বিজ্ঞাপন

‘প্রধানমন্ত্রীকে বলেছিলাম, আমি পদত্যাগ করব কি না’

May 31, 2022 | 8:07 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: ভোগ্যপণ্যের দাম ‘অস্বাভাবিক’ বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রিত্ব ছাড়ার যে দাবি উঠেছে— তার জবাব দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীকে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, পদত্যাগ করব কি না?

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (৩১ মে) বিকেলে নগরীর পলোগ্রাউন্ড মাঠে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ আয়োজিত মাসব্যাপী বাণিজ্যমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

তেলসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্যের দামবৃদ্ধি নিয়ে সমালোচনার জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘জিনিসপত্রের দাম নিয়ে কথা উঠেছে। তেলের দামের কথা উঠেছে। আমি হিসাব দিই- এই মুহূর্তে পাশের দেশ ভারতে তেলের দাম আমাদের চেয়েও ১৫ টাকা বেশি। আর পাকিস্তানে বেশি ৩৬ টাকা। আমাদের ৯০ ভাগ তেল আমদানি করতে হয়। আর্জেন্টিনা, ব্রাজিলে যদি তেলের দাম বাড়ে, তাহলে আমরা কম দামে খাওয়াব কিভাবে? ব্যবসায়ীরা তো সেখান থেকেই তেল কিনে এনে বিক্রি করছেন।’

‘সরকার যেটা পারে, ভ্যাটটা উইথড্র করতে পারে এবং সরকার সেটা করেছে। ডাল, গম আমাদের আমদানি করতে হয়। যেসব দেশ থেকে আমদানি করা হয়, সেখানে দাম বাড়ছে। এরপরও আমাদের চেষ্টার ত্রুটি নেই। মানুষকে কীভাবে সাহায্য করতে পারি, সেই চেষ্টা আমরা করে যাচ্ছি। টিসিবির মাধ্যমে এক কোটি মানুষকে সাশ্রয়ী মূল্যে খাদ্যপণ্য আমরা দিয়েছি’— বলেন টিপু মুনশি।

বিজ্ঞাপন

পদত্যাগের দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘পত্রিকায় দেখলাম, কমিউনিস্ট পার্টি বলছে- বাণিজ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চাই। আমি সব সময় বলি- আমার এই পদের প্রতি লোভ নেই। মুহূর্তের মধ্যেই সরে যেতে পারব, কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু আমাকে গ্যারান্টি দিতে হবে যে, আমি পদত্যাগ করলে আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল তেলের দাম কমিয়ে দেবে, মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়া পামঅয়েলের দাম কমিয়ে দেবে। আমি তাদের কাছে সেই গ্যারান্টি চেয়েছিলাম।’

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলেছিলাম, আমি পদত্যাগ করব কি না? প্রধানমন্ত্রী বললেন, যারা পদত্যাগ চায় তাদের জিজ্ঞেস কর, তারা এসে দাম কমাতে পারবে কি না? তাহলে তাদের মন্ত্রী বানিয়ে দেবো। পদত্যাগ করতে হবে, এসব কথা শুধু বলার জন্য বলা, কাউকে ছোট করার জন্য বলা।’

বিজ্ঞাপন

বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমার ৫৬ বছর রাজনীতি করার ইতিহাস। মুক্তিযুদ্ধ করেছি। ব্যবসায়ী হয়েছি স্বাধীনতার পরে এসে। এক সময় বিজিএমইএর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সবসময় বলেন যে, সরকার ব্যবসা করবে না, ব্যবসায়ীদের সাহায্য করবে। আমাদের ব্যবসায়ীদের যা প্রয়োজন, সরকার সেটা পূরণ করবে। সে কারণেই তিনি বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে আমাকে বেছে নিয়েছিলেন কি না আমি জানি না।’

ভোজ্য তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম কমানোর দাবিতে গত ১২ মে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। সেই কর্মসূচি থেকে সিপিবি নেতারা বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার অভিযোগ এনে বাণিজ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শেষে ভোগ্যপণ্যের দাম, আমদানির বিকল্প বাজার— এসব নিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে যদি দাম বাড়ে আমরা কমাতে পারব না। আন্তর্জাতিক বাজারে যদি দাম কমে, দেশেও কমে যাবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেটা করছেন, ভর্তুকি মূল্যে সাধারণ মানুষের কাছে পণ্য পৌঁছে দেওয়া, সেটা আমরা করছি। আমরা আশাবাদী যে, তেলের দাম কমতে শুরু করবে। পামঅয়েলের দাম এখন নিম্নমুখী, কিন্তু সয়াবিন তেলের দামটা এখনও কমেনি। তবে বিপদ যখন আসে গ্লোবালি আসে। আমরাও তো মেম্বার অব দ্য গ্লোবাল ফ্যামিলি। সেটা আমাদের সইতেই হবে। এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমরা একটু সাশ্রয়ী হই।’

বিজ্ঞাপন

তেলের বিকল্প বাজার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিকল্প বাজার কোথায় পাব? আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল ছাড়া অন্যদের তো এত সারপ্লাস নাই যে, আমাদের দেবে। আমরা যেটা করছি, রাইস বান অয়েল উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করছি। এটা আমাদের দেশে মাত্র ১০ শতাংশ হয়, এটা আরও বাড়ানোর চেষ্টা করছি।’

আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বেড়ে যাবার প্রভাব মোকাবিলার চেষ্টা আগামী বাজেটে থাকবে বলেও আশ্বাস দেন বাণিজ্যমন্ত্রী।

চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলমের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সংসদ সদস্য এম এ লতিফ, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর, বাণিজ্যমেলা কমিটির চেয়ারম্যান এ কে এম আকতার হোসেন, চেম্বারের সহ-সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন