বিজ্ঞাপন

মাড়াইয়ের খরচ দ্বিগুণ, বোরোর বাম্পার ফলনেও কৃষকের কপালে ভাঁজ

May 19, 2022 | 9:08 am

শামীম কাদির, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

জয়পুরহাট: জেলায় ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। তবে চাহিদা অনুযায়ী পাওয়া যাচ্ছে না শ্রমিক। আর পাওয়া গেলেও মজুরি বেশ চড়া। প্রতি বিঘা জমিতে ধান কাটা-মাড়াইয়ে খরচ পড়ছে সাড়ে চার হাজার থেকে ছয় হাজার টাকা। অন্য সময় এর অর্ধেক দামেই ধান কাটা-মাড়াই হয়ে যেতো। ফলে কালবৈশাখী ঝড়-বৃষ্টির প্রভাবে পাকা ও আধা পাকা গাছ জমিতে হেলে পড়ায় ধান নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন জেলার কৃষকরা।

বিজ্ঞাপন

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বোরো ধান চাষে কৃষকের খরচ হয়েছে ১৩ থেকে ১৪ হাজার টাকা। সেখানে বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী তারা প্রতি বিঘায় উৎপাদিত ১৮ থেকে ২০ মন ধান বিক্রি করে পাচ্ছেন ভেজা ধান ১৬ হাজার টাকা আর শুকনা ধান ১৭ থেকে ১৮ হাজার টাকা। এর মধ্যে কয়েক মাসে দেওয়া শ্রম যোগ করলে কৃষকের আয়-ব্যয় সমান হবে। অন্যদিকে ধানের বর্তমান বাজার মূল্য বৃদ্ধি না হলে লোকসানের মুখে পড়বেন কৃষকরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, জেলায় চলতি বছরে রবি ফসলের মৌসুমে ৬৯ হাজার ৪৯০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। আর সরকারি লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৯ হাজার ৪২৫ হেক্টর। কিন্ত কালবৈশাখী ঝড়-বৃষ্টির প্রভাবে পুরো জেলায় প্রায় ১৭ হাজার ৯৭৫ হেক্টর বোরো ধানের ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ফসল উৎপাদনের ক্ষতি ধরা হয়েছে ১ হাজার ৩৬৪ মেট্রিক টন। যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে ২ কোটি ৮৬ লাখ ৩১ হাজার টাকা। এ পর্যন্ত জেলায় ৩৬ শতাংশ ধান কাটা ও মাড়াই করা হয়েছে।

জয়পুরহাট পাঁচবিবি উপজেলার ফিসকাঘাট এলাকার আহসান হাবীব, ধরঞ্জি হাজীপাড়া এলাকার শহীদুল ইসলামলাই উপজেলার ও ক্ষেতলাল উপজেলার ইটাখোলা বাজারের সাইফুল ইসলাম, কালাই উপজেলার মোলামগাড়ীহাটের মোহসিন আলী,আক্কেলপুর উপজেলার রায়কালি এলাকার আলম ও সদর উপজেলার আদর্শপাড়ার রুহুল আমিনসহ একাধিক ধান চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সম্প্রতি কালবৈশাখীর প্রভাবে বয়ে যাওয়া ঝড়-বৃষ্টির কারণে তাদের পাকা এবং আধাপাকা ধানের গাছ জমিতে শুয়ে পড়েছে। কিছু কিছু নিচু জমিতে এখনো পানি জমে আছে। তাই ধান কেটে নিতে হচ্ছে চড়া দামে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে- প্রতি বিঘা ধান কাটা যেত ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকায়। এখন সেই ধান কাটতে হচ্ছে দ্বিগুণ দামে। এখন প্রতি বিঘা ধান কেটে নিতে হচ্ছে ৪ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকায়।

বিজ্ঞাপন

কালাই উপজেলার কাদিরপুর গ্রামের কৃষক শফির উদ্দিন, অজিমুদ্দিন, ফিতা মিয়া ও আনিছুর রহমান জানান, তাদের নিজের তেমন জমি না থাকায় বর্গা আর এক বছরের জন্য জমি ভাড়া নিয়ে তারা নিজেরা পরিশ্রম করে মাত্র দুই আড়াই বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছেন। ধানের চারা রোপন, সেচ, কীটনাশকসহ সব মিলে তাদের বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে ১১ থেকে ১২ হাজার টাকা। এর সঙ্গে জমির ভাড়া ৫ হাজার ধরলে খরচ পরে প্রায় ১৬ থেকে ১৭ হাজার টাকা। এখন বাজারে মোটা ধানের বাজার দর মণ প্রতি ৭০০ টাকা থেকে ৭৫০ টাকা পর্যন্ত এবং চিকন ধানের বাজার দর মণ প্রতি ৮০০ টাকা থেকে ৯০০ টাকা। এ অবস্থায় নিজের পারিশ্রমিকের মূল্য বাদ দিলে কোনো রকমে চাষাবাদের খরচ আর ধান বিক্রির আয় প্রায় সমান হয়ে যাচ্ছে।

সব চেয়ে বিপদে আছেন মধ্যবিত্ত কৃষকরা, যারা অল্প জমি থাকায় ভাড়াও দিতে পারেন না, আবার দিন মজুর ছাড়া নিজেরাও চাষাবাদ করতে পারেন না। আক্কেলপুর উপজেলার কোলা গ্রামের গফুর মিয়াসহ অনেক ধানচাষীরা জানান, এ মৌসুমে বিঘা প্রতি ধান উৎপাদন হয়েছে বিঘা প্রতি ১৮ থেকে ২০ মন। প্রতি বিঘায় ধান বিক্রি করে কৃষকরা পাচ্ছেন ১৬ হাজার থেকে ১৮ হাজার টাকা। এ অবস্থায় শ্রমিকের মজুরি যোগ করলে হয় সমান সমান, অথবা তাদের প্রতি বিঘা জমির ধান বিক্রি করে ২ থেকে ১ হাজার টাকা লোকসান গুণতে হবে।

একই কারণে জেলার বিভিন্ন হাটে-বাজারেও নেই কৃষকদের প্রাণচাঞ্চল্য, ধানের দর পতনে তাদের চোখে-মুখে রয়েছে বিষন্নতার ছাপ। পাঁচবিবি উপজেলার শাইলট্টি গ্রামের কৃষক মকবুল হোসেন, চাঁনপাড়া গ্রামের হাকিম হোসেনসহ অনেকে জানান, সরকার এবার সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে মণ প্রতি ১০০০ টাকা দরে ধান না কিনলে ও বাজারে ধানের দাম না বাড়লে অধিকাংশ কৃষক লোকসানের মুখে পড়বেন।

বিজ্ঞাপন

নীলফামারী জেলার ডোমার থেকে আসা শ্রমিক মোসলেম উদ্দিন, মফিজুল ইসলাম এবং স্থানীয় শ্রমিক আবু সাইদ, খোকন ইসলাম জানান, জমির ধান শুয়ে পড়ায় এবং জমিতে পানি জমে থাকার কারণে স্বাভাবিকভাবে ধান কাটা যাচ্ছে না। তাই ৫ হাজার টাকা বিঘা দরে ধান কেটেও লাভ হচ্ছে না। ধান গাছ নুয়ে না পড়লে এবং জমিতে পানি না জমে থাকলে, যে সময়ে তারা ৩ বিঘা জমির ধান কাটা-মাড়াই করতে পারতেন। এখন এক থেকে দেড় বিঘা জমির ধান কাটা-মাড়াই করতে সেই সময় লাগছে।

জয়পুরহাট জেলা কৃষি অধিদফতরের উপপরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন,গত রোববার পর্যন্ত ৫০ শতাংশ জমির ধান কাটা-মাড়াই করা হয়েছে। তবে গত কয়েকদিন আগে যে কালবৈশাখী ঝড়-বৃষ্টি হলো, তার প্রভাবে পুরো জেলার বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ফলে ফসল উৎপাদনের ক্ষতি ধরা হয়েছে ১ হাজার ৩৬৪ মেট্রিক টন। আর আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে ২ কোটি ৮৬ লাখ ৩১ হাজার টাকা। এছাড়া ধানের দামের বিষয়টি মার্কেটিং কর্মকর্তা দেখভাল করেন বলেও জানান তিনি।

সারাবাংলা/এনএস

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন