বিজ্ঞাপন

ব-তে বাজেট, ভ-তে ভর্তুকি

May 29, 2022 | 1:46 pm

মোস্তফা কামাল

রেকর্ড পরিমাণ ভর্তুকির বার্তা নিয়ে আসছে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট। এরইমধ্যে এ সংক্রান্ত তথ্যে বলা হচ্ছে বাজেটে ভর্তুকি-প্রণোদনায় বরাদ্দ বাড়বে ২৮ হাজার কোটি টাকার মতো। শেষ পর্যন্ত এ হিসাবের তেমন হেরফের হচ্ছে না। বাস্তবতা মোকাবেলায় ভর্তুকির রাস্তা থেকে পিছু হটার সুযোগ নেই সরকারের। আয়-ব্যয়, বাজার, উৎপাদন, সরবরাহ প্রশ্নে বাংলাদেশের অবস্থা এখনো গুরুচরণ অবস্থায় যায়নি। তবে, শঙ্কা ঘুরছে। মূল্যস্ফীতির চাপ বেড়েছে। সাধারণ ও খাদ্য উভয় খাতের মূল্যস্ফীতি চোখ রাঙাচ্ছে। এর অবধারিত ফলাফল বাজেটে ভর্তুকি বৃদ্ধি। এর রাশ টানতে গ্যাস, বিদ্যুৎ, জ্বালানিসহ নানা পরিষেবার দাম আরেক দফা বাড়ানোর পথে হাঁটছে সরকার। শুধু বিদ্যুৎ খাতেই ১৮ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকির দরকার হবে।

বিজ্ঞাপন

কেবল বাংলাদেশ নয়, করোনা মহামারির ভয়াবহতার ক্ষত সারাতে বিশ্ববাস্তবতার আলোকে দেশে-দেশে সরকারগুলোর সামনে ভর্তুকির বিকল্প নেই। এটা এক ধরনের অনিবার্য পরিণতি। বিশ্বজুড়ে খাদ্যের অভাব। সামনে তা হাহাকারে রূপ নেয়ার সমূহ শঙ্কা। জ্বালানির দর বাড়ায় প্রায় সব ক্ষেত্রে ব্যয় বেড়েছে। তারওপর বিশ্বব্যাপি সংকুচিত হয়ে এসেছে কর্মবাজার। এর জেরে মানুষের আয় কমছে। উৎপাদনও কমতির দিকে। কিন্তু চাহিদা কমেনি, বরং বেড়েছে। এ পরিস্থিতি সামলাতে ২৮ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি বা প্রণোদনাও শেষ পর্যন্ত কম হয়ে যেতে পারে।

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ভর্তুকির জন্য বরাদ্দ আরো বাড়ানো লাগতে পারে বলে আভাস মিলছে। তেল, সার, গ্যাস ও বিদ্যুতখাতে ভর্তুকি এড়ানোর পথ নেই। বলার অপেক্ষা রাখে না বাজেটের বড় একটি অংশই খরচ হয় ভর্তুকি খাতে। প্রতি বছরের বাজেটে একই চিত্র দেখা যায়। বাজেটে ভর্তুকি নিয়ে কেন এই অস্বচ্ছতা, তার কোনো স্বচ্ছ জবাব সরকারি নীতি নির্ধারকদের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি। বাজেটে ভর্তুকির গোপনীয়তা ভাঙা জরুরি। ব্যাপক জরুরি। বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ যেভাবে পরিষ্কার করে দেখানো হয়, ভর্তুকিতে সে রকম দেখানো হয় না। এ নিয়ে নানা কথা রয়েছে। তাই ভর্তুকির ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের সংস্কার জরুরি। স্বচ্ছতাও দরকার। খাতভিত্তিক গবেষণারও দাবি রাখে। ভর্তুকির টাকাটা কিন্তু সরাসরি জনগণের দেয়া করের টাকা।

করোনা মহামারি পরবর্তী পরিস্থিতিতে ভর্তুকি নিয়ে অস্বচ্ছতা কাটানোর একটা চর্চা করলে মন্দ হয় না। কে না জানে, জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির ফলে প্রায় সব ক্ষেত্রে ব্যয় বেড়েছে। আয় কমেছে। সত্যটা আড়াল না করাই ভালো। একটা বাজে সময়ে বাজেট দিতে হচ্ছে সরকারকে। এটি লুকানোর বিষয় নয়। সাধারণ জ্ঞানের মানুষ মাত্রই জানে, প্রাকৃতিক করোনা মহামারি ছাড়লেও মানবসৃষ্ট দুর্গতি পিছু ছাড়ছে না বিশ্বকে। বাংলাদেশের মতো দেশগুলোকে যেন পেয়ে বসেছে আরেকটু বেশি। ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের জেরে বিশ্বজুড়ে মন্দার আভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংকও। এর আগের পর্ব হিসেবে চড়েছে খাদ্যপণ্যের বাজার। তা বিশ্বকে মোটামুটি একটি ‘মানবিক বিপর্যয়ের মুখে ফেলেছে। বিশ্বব্যাংক বলছে, এই যুদ্ধ চলতে থাকে খাদ্যপণ্যের রেকর্ড দাম লাখ লাখ মানুষকে অপুষ্টি ও দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিতে পারে। এর মাঝে খাদ্যপণ্যের মধ্যে সব চেয়ে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে ভোজ্যতেল নিয়ে। গম ও ভোজ্যতেলের পাশাপাশি সারের মতো গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের বৈশ্বিক বাজারও টালমাটাল। বাংলাদেশের মতো কৃষিপ্রধান দেশগুলোর জন্য তা ভীষণ উদ্বেগের।

বিজ্ঞাপন

বাস্তবতার এমন বাজে সন্ধিক্ষণে আমাদের জাতীয় বাজেট সমাগত। হাতে সময় বেশি নেই। আগামী ৯ জুন সংসদে নতুন বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী। বক্তৃতা-বিবৃতি কম্পোজ হয়ে গেছে কবেই। এখন বাকি কেবল ঘোষণা। অর্থমন্ত্রীর শতাধিক পৃষ্ঠার বাজেট বক্তৃতাটির প্রতিবছরই একটি শিরোনাম থাকে। গেলবার ছিল ‘জীবন-জীবিকায় প্রাধান্য দিয়ে সুদৃঢ় আগামীর পথে বাংলাদেশ’। এবারেরটির নাম হতে পারে ‘সবকিছুর পরও এগোচ্ছি আমরা’। নাম বা শিরোনাম যা-ই হোক, আয়ের পথ ছাড়াই বেশি ব্যয়ের বাজেট দিতে হচ্ছে সরকারকে। ঋণ নিয়ে হলেও ব্যয় করা রাষ্ট্রের নিয়ম। কারণ হিসেবে বলা হয়, ব্যয় না করলে মানি রোলিং বাড়ে না। অর্থনীতিও গতি পায় না। এর মধ্যে আবার মূল্যস্ফীতির বিষয়ও রয়েছে। তা আছে জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডার মতো দেশেও। যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান গণতন্ত্র, ব্যক্তি স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, মানবাধিকার ইত্যাদি মূল্যবোধের ওপর দাঁড়িয়ে উন্নয়নে আগুয়ান। জার্মানিও উন্নয়নে সফল। ভর্তুকি, প্রণোদনায় তাদের মধ্যে লুকোচুরি কম। লুকোচুরির চেয়ে বাস্তবতা জানিয়ে দেয়া উত্তম।

লেখক: সাংবাদিক-কলামিস্ট; বার্তা সম্পাদক, বাংলাভিশন

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন