বিজ্ঞাপন

পুলিশ কনস্টেবলকে চাপা দেওয়া বাসটির রুট পারমিট ছিল না: র‌্যাব

June 11, 2022 | 7:11 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: রাজধানীর বাংলামোটর এলাকায় পুলিশ সদস্য কোরবান আলীকে চাপা দেওয়া বাসটির রুট পারমিট ছিল না বলে জানিয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। শুক্রবার (১০ জুন) বাসটির চালক ও মালিককে গ্রেফতার করা হয়।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (১১ জুন) কারওয়ান বাজার মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, গত ৬ জুন রাজধানীর বাংলামোটরে পুলিশ কনস্টেবলকে চাপা দেওয়া ওয়েলকাম পরিবহনের সেই বাসটির চালক জাকির হোসেনকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও বাসের মালিক আলম খোকাকে সাভার থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

ওই দিন কনস্টেবল কোরবান আলী বাসা থেকে মোটরসাইকেল যোগে কর্মস্থল রাজারবাগ যাচ্ছিলেন। পরে স্থানীয়রা এবং টহলরত পুলিশ কোরবান আলীকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

বিজ্ঞাপন

ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় সড়ক পরিবহন আইনে একটি মামলা করে। এ পরিপ্রেক্ষিতে র‌্যাব জড়িতদের আনতে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে এবং গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।

স্থানীয় তদন্ত এবং এজাহার সূত্রে জানা যায় যে, বাস চাপায় নিহত ব্যক্তি কোরবান আলী (৩৫) বাংলাদেশ পুলিশের একজন সদস্য। তিনি রাজারবাগ পুলিশ টেলিকমে কর্মরত ছিলেন। তিনি ২০০৫ সালে বাংলাদেশ পুলিশে কনস্টেবল পদে যোগ দেন। ঘটনার দিন নিহত কনস্টেবল কোরবান আলী নিজ বাসা হতে প্রতিদিনের মতো অফিসের উদ্দেশ্যে মোটরসাইকেলযোগে রওনা দেন এবং বাংলামোটরে নির্মম দুর্ঘটনার শিকার হন।

গ্রেফতার জাকিরকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সে ২০০৫ সালে ঢাকায় টেম্পুর হেলপার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করে। এরপর দীর্ঘদিন হেলপার থাকার পর ২০১০ সালের দিকে সে গাজীপুর থেকে চন্দ্রা পর্যন্ত লেগুনা চালাতো। পরবর্তীতে ২০১৫ সালে বাসের হেলপার হিসেবে ঢাকায় ৭ ও ৮ নং রোডে চলাচলকারী বাসে চাকরি নেয়। সে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বর্ণিত কোম্পানির ২টি বাসে হেলপার ও কন্ট্রাক্টরের কাজ করে। পরবর্তী সময়ে ২০১৮ সাল থেকে লাব্বাইক ও ওয়েলকাম ট্রান্সপোর্টে ড্রাইভার হিসেবে নিযুক্ত হয়ে কাজ করছিল। এরপর সে বিভিন্ন কোম্পানির বাসে অস্থায়ী চালক হিসেবে বাস চালাত। এরপর ২০১৯ সালে বিআরটিএ হতে হালকা যানবাহন চালনার লাইসেন্স করে। প্রায় এক মাস পূর্বে বর্তমান গাড়ির মালিকের সঙ্গে জাকিরের পরিচয় হয়।

বিজ্ঞাপন

গত মে মাসে মাঝামাঝি থেকে ওয়েলকাম ট্রান্সপোর্ট প্রা. লিমিটেডের বাস মালিকের সঙ্গে দৈনিক ২৫০০ টাকা চুক্তিভিত্তিক হারে জিরানি বাজার থেকে আরামবাগ রুটে বাস চালানো শুরু করে। অবশিষ্ট টাকা চালক এবং হেলপার ভাগ করে নিত।

ঘটনার দিন সে সাভার জিরানি বাজার থেকে আরামবাগ যাওয়ার পথে কারওয়ান বাজার সিগন্যাল থেকে যাত্রী নিয়ে পরবর্তী সিগন্যালে অধিক সংখ্যক যাত্রী নেওয়ার জন্য বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালাতে থাকে। এ সময় তার সামনে থাকা মোটরসাইকেল আরোহীকে চাপা দিয়ে দ্রুত গতিতে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এরপর বাংলামোটরে গাড়ি রেখে পালিয়ে যায়। সাধারণ মানুষ চালককে আটক করতে গেলে সে দৌড়ে পাশে কোথাও লুকিয়ে থাকে এবং কিছুক্ষণ পর সে অপর একটি বাসে করে ফার্মগেট চলে আসে। বাসে ওঠে। সে তার মোবাইল থেকে তার হেলপারকে কল দিলে হেলপার জানায় বাসের নিচে চাপা পড়া লোকটি সম্ভবত মারা গিয়েছে। পরবর্তীতে বাস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি অবহিত করে। সে সারাদিন ঢাকার বিভিন্ন এলাকা বিচ্ছিন্নভাবে ঘোরাঘুরি করে রাতে বাসযোগে চট্টগ্রামে যায় এবং সেখানে আত্মগোপন করে। এরপর চট্টগ্রাম থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আত্মগোপন করে। বাস চালক জাকিরের পরিকল্পনা ছিল সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে অবৈধভাবে পালিয়ে যাওয়া।

অপর আসামি বাসের মালিক মো. আলম খোকাকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, সে ২০১৭ সালে পরিবহণ ব্যবসা শুরু করে। প্রথমে কিস্তির মাধ্যমে একটি বাস ক্রয় করে জিরানি টু মতিঝিল রুটে চলাচল করাত। সে ২০২০ সালে আরেকটি গাড়ি ক্রয় করে রুট পারমিট ব্যতীত অবৈধভাবে গাড়িটি চলাচল করাত। পরবর্তীতে রুট পারমিটের জন্য আবেদন করে কিন্তু এখনও পারমিট পায়নি। পারমিট না থাকা সত্ত্বেও গত দুই বছর ধরে গাড়িটি রাস্তায় চলাচল করছিল। দুর্ঘটনা পরবর্তীতে সে তার স্টাফের কাছে জানতে পারে যে তার নামে মামলা হয়েছে। এরপর গ্রেফতার এড়াতে সে সাভারে আত্মগোপনে চলে যায়। গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/ইউজে/একে

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন