বিজ্ঞাপন

কর্মী পাঠানোর জট ছাড়াতে আসছেন মালয়েশিয়ার মন্ত্রী, বৈঠক ২ জুন

May 27, 2022 | 10:19 am

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া নিয়ে দুই দেশের মতানৈক্যে ছয় মাস ধরে ঝুলে আছে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানি। এই ছয় মাসে অনেক চিঠি চালাচালি ও বৈঠক হলেও কবে থেকে বাংলাদেশ কর্মী পাঠাতে পারবে, সে তারিখ এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এ অবস্থায় ২ জুন দুই দেশের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ওই বৈঠক উপলক্ষে বাংলাদেশে আসছেন মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী দাতুক সেরি সারাভান মুরুগান।

বিজ্ঞাপন

যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে জানিয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কোনো রকম সমস্যা নেই। মালয়েশিয়া যে প্রক্রিয়ায় কর্মী নিয়োগের কথা বলেছে, সেটাতে বাংলাদেশ একমত হতে পারেনি বলেই জনশক্তি রফতানি বিলম্ব হচ্ছে।

বাংলাদেশ যে কয়টি দেশে জনশক্তি রফতানি করে তার মধ্যে অন্যতম মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। একসময় দেশটিতে বিভিন্ন কাজ নিয়ে লাখ লাখ কর্মী যেতেন। পরে দুর্নীতি আর অনিয়মের কারণে বাংলাদেশ থেকে দুইবার কর্মী নেওয়া বন্ধ করে মালয়েশিয়া। সবশেষ ২০১৮ সালে বন্ধ করে দেওয়া হয়। ওই সময় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অনিয়ম আর দুর্নীতি করে কর্মী পাঠানোর অভিযোগ আনে মালয়েশিয়া।

জানা যায়, মাত্র ১০টি এজেন্সিকে কর্মী পাঠানোর সুযোগ দেওয়া হয়ে তখন। ইউনিক ইস্টার্ন প্রাইভেট লিমিটেড, ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনাল, প্রান্তিক ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরিজম লিমিটেড, রাব্বি ইন্টারন্যাশনাল, আল ইসলাম ওভারসিজ, আমিন ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস, ক্যারিয়ার ওভারসিজ কনস্যালট্যান্টস লিমিটেড, আইএসএমটি হিউম্যান রিসোর্সেস ডেভেলপমেন্ট, প্যাসেজ অ্যাসোসিয়েটস ও শানজারি ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি সিন্ডিকেট তৈরি করে কর্মী পাঠানো শুরু করে। এদের কারণে মালয়েশিয়া যেতে একেকজন কর্মীকে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা খরচ করতে হয়েছে। অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয় আর নানা ধরনের দুর্নীতি অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় তা বেশিদিন এগোয়নি। তারপর কেটে যায় সাড়ে তিন বছর।

বিজ্ঞাপন

এরপর নানান দেনদরবার করে পুনরায় শ্রমবাজারটি খোলার প্রক্রিয়া শুরু করে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। সেলক্ষ্যে গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর দুই দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারকে সই করা হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় বাংলাদেশ থেকে কর্মী পাঠাতে কোনো সিন্ডিকেট থাকবে না। সরকারের নিবন্ধিত সকল রিক্রুটিং এজেন্সি মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে পারবে। কিন্তু অভিযোগ ওঠে, সেই ২০১৮ সালের সিন্ডিকেট আবারও মাথাচারা দিয়ে উঠেছে। সরকারকে মানাতে না পেরে তারা মালয়েশিয়া সরকারের মাধ্যমে এবার মাত্র ২৫টি এজেন্সির সঙ্গে ২৫০ সাব-এজেন্সির তালিকা ধরিয়ে দিয়েছে সরকারকে। পাশাপাশি দেশটির মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে সুপারিশ করা হয়, যেন এই প্রক্রিয়াতেই বাংলাদেশ কর্মী পাঠায়। কিন্তু প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী সাফ জানিয়ে দিয়েছেন যে কারণে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে গেছে, তা আর পুনরায় হবে না। আর এ নিয়ে মতানৈক্য তৈরি হওয়ায় বিষয়টি ছয় মাস ধরে ঝুলে রয়েছে।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার চালুর বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের একটি বৈঠক ২৬ মে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তার আগেই সেখান থেকে বৈঠক স্থগিতের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয়। এরপর ৩০ মে বৈঠক করার কথা থাকলেও পরে তা ২ জুন ঢাকায় করার কথা রয়েছে। উল্লেখ্য, যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক মূলত কর্মকর্তা পর্যায়ের হয়ে থাকে। আর প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রীর আমন্ত্রণে দেশটির মানবসম্পদ মন্ত্রী ঢাকায় আসছেন।

এ প্রসঙ্গে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ বলেন, আমরা দ্রুত মার্কেটটা খুলতে চাই। জানুয়ারির পর থেকে কয়েকবার তারিখ সেট হয়েছে, কিন্তু মালয়েশিয়ার অনুরোধেই তারিখ বারবার পরিবর্তন হয়েছে। বৃহস্পতিবার ( ২৬ জুন) বসার কথা ছিল, সেটাও তারা স্থগিত করেছে। এখন ২ জুন বৈঠক করার খবর পাঠিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

যেসব কারণে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানি ঝুলে আছে, সেসব বিষয়ে বাংলাদেশ কোনো ছাড় দিচ্ছে কি না? এমন প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে গিভ অ্যান্ড টেক তো থাকেই। আমি সবসময় দেশের স্বার্থ অর্থাৎ আমাদের কর্মীদের স্বার্থ দেখেছি। এরমধ্যে অ্যাডজাস্ট করে যত তাড়াতাড়ি আমরা পাঠাতে পারি।

বারবার তারিখ পেছানো সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, হয়তো ওদের কোনো সমস্যা রয়েছে। আমার অসুবিধা থাকলে আমিও পরিবর্তন করতাম। একটা গুড সলিউশনের জন্য কখনো তারিখ পরিবর্তন করিনি। বুঝে শুনে ডেট দিয়েছি। যতবার পরিবর্তন করেছে, মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে করা হয়েছে।

এদিকে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে সকল প্রক্রিয়া শেষ করে রেখেছে মালয়েশিয়া। সেখানে বাংলাদেশের অংশে কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া এখনো দৃশ্যমান হয়নি। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, তারিখ চূড়ান্ত হলে প্রক্রিয়া শুরু করতে খুব বেশি সময়ের প্রয়োজন হবে না। সকল প্রস্তুতি রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/জেআর/এএম

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন