পরিষ্কার করে বলা হয়নি তালেবানের পক্ষ থেকে।

তালেবান সরকার বারবারই বলছে, মেয়েদের স্কুল খুলে দেওয়া হবে। তবে তারা এটিও বলছে, মেয়েদের স্কুল তাদের জন্য একটি ‘স্পর্শকাতর বিষয়’। এর আগে, ১৯৯০ সালের দিকেও ক্ষমতায় ছিল তালেবান সরকার। ওই সময় নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে মেয়েদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ করেছিল দলটি।

মেয়েদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে যাওয়া বা না যাওয়া প্রসঙ্গে তালেবানদের নিজেদের মধ্যেই মতপার্থক্য রয়েছে। একদল নেতা মেয়েদের স্কুলে পাঠানোর বিপক্ষে। আরেকদল চান, মেয়েদের স্কুল খুলে দেওয়া হোক। এমনকি অনেক তালেবান নেতা তাদের মেয়েদের কাতার ও পাকিস্তানের স্কুলে পড়াচ্ছেন।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/আরএফ/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন