June 10, 2022 | 4:21 pm
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা: আন্তর্জাতিক বাজারে টালমাটাল অবস্থার কারণে দেশের বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়েছে। গমের দাম বেড়ে যাওয়ায় চাপ বেড়েছে চালের ওপর। দেশের মানুষের, বিশেষ করে শহরের চাকরিজীবীদের অনেক কষ্ট হচ্ছে। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়লেও দেশে খাদ্যের জন্য হাহাকার নেই।
শুক্রবার (১০ জুন) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক এসব কথা বলেন। রীতি অনুযায়ী সংসদে বাজেট উত্থাপনের পরদিন এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এতে উপস্থিত রয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক এক প্রশ্নের উত্তরে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এটা স্বীকার করে নিচ্ছি যে চালের দাম বেড়েছে। এখন যে চালের দাম বেড়েছে, সেটি মূলত চিকন চাল— ৬৫-৬৬ টাকায় বা ৭০ টাকা পর্যন্ত কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। কারণ এখন সবার মধ্যেই চিকন চাল খাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়েছে। কিন্তু মোটা চালের দাম কিন্তু এখন এখনো প্রতি কেজি ৪৩-৪৪ টাকা।
আরও পড়ুন-
বাংলাদেশের মানুষ অন্যান্য দেশের মানুষের তুলনায় চাল বেশি খায়— এমন তথ্য জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের মানুষ জনপ্রতি গড়ে ৪১৭ গ্রাম করে চাল খেত। এর পরিমাণ এখন ৩৭০ গ্রামে কমে এসেছে। কিন্তু এই পরিমাণটিও অন্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি। জাপানসহ বিশ্বের কোনো দেশেই পার ক্যাপিটা চালের কনজাম্পশন ২০০ গ্রামের বেশি নেই। তাই চালের ব্যবহার নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। বরং দুধ, ডিম, মাছ, মাংসের মতো পুষ্টিকর খাবারের ব্যবহার বাড়াতে হবে। মানুষ যেন পুষ্টিকর খাবার খেতে পারে, আমরা সেটি নিয়ে কাজ করছি।
মানুষের ক্রয়ক্ষমতার কথাও তুলে ধরেন মন্ত্রী। বলেন, বাজারে ৬৫ টাকা কেজি দরের যে চাল আছে, সেটি কিন্তু অনেক কোম্পানি বাজারজাত করছে সুন্দর প্যাকেট করে। ফ্রেশ, এসিআই, স্কয়ার, এমনকি ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো— সবাই সুন্দর মোড়কজাত করে চাল বিপণন করছে। এত সুন্দর প্যাকেট, দেখে মনে হয় ইউরোপ-আমেরিকার কোনো দোকান। তারা চাল বিক্রি করছে ৮২ টাকা করে। তারাও বলছে, এ ধরনের সরু চালের কিন্তু অনেক চাহিদা রয়েছে। মানুষ এখন বাড়তি দামের এই চাল অ্যাফোর্ড করতে পারে।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের কষ্ট হচ্ছে— এ তথ্য স্বীকার করে নিয়েও ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। পণ্যের দাম নিয়ে অনেক অভিযোগ আছে। সবই সত্য। বিশেষ করে শহরের মানুষ, যারা চাকরি করে জীবিকা নির্বাহ করেন, তাদের বেশি কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু দেশে অন্তত খাবারের জন্য কোনো হাহাকার নেই।
সরকার এ পরিস্থিতিতে নানা ধরনের ভর্তুকি দিয়ে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে বলেও জানান কৃষিমন্ত্রী। তিনি বলেন, পটাশিয়াম সারের দাম ছিল প্রতি টন ৩০০ থেকে ৩৫০ ডলার। সবশেষ ক্রয়সংক্রান্ত কমিটির বৈঠকে এই সার কেনার জন্য প্রতি টন ১২০০ টাকা দর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। দাম বেড়ে কিন্তু চার গুণ হয়ে গেছে। আরও অনেক কিছুর দামেই বেড়েছে। কিন্তু সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে। আমরা কেবল ভর্তুকিতেই ২৪ হাজার কোটি টাকা খরচ করেছি। এই ভর্তুকির সুবিধা কিন্তু সরাসারি পাচ্ছেন কৃষকরা, গ্রামের মানুষরা।
তিনি বলেন, এই ভর্তুকি না দিলে অবস্থা কী দাঁড়াত? কৃষির উৎপাদন কমে যেত। কৃষকরা, সাধারণ মানুষরা নানা ধরনের সংকটে পড়ত। মানুষজন জিনিসপত্র কিনতে পারত না। সেই অবস্থা কিন্তু আমরা প্রতিরোধ করে আসছি। আমাদের বিজ্ঞানীরা নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন করছেন। সরকার সেগুলোতে প্রণোদনা দিচ্ছে। এবার আমরা ১৫ টাকা কেজি দরে ৫০ লাখ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেবো। অর্থাৎ আড়াই কোটি মানুষকে এই সহায়তা দেওয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আরও রয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবীর, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, অর্থ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন।
আরও পড়ুন-
সারাবাংলা/জিএস/টিআর