বিজ্ঞাপন

জলে গেছে ১৮ কোটি, খালের সৌন্দর্য ফেরাতে এবার ব্যয় ২৫ কোটি টাকা

June 10, 2022 | 8:27 am

রিপন আনসারী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

মানিকগঞ্জ: মানিকগঞ্জ শহরের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া সোয়া ৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ খালের সৌন্দর্য বাড়াতে এবার ২৫ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এর আগে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দুই দফায় ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কার করা হলেও সুফল পায়নি পৌরবাসী। অথচ পৌর নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীদের সামনে বড় একটি ইস্যু হচ্ছে মানিকগঞ্জ শহর দিয়ে বয়ে যাওয়া খালটি নিয়ে।

বিজ্ঞাপন

সম্প্রতি পৌর মেয়র রমজান আলীর সভাপতিত্বে প্রায় ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে খালটি সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন। তবে আগের অভিজ্ঞতায়, প্রকল্প সঠিক ভাবে বাস্তবায়ন না হওয়া নিয়ে যেমন শঙ্কা রয়েছে নাগরিকদের মধ্যে, তেমনি খালের উৎসমুখে কালিগঙ্গা নদী খনন না করায় প্রকল্পের সুফল নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

খালের সংস্কারসহ সৌন্দর্যবর্ধনে দুই বছর আগে প্রকল্প নেওয়া হলেও বেশ কয়েক বছর ধরে এই খালটি ময়লার ভাগারে পরিণত হয়েছে। ময়লা আবর্জনা থেকে দুর্গন্ধ বের হওয়ার কারণে খালের আশপাশ দিয়ে মানুষ হাঁটাচলায় সমস্যা হচ্ছে। বেশ কয়েকটি হোটেল, রেস্তরা, মিষ্টির কারখানাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য খালে পড়ে এই দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। পাশাপাশি খালের ভেতর আবর্জনার আর জঙ্গলে সয়লাব হওয়ায় মশার উপদ্রবও অনেক।

জানা গেছে, মানিকগঞ্জ পৌরসভার বান্দুটিয়া এলাকা থেকে শহরের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বকজুড়ি পর্যন্ত খালের মোট দৈর্ঘ্য প্রায় সোয় ৬ কিলোমিটার। বান্দুটিয়া এবং বকজুড়িতে উৎসমুখে দু’টি স্লুইস গেট দিয়ে কালিগঙ্গা নদী থেকে খালে পানি ঢোকে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় শুরু হওয়া ২০০৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত এশিয়ান উন্নয়ন ব্যংকের অর্থায়নে ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে খালটি সংস্কারসহ দুই পাড়ে গাইডওয়াল এবং উৎসমুখে স্লুইস গেট নির্মাণ করা হয়। তবে এতে খালে প্রবাহ সৃষ্টি হয়নি।

বিজ্ঞাপন

সে সময়েও খালের উৎসমুখ খনন করা হয়নি। ফলে খনন করেও সারাবছর খালে পানির প্রবাহ রাখা সম্ভব হয়নি। উল্টো বর্ষা মৌসুমের পানির সঙ্গে পলি ঢুকে কিছুদিনের মধ্যেই খালটি ভরাট হয়ে যায়। অপরদিকে নিম্নমানের কাজের কারণে কিছুদিনের মধ্যেই খালের বাধাই পাড়ের সিসি ব্লক ধসে পড়ে। ভেঙে যায় ওয়াক ওয়ে।

দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় খালের স্লুইস গেটের কাছে নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় বর্ষা মৌসুমের এক থেকে দেড় মাস পানি খালে ঢুকতে পারে। মূলত এ কারণেই খালটি পানি শুন্য থাকে প্রায় সারা বছর। ফলে বর্তমানে খালটি শহরের ভাগারে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সৌন্দর্যবর্ধনের যে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে তাতে খাল খনন করার উদ্যোগ নিলেও উৎমুখে নদী খনন করার পরিকল্পনা এই প্রকল্পে নেই।

পৌরসভার প্রকৌশলী বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সিটি রিজিয়ন ডেভেলপমেন্ট (সিআরডিপি) প্রকল্পের আওয়তায় খাল খনন ও সৌন্দর্যবন্ধনে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৭ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। ১০.৬২ শতাংশ কম মূল্যে যৌথভাবে এই কাজের ঠিকাদারি পায় মেসার্স এপেক্স এন্টারপ্রাইজ ও কামরুল ব্রাদার্স। প্রায় সোয়া ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ খালটি খনন ছাড়াও তিনটি সেতু নির্মাণ করা হবে। চেইনেজ ১৬৫০ থেকে ৩০৬৫ পর্যন্ত সিসি ব্লক দিয়ে খালের পাড় বাধাইসহ গড়ে ৫ মিটার প্রশস্থ ওয়াক ওয়ে হবে। রয়েছে বৃক্ষরোপণসহ বিভিন্ন ভাবে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ। কাজ শেষের সময়সীমা ধরা হয়েছে এক বছর।

বিজ্ঞাপন

এদিকে খালের সীমা নির্ধারণ করা হলেও অনেক স্থানে অবৈধভাবে দখল করে রেখেছেন প্রভাবশালীরা। তাদের বাসাবাড়ির সুয়ারেজ লাইন সরাসারি দেওয়া হযেছে খালটিতে। তাদেরই একজন মানিকগঞ্জ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর খবিরুল আলম চৌধুরী। তিনি খালের পাড়ের জমিকে কৃষি জমি হিসেবে দেখিয়ে দলিল করে নিয়েছেন। খালের পাড়ের ওই জমিতে খবিরুল আলম চৌধুরী তিনতলা ভবন করেছেন।

এ ব্যাপারে খবিরুল আলম চৌধুরী জানান, খালের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য যেটুকু প্রয়োজন হবে সেইটুক তিনি ছেড়ে দিবেন। এর জন্য তিনি সরকারের কাছ থেকে কোনো আর্থিক সুবিধা নিবেন না।

পরিবেশবিদ অ্যাডভোকেট দীপক ঘোষ জানান, শহরের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া খালটিতে পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস ১৪ আগস্ট নৌকা বাইচ হতো। সরাবছর পানির প্রবাহ থাকতো। কিন্ত দিন দিন খালটি দখল করে ড্রেনে পরিণত করেছেন প্রভাবশালীরা। যে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে তা যদি সঠিক ভাবে বাস্তবায়ন না হয় তবে সরকারের কোটি কোটি টাকা নষ্ট হবে। খালটি কোন ভাবেই শহরের ড্রেন হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। খালের উৎস মুখ খনন করে সারা বছর পানি প্রবাহ বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এসব যদি না হয় তবে প্রকল্পের নামে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে লাভ হবে না।

বিজ্ঞাপন

পৌরসভার শহর পরিকল্পনাবিদ রুমানা নাজনিন বলেন, ‘নদীর যে অবস্থা খনন করেও কাজ হবে না। সারাবছর পানি প্রবাহ রাখতে হলে পাম্পের মাধ্যমে নদী থেকে খালে পানি আনতে হবে।’

মানিকগঞ্জ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী বেল্লাল হোসেন জানান, কেন খালের উৎসমুখ খনন না করেই এই পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে সে সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না। উৎসমুখ খনন না করা হলে সারাবছর খালে পানি না থাকার বিষয়ে তিনিও একমত।

মানিকগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র গাজী কামরুল হুদা সেলিম বলেন, ‘২০১৫ সালে ডিসেম্বর মাসে পৌর নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে নির্বাচনী ইস্তেহার ছিলো খালটি সংস্কার করার। নির্বাচিত হওয়ার পর এর জন্য সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করা হয়। পরবর্তীতে সিটি রিজিয়ন ডেভেলপমেন্ট (সিআরডিপি) প্রকল্পের আওয়তায় খাল খনন ও সৌন্দর্যবন্ধনে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছেছিল ২৭ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।’

বর্তমান পৌর মেয়র রমজান আলীও নির্বাচিত হয়ে খাল খননে দরপত্র আহ্বান করেছেনন। তিনি আশা করছেন, প্রকল্পটি যদি সুষ্ঠভাবে বাস্তবায়ন হয় তবে পৌরবাসী এর সুফল পাবেন।

সারাবাংলা/এমও

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন