‘ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য মহাপরিকল্পনা নিয়ে ব-দ্বীপ গড়ে তুলতে হবে’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যাতে সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে সেজন্য মহাপরিকল্পনা নিয়ে ব-দ্বীপ গড়ে তুলতে হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি ব-দ্বীপ। এই ব-দ্বীপ আমাদের এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে যাতে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি।

বৃহস্পতিবার (২৬ মে) সকালে ‘বাংলাদেশ ডেলটা প্ল্যান-২১০০ ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স: ইস্যুস অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস অব ইমপ্লিমেন্টেশন’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে তিনি ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা নিয়েই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, যাতে বাংলাদেশকে সুরক্ষিত করতে পারি। শুধু আজকের জন্য নয়, আমাদের আগামী প্রজন্মের জন্য বাংলাদেশ যেন টেকসই হয়, অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হয় এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করতে পারি।’

তিনি বলেন, ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা একটি তথ্য-প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানভিত্তিক টেকনো ইকোনমিক মহাপরিকল্পনা। যা পর্যায়ক্রমিক বাস্তবায়নে ২০২৫ সাল নাগাদ জিডিপির প্রায় ২ দশমিক ৫ শতাংশ অর্থের প্রয়োজন হবে। ফলে অর্থায়ন থেকে শুরু করে জ্ঞান, প্রযুক্তি ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের বন্ধুপ্রতীম দেশ এবং উন্নয়ন সহযোগীদের অংশগ্রহণ একান্তভাবে অপরিহার্য।’

ডেলটা প্ল্যান বাস্তবায়নে বাংলাদেশকে সহায়তার জন্য এগিয়ে আসায় নেদারল্যান্ডসকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অন্যান্য দেশগুলো এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। দেশের ভৌগলিক অবস্থানের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতি নিয়ত আমাদের প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে মোকাবিলা করে চলতে হয়। বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, নদী ভাঙন, লবণাক্ততা, পাহাড় ধস— প্রতিনিয়ত আমাদের এগুলো মোকাবিলা করতে হচ্ছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রণীত দুর্যোগ মোকাবিলা নীতিমালা আমরা অনুসরণ করে চলি।’

জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রচেষ্টার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। দেশের ভেতর দিয়ে প্রায় ৭০০ নদী আছে। তাছাড়া আমাদের জলাভূমি আছে। সব থেকে বড় কথা হলো, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। অথচ জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কোনো মতেই দায়ী নয়। কিন্তু বাংলাদেশকে এ আঘাতটা সহ্য করতে হবে। সে ক্ষেত্রটা চিন্তা করে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। কিছু স্বল্প মেয়াদী, কিছু মধ্য মেয়াদী ও কিছু দীর্ঘ মেয়াদী।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যখন কপ-১৫ এ যোগ দেই, তারপর ফিরে এসেই নিজস্ব অর্থায়নে আমরা ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করি। এর পর আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের অ্যাডাপ্টেশন প্রোগ্রাম নিয়ে তা বাস্তবায়ন শুরু করেছি। ডেলটা প্ল্যান আমরা এই কারণে নিয়েছি, যাতে শত বছরে বাংলাদেশ টেকসই হয়। আমরা চাই, আমাদের দেশটা এগিয়ে যাবে, আরও উন্নত হবে। জলবায়ু অভিঘাত থেকে জনসংখ্যাকে বাঁচানো, পাশাপাশি তাদের খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা, কর্মসংস্থানসহ মৌলিক চাহিদাগুলো যেন আমরা পূরণ করতে পারি সে বিষয়ে বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।’

টানা তিনবারের সরকারপ্রধান বলেন, ‘দেশের মানুষের জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা, খাদ্য নিরাপত্তা ও খাদ্য পুষ্টির নিশ্চয়তা একান্তভাবে অপরিহার্য। জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাবে, কিন্তু আমাদের ভৌগলিক সীমা রেখা বৃদ্ধি পাবে না। সেটা মাথায় রেখে আমরা গবেষণা করছি, খাদ্য উৎপাদন বাড়াচ্ছি। খাদ্য চাহিদা পূরণ, সুপেয় পানি-স্যানিটেশনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে আমরা গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছি এবং তা বাস্তবায়নও করে যাচ্ছি।’

দেশকে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকবে না। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে এবং আমরা সেটা প্রমাণ করেছি। একদিকে প্রকৃতি দুর্যোগ, অপরদিকে করোনাভাইরাসের আঘাত, এছাড়াও রয়েছে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ। যার ফলাফল বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা। এর মধ্যেও আমরা প্রচেষ্টা চালাচ্ছি আমাদের দেশের মানুষের যেন কোনো রকম কষ্ট না হয়।’

করোনা সংকট মোকাবিলায় সরকারের দেওয়া বিভিন্ন প্রণোদনার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা নানা ধরনের প্রণোদনা দিচ্ছি এবং প্রণোদনা দিয়েই আমরা অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের মাথাপিছু আয় বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলার। জিপিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। আমরা চাই, আমাদের দেশ আরও উন্নত হবে। এমডিজি যেমন আমরা সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছিলাম, এসডিজি বাস্তবায়নেও সেরকম পদক্ষেপ নিয়েছি।’

সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম