বিজ্ঞাপন

দ্বাদশ ভোটযুদ্ধে ‘দৃশ্যমান উন্নয়ন’ ফোকাস পয়েন্ট আওয়ামী লীগের

May 28, 2022 | 11:58 am

নৃপেন রায়, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে মেগাপ্রকল্পগুলো উদ্বোধনের পর দৃশ্যমান উন্নয়ন বাস্তবতায় জনগণ ভোটযুদ্ধের লড়াইয়ে পুনরায় সরকার গঠন করতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে এগিয়ে রাখবে বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন দলটির নীতিনির্ধারকরা। অগ্রাধিকারভিত্তিক মেগাপ্রকল্প ছাড়াও সড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার লক্ষ্যে অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পগুলো দৃশ্যমান হবে। যা টানা মেয়াদে জয়ের ধারাবাবিহকতা ধরে রাখার ট্রাম্পকার্ড তথা ফোকাস পয়েন্ট হবে মনে করছেন তারা।

বিজ্ঞাপন

দলীয় সূত্র জানায়, ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর টানা মেয়াদে ক্ষমতাসীন সরকার মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু করে এবং পরববর্তীতে অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্প হিসেবে সেগুলোর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া দ্রুতগতিতে এগিয়ে নেওয়ার কৌশল গ্রহণ করা হয়। সরকারের ফার্স্ট ট্র্যাকখ্যাত প্রজেক্টগুলোর মধ্যে ২০২২ সালে কয়েকটির উদ্বোধন হবে। তাই নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে, ততই ওই সব প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজে উচ্চপর্যায়ের তদারকি বাড়ানো হয়েছে।

আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারকরা বলছেন, এই গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগুলোর দৃশ্যমান বাস্তবতা নির্বাচনি প্রচারণায় জনসাধারণের সামনে তুলে ধরা হবে। করোনা মহামারির স্থবিরতা কাটিয়ে নতুনভাবে এসব উচ্চপর্যায়ের মেগা প্রকল্পের কাজের গতিও বাড়ানো হয়। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আগামী জাতীয় নির্বাচনের নির্বাচনি ইশতেহার বাস্তবায়ন ও অগ্রগতিসহ আরও কী কী প্রতিশ্রুতি ইনপুট করা যায়— সে বিষয়েও এরইমধ্যে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন। গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর গণভবনে প্রায় এক বছর পর অনুষ্ঠিত দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে এমন পরিকল্পনার প্রসঙ্গ ওঠে। পরবর্তীতে সভাগুলোতেও একই নির্দেশনা বাস্তবায়নের তাগিদ দেন দলীয় সভাপতি।

দলের নেতারা বলছেন, কিছু কিছু রাজনৈতিক দল ক্ষমতার যাওয়ার রঙিন খোয়াব দেখছে। মানুষ এতো বোকা নয়। মানুষ জানে বিএনপিকে ভোট দিয়ে লাভ নেই। আগামী বছর যখন মেগাপ্রকল্পগুলো একে একে উদ্বোধন হবে, বিএনপি চোখে সর্ষের ভূত দেখবে। বাংলাদেশে ভোটের রাজনীতি বড় জটিল। মানুষ এখন উন্নয়ন চায়। মানুষ এখন চরিত্রবান লোককে ক্ষমতায় দেখতে চায়; সেই মানুষ একমাত্র এখন আমাদের নেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।

বিজ্ঞাপন

এদিকে সরকারের অগ্রাধিকারভিত্তিক মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প, বঙ্গোপসাগরের সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রকল্প, পদ্মা রেলসেতু সংযোগ প্রকল্প, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ও দোহাজারী থেকে গুনদুম পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প, রামপাল মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রজেক্ট, মাতারবাড়ি আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার প্রজেক্ট, ঢাকা মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প (মেট্রোরেল), এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ ও পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রকল্প।

এই প্রকল্পগুলোর ওপর দেশের আর্থিক ও সামাজিক উন্নয়ন অনেকাংশে নির্ভর করছে। এ লক্ষ্যে সরকারের অগ্রাধিকারে থাকা মেগা প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যমাত্রা দিয়ে জাতীয় নির্বাচনের আগে কয়েকটির উদ্বোধনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরেরও প্রায় ৫৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্ত প্রদান করা হয়। এর মধ্যে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, সর্বনিম্ন পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দরের আনুষাঙ্গিক কার্যক্রম পরিচালনা প্রকল্প।

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় সুনির্দিষ্টভাবে প্রকল্পগুলোতে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ৫৭ হাজার ৯৯০ কোটি ১৯ লাখ টাকা। পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল-লাইন ৬, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্প, কর্ণফুলী টানেল, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, সাপোর্ট টু ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পিপিপি প্রজেক্ট, পদ্মাসেতুতে রেল সংযোগ, চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেল সেতু নির্মাণ, ডিপিডিসি এলাকায় বিদ্যুৎ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন, হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ এবং দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার ও রামু থেকে মিয়ানমারের নিকটবর্তী ঘুমধুম পর্যন্ত সিংগেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্প। আর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প ও পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর প্রকল্পও রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

২৫ জুন উদ্বোধন হতে যাচ্ছে দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলার মানুষের স্বপ্নের দরজা বলে খ্যাত। বহুল প্রতিক্ষীত স্বপ্নের পদ্মা বহুমুখী সেতু্র উদ্বোধন শুধু নির্বাচনী রাজনীতির ভোটে কৌশলে এগিয়ে থাকার প্রতীক নয়, বহু ষড়যন্ত্রের পথ মাড়িয়ে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের আর্থিক সমৃদ্ধির মর‌্যাদারও প্রতীক। যার বাস্তবায়ন ক্ষমতাীন আওয়ামী লীগ সরকারের এক বিরাট চ্যালেঞ্জ ছিল।

দেশের সর্বোচ্চ ব্যায়ের প্রকল্পগুলোর একটি হল পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এই প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে। কাজ শুরু হয়েছে ২০১৬ সালের জুলাই মাস থেকে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। জাপান সরকারের অর্থায়নে ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজধানীতে বাস্তবায়ন হচ্ছে মেট্রোরেল প্রকল্প।

২০১২ সালের জুলাই থেকে কাজ শুরু হয় যা ২০২৪ সালে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। চলতি বছরের জুন থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে তিনটি মেগা প্রকল্পের উদ্বোধন করা হবে। এর মধ্যে মেট্রোরেল চালু হবে ডিসেম্বরে। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ২০২২ সালের জুনে পদ্মা সেতু চালু করা হবে এবং এরপর চট্টগ্রামে কর্ণফুলী টানেল এবং ডিসেম্বরে মেট্রোরেল ব্যবহারের জন্য খুলে দেওয়া হবে বলে আশাবাদ করেছেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে মেট্রোরেল প্রসঙ্গে বলেন, এটি একটি মাইলফলক।

মেট্রো এখন আর স্বপ্ন নয়, এটি দৃশ্যমান বাস্তবতা। সমালোচকরা সমালোচনা ও অপপ্রচার করবে। আমরা জবাব দেব কাজে। শেখ হাসিনা সরকার কাজেই জবাব দেয়। আমরা মেট্রো রেল, পদ্মা সেতুসহ মেগা প্রজেক্ট দিয়ে জবাব দিচ্ছি।

বিজ্ঞাপন

এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পটি বিল্ট ওন অপারেট অ্যান্ড ট্রান্সফার পদ্ধতিতে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর সঙ্গে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ফাস্ট ট্র্যাক প্রজেক্ট মনিটরিং কমিটির ১০ম সভায় গ্যাস পাইপ লাইন নির্মাণ প্রকল্পটি যুক্ত করা হয়। এর আওতায় এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের পাশাপাশি মহেশখালী-আনোয়ারা গ্যাস সঞ্চালন সমান্তরাল পাইপলাইন নির্মাণ, আনোয়ারা-ফৌজদারহাট গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ এবং চট্টগ্রাম-ফেনী-বাখরাবাদ গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্প যুক্ত রয়েছে।

জাপান সরকারের অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের জন্য এ প্রকল্পকে ১৯ টি কম্পোনেন্টে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭টি কম্পোনেন্ট সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে, ৬টি কম্পোনেন্ট পিপিসির মাধ্যমে এবং ৬টি কম্পোনেন্ট জি-টু-জি পদ্ধতির মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। চীন সরকারের অর্থায়নে জি-টু-জি পদ্ধতিতে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্পের শুরু থেকে ২০১৮ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৯ হাজার ৮৮ কোটি টাকা। প্রকল্পের সার্বিক ভৌত অগ্রগতি ১৫.২ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ২৩.১৫ শতাংশ।

২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয় এবং এই প্রকল্পের কাজ ২০২২ সালে শেষ হওয়ার কথা। এদিকে সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ প্রকল্পটির অর্থায়ন চূড়ান্ত না হওয়ায় এই প্রকল্পের কাজের এখনও কোন অগ্রগতি হয়নি। দশটি প্রকল্পের মধ্যে এই প্রকল্পটি সবথেকে বেশি পিছিয়ে আছে। দোহাজারি-রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু-মিয়ানমারের কাছে ঘুমঘুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্প। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থায়নে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। ২০১৮ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত প্রকল্পটির সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ১১ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ২৩.১৫ শতাংশ। ২০১০ সালে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে এবং এই প্রকল্পের কাজ ২০২২ সালের জুলাই মাসে শেষ হওয়ার কথা।

এর আগে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আগামী বছরের শেষের দিকে রাজধানীর কাওলা থেকে তেজগাঁও রেল স্টেশন পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। এক্সপ্রেসের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। ২০২২ সালের ডিসেম্বর ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বিমানবন্দরের দক্ষিণ কাওলা থেকে তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। এটি চালু হলে ঢাকা শহরের যানজট অনেকাংশে কমবে। পাশাপাশি এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে জিডিপিতে।’

নির্বাচনী ভোটযুদ্ধকে সামনে রেখে সরকার এরইমধ্যে মানুষের ঘরে ঘরে শতভাগ বিদ্যুতায়নের কাজটি সম্পন্ন করেছে। দুর্গম এলাকায় সৌরবিদ্যুৎতের মাধ্যমে এবং সমুদ্র-নদীর চর এলাকায় সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুতায়নের কাজ সম্পন্ন করছে। কারণ ক্ষমতাসীন দলটি তার নির্বাচনি ইশতেহারে, ২০২৩ সালের মধ্যে ২৮০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং ২৩০০০ সার্কিট সঞ্চালন লাইন নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। উন্নয়নের পূর্বশর্ত হিসেবে দক্ষ ও নিরাপদ চলাচল ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রয়োজনে জাতীয় মহাসড়কগুলো চার-লেনে উন্নীত করার চলমান কার্যক্রম দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে নিচ্ছে। সড়ক নেটওয়ার্কে গ্রাম ইউনিয়ন, উপজেলা, ও জেলা সদরকে সংযুক্ত করে সারাদেশে জনমুখী সড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার টার্গেট করে দ্রুততার সাথে তদারিক কার্যক্রম বৃদ্ধি করেছে। ঢাকাকে ঘিরে এলিভেটেড রিংরোড এবং ইস্টার্ন বাইপাস নির্মাণেরও পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার প্রতিশ্রুতি নির্বাচনী ইশতেহারের উল্লেখ করে।

আগামী প্রজন্মকে ঘিরে আগামী দিনের বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে বদ্বীপ পরিকল্পনা গ্রহণ করে বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছে ক্ষমতাসীন সরকার। জলবায়ুর ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করে কাঙ্খিত উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য ‘বাংলাদেশ বদ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০’শতবর্ষের একটি পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে-যা গত নির্বাচনি ইশতেহারে দলটির প্রতিশ্রুত ছিল।

এ সব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ শুরু করেছে। এই পরিকল্পনাটি ২০৩০ সালের মধ্যে আমাদের মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি সমৃদ্ধ দেশের মর্যাদা অর্জনে সহায়ক হবে। সরকারের নীতিনির্ধারণীদের মতে, ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ সাল নাগাদ স্বল্প, মধ্য ও স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনাগুলোর সমন্বয়ের যোগসূত্র সৃষ্টি করবে।

পাশাপাশি ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশ’- শীর্ষক একাদশ জাতীয় সংসদে নির্বাচনী ইশতেহারের প্রতিশ্রুত অঙ্গীকারগুলো বাস্তবায়ন এবং ২১ দফা অঙ্গীকারগুলো বাস্তবায়ন দৃশ্যমানতা জনগণের কাছে স্পষ্ট করার কৌশল রয়েছে টানা মেয়াদে ক্ষমতাসীন দলটির। সারাদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কাজের অগ্রগতিতে অনেক দূর এগিয়ে গেছে সরকার। মূলত-সরকারের এই দৃশ্যমান উন্নয়ন বাস্তবতাগুলো আগামী জাতীয় নির্বাচনে দলটির জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখার ক্ষেত্রে অন্যতম ট্রাম্পকার্ড হতে যাচ্ছে বলে মনে করেন নেতারা।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক সারাবাংলাকে বলেন, আমাদের সরকার প্রধান আমাদের দলীয় প্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা যে ওয়াদা করেছিলেন মানুষকে, সেই ওয়াদা তিনি পূরণ করেছেন। তিনি যে কাজগুলো করেছেন, তা অসাধ্য সাধন করেছেন। আমি একশোটি কাজের কথা বলতে পারব, যে কাজগুলোর কারণে আওয়ামী লীগকে আবার ভোট দিয়ে নির্বাচিত করার উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য। কাজেই আমরা মানুষকে যে কথা দিয়েছিলাম যে, ওয়াদা করেছিলাম মানুষের সামনে সেই ওয়াদা আমরা রক্ষা করেছি। আমরা মানুষকে বলেছিলাম, আমরা ক্ষমতায় এলে শান্তি-শৃঙ্খলা সুরক্ষা হবে। আমরা ওয়াদা করেছিলাম উন্নয়ন হবে। আমরা ওয়াদা করেছিলাম মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে কোন সংকট থাকবে না। যে সরকার, যে নেত্রী মানুষের প্রতি মমত্ববোধ থাকে, মানুষের প্রতি কর্তব্যবোধ থাকে, তাদেরকেই আবার নির্বাচিত করবে জনগণ; এটিই স্বাভাবিক।

সাবেক স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী নানক আরও বলেন, ‘আমাদেরকে যে অন্ধকারে নিমজ্জিত করে রেখে গিয়েছিল বিএনপি-সেই অন্ধকার থেকে আলোতে কিন্তু ফিরে এনেছেন শেখ হাসিনার সরকার। আজকে বিদ্যুৎ আর স্বপ্ন নয়। বিদ্যুৎ আজকে আমার একটি দৈনন্দিন চাহিদা; সেই চাহিদা পূরণ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে এই সরকারকে অবশ্যই আবার ক্ষমতায় দেখতে চায় বলেই মনে করি।’

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দল হিসেবে সবসময়েই নির্বাচনের জন্য আমাদের প্রস্তুতি থাকে। আওয়ামী লীগ জন্মলগ্ন থেকে নির্বাচনমুখী রাজনৈতিক দল। জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষা নিয়ে দলটি সবসময় কাজ করে যায়। গণতান্ত্রিক আচরণ এবং গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল দল হিসেবে, মানুষের জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল দল হলো আওয়ামী লীগ। সকল রাজনৈতিক দলের অংশ গ্রহণের মধ্য দিয়ে অংশগ্রহণমূলক, জনগণের জনমত প্রতিফলিত হোক এমন নির্বাচনই চায় এবং গণমুখী নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়েই এই দেশের মানুষের সার্বিক কল্যাণে উন্নয়ন অগ্রগতির জন্যই আওয়ামী লীগ কাজ করে। সেই ধারাবাহিকতায় আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি এবং আমাদের দলকে তৃণমূল থেকে ঢেলে সাজানোর কাজ শুরু করে দিয়েছি। আমরা আশা করছি, খুব অল্প সময়ের মধ্যে সংগঠনকে ঢেলে সাজিয়ে আগামী নির্বাচনে জনগণের জনমতকে আওয়ামী লীগের পক্ষে, নৌকার পক্ষে যাতে গণজোঁয়ারের সৃষ্টি হয়-সেই লক্ষ্য কাজ করছি।’

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বলেন, ‘একটি নির্বাচনে জয়লাভের কিছু কারণ থাকে। এক হচ্ছে, দলের নির্বাচনি ইশতেহার কর্মসূচি এবং প্রার্থী ও দলের ঐক্যবদ্ধতা। এই তিনটা জিনিসের সমন্বয়ে নির্বাচনে জয়লাভ হওয়া সুনিশ্চিত। আমরা মনে করি আজকে উন্নয়ন সমৃদ্ধি শান্তি গণতন্ত্রের প্রতীক জননেত্রী শেখ হাসিনার যে উন্নয়নের মহাযজ্ঞ শুরু করেছেন, বাংলাদেশ তার নেতৃত্বে বিশ্বের দরবারে একটি মর্যাদাশীল দেশ, একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে, উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠা হয়েছে।’

এস এম কামাল আরও বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশের মানুষ জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ভালো আছে এবং এই বৈশ্বিক মহামারির মধ্যেও করোনা সংকট মোকাবিলা করার মধ্য দিয়ে এবং মানুষকে ভ্যাকসিন দেয়ার মধ্যে বাংলাদেশের মানুষের একটি বিশ্বাস আস্থা জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আছে। জননেত্রী শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা আমাদের প্রার্থীর যাচাই-বাছাই ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্যতা এবং দল সুসংগঠিত এবং দৃশ্যমান উন্নয়ন বাস্তবতা; আমরা মনে করি এগুলোর ওপর ভর করে যে কোনো জোট নির্বাচনে আসুক আমরা সুষ্ঠ নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব আমরা সংখ্যাগরিষ্ট আসনের অধিক আসনে জয়লাভ করব।’

সারাবাংলা/এনআর/একে

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন