বিজ্ঞাপন

শিয়া বানিয়ে নারী পাঠাচ্ছে ইরানি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবৈধ শাখা

June 13, 2022 | 11:01 pm

উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ১৪ বছর ধরে ইরানের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবৈধ শাখা খুলে বাংলাদেশে শিক্ষা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। যার নেই কোনো ইউজিসি অনুমোদন। অভিযোগ উঠেছে, আল মুস্তাফা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শাখার কাজ হলো সুন্নি থেকে শিয়া বানিয়ে ইরানে নারী পাঠানো। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলে ছাত্রীদের জন্য রয়েছে বিশেষ ছাড়। কোনো ছাত্রী ভর্তি  হওয়ার পর শিয়া হলে তার থাকা-খাওয়া সম্পূর্ণ ফ্রি।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলার অনুসন্ধানে ইরানি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি অবৈধ শাখার এমন নানান অপরাধ উঠে এসেছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অবৈধ শাখা পরিচালনায় রয়েছেন আশরাফ উদ্দিন খান (মীর আশরাফ), মাঈন উদ্দিন এবং শাহনাজ আরেফিন। এদের ড্রাইভার দেলোয়ার হোসেন গাড়ি চালানোর পাশাপাশি দায়িত্ব পালন করেন স্টুডেন্ট অ্যাডমিশন কাউন্সিলর হিসেবে। কেউ ভর্তি হতে চাইলে তাকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেন ড্রাইভার দেলোয়ার হোসেন।

এই ঠিকানায় পরিচালিত হচ্ছে আল মুস্তাফা ইউনিভার্সিটির কার্যক্রম

এই ঠিকানায় পরিচালিত হচ্ছে আল মুস্তাফা ইউনিভার্সিটির কার্যক্রম

অনুসন্ধানে জানা যায়- রাজধানীর ধানমন্ডি ৭/এ সড়কের ৫৮ নম্বর ‘বন্ধন‘ নামে বাড়িটিতে আল মুস্তাফা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বর্তমান ক্যাম্পাস। তবে বাইরে থেকে দেখে বোঝার কোনো উপায় নেই। কেননা ভেতরে ‘শিক্ষাযজ্ঞ’ চললেও বাইরে নেই কোনো সাইনবোর্ড। এভাবে ১৪ বছর ধরে গোপনে কার্যক্রম চালিয়ে আসছে কথিত আল মুস্তাফা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বাংলাদেশ শাখা।

আশরাফ উদ্দিন আল মুস্তাফা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বাংলাদেশ ইনচার্জ

আশরাফ উদ্দিন আল মুস্তাফা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বাংলাদেশ ইনচার্জ

এর আগে, অবৈধ ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠাকালে ক্যাম্পাসের অবস্থান ছিল কলাবাগান এলাকায়। এর পর ক্যাম্পাস সরিয়ে বারিধারায় নেওয়া হয়। সেখান থেকে ধানমন্ডির ৪ নম্বর সড়কে স্থানান্তর করা হয়। এর পর গত জানুয়ারি থেকে বর্তমান ঠিকানা রবীন্দ্র সরোবরের উল্টো দিকে পাঁচতলা বাড়িটিতে ক্যাম্পাস চালু হয়েছে। পুরো বাড়িটির জন্য মাসে ভাড়া দিতে হয় চার লাখ টাকা।

বিজ্ঞাপন

অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, অবৈধ এই ক্যাম্পাসটির ইনচার্জ আশরাফ উদ্দিন। তার দাবি, সিটি করপোরেশন থেকে ফারসি ভাষা শিক্ষার লাইসেন্স নিয়ে চালানো হচ্ছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা। এটি বিশ্ববিদ্যালয় নয়, তবে আল মুস্তাফা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে কেউ ভর্তি হতে চাইলে তারা সহযোগিতা করে থাকেন।

ধানমন্ডির ওই ভবনটির চতুর্থ তলায় মেয়েদের একটি হোস্টেল রয়েছে। ফারসি ভাষার কথিত শিক্ষক শাহনাজ আরেফিন ওই হোস্টেলটির ইনচার্জ। পঞ্চম তলায় অতিথিদের থাকার জন্য করা হয়েছে আবাসিক রুম। ভিজিট ভিসায় এসে একজন ইরানিয়ান সেখানে বাস করছেন। ভবনটির নিচতলায় তলায় রয়েছে রিসিপশন ও নামাজের জায়গা। দ্বিতীয় তলায় অফিস। তৃতীয় তলায় ক্যাম্পাস।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বিগত ১৪ বছর ধরে ঢাকার এই ক্যাম্পাস শিক্ষার্থী ভর্তি করে সার্টিফিকেট দিয়ে আসছে। যা আদৌ কোনো কাজে লাগে না। আল মুস্তাফা ইউনিভার্সিটি থেকে পাওয়া সনদের ওপর বাংলাদেশ সরকারের কোনো বৈধতা নেই। ফলে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করে এলেও চাকরির বাজারে ঢুকতে পারেন না কেউ।

বিজ্ঞাপন

শুরুর দিকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র এবং ছাত্রী উভয়ই ভর্তি হতে পারত। তবে এখন ছাত্র ভর্তি বন্ধ রেখেছে বাংলাদেশি শাখা কর্তৃপক্ষ। আবার এই বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে ক্রেডিট ট্রান্সফার করে যারা ইরানে গেছেন তাদের মধ্যে ছাত্রের সংখ্যা খুবই কম। যারা গেছেন তাদের বেশিরভাগই ছাত্রী। অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত বছর করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও ঢাকা থেকে অন্তত ১০ জনকে ইরানে পাঠানো হয়েছে। এভাবে প্রতিবছরই লেখাপড়ার নামে বাংলাদেশ থেকে ইরানে ছাত্রী পাঠানো হচ্ছে।

ভর্তির আগে বলা হয়, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিয়া এবং সুন্নী মতাবলম্বী উভয়ই ভর্তি হতে পারবেন। তবে কেউ সুন্নী হলে তাদের পড়াশোনার যাবতীয় খরচ নিজেকে বহন করতে হয়। আর শিয়া হলে তাদের পড়াশোনা বাবদ কোনো টাকা দিতে হবে না। বরং থাকা খাওয়াও ফ্রি। আবার শিয়া হলে ইরানে গিয়েও কোনো খরচাদি বহন করতে হয় না। এ কারণে এসব সুযোগ সুবিধা নেওয়ার জন্য নারী শিক্ষার্থীদের শিয়া মতাবলম্বী হওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়। দুয়েকজন ছাড়া বেশিরভাগই শিয়া মতালম্বী হয়ে ইরানে যান। ইরানে পড়াশোনা শেষ করে কেউ সেখানে থেকে যান। কেউ সেখান থেকে পালিয়ে যান। আবার কেউ দেশে ফিরে এসে শিয়া নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন অথবা বেকার হয়ে ঘুরে বেড়ান।

ইনি মাঈন উদ্দিন। তিনি আল মুস্তাফা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষক

মাঈন উদ্দিন। তিনি আল মুস্তাফা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষক

অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে পড়াশোনার নাম করে ইরানে নেওয়ার পর বাংলাদেশি এক নারী তাদের নিয়ন্ত্রণ করেন। বাংলাদেশে আড়াই বছর পড়াশোনার পর ইরানে দুই বছর পড়াশুনাকালে ওই নারী নিয়ন্ত্রণ করেন। ওই নারীর নাম যিনাত ফেরদৌস। তিনি ঢাকার ক্যাম্পাস ইনচার্জ আশরাফের বোন।

সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়টির অবৈধ শাখা বন্ধ করতে উকিল নোটিশ পাঠিয়েছেন প্রতারণার শিকার ড. সামিউল হক সরকার নামে এক ব্যক্তি। অবিলম্বে শাখাটি বন্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে ইউজিসির কাছে অনুরোধও করেছেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

ড. সামিউল হক সরকার ইউজিসির কাছে করা অভিযোগে বলেন, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের শিক্ষা নগরী ‘কোম’ এর সবচেয়ে প্রসিদ্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘আল মুস্তাফা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি’ থেকে তিনি (প্রিলি-সম্মান-স্নাতকোত্তর-এমফিল পিএইচডি) শিক্ষাগ্রহণ সম্পন্ন করেছেন। শুধু তাই নয়, তৎকালীন সময়ে অর্থাৎ, ২০১৫ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিনি ওই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের ৩ (তিন) রাষ্ট্রের জন্য নির্বাচিত সভাপতি ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ, নেপাল এবং শ্রীলংকা- এই তিন রাষ্ট্রের ছাত্রদের দিক নির্দেশনা দিতেন। তিনি ২০১৯ সালে ওই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি বাংলাদেশে ফেরত আসেন এবং এই অবৈধ শাখায় খণ্ডকালীন অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। কিছুদিন পর তিনি বুঝতে পারেন, এই শাখার কর্তৃপক্ষ এবং সব শিক্ষক একেবারেই ধর্মীয় জ্ঞানশূন্য। শুধু তাই নয়, তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়ে ছড়ানো তথ্য এবং বাস্তবতার মধ্যে মিল নেই। বিগত ১৪ বছর ধরে তারা বাংলাদেশ সরকারের কাছে তথ্য গোপন করে, চুপিসারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখাটি চালিয়ে আসছেন।

সামিউল জানান, এই শাখা থেকে বেছে বেছে সুন্দরী মেয়েদের কৌশলে ইরানে পাচার করা হয়। তিনি জঙ্গি সংগঠনের মদদ দেওয়ার মতো স্পর্শকাতর তথ্যের ব্যাপারেও সন্দেহ পোষণ করেন।

জানা গেছে, ধানমন্ডির ওই ছোট বাড়িটির ভেতরে ও বাইরে অসংখ্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তির চলমান ক্যামেরা আছে। আর সেই বাড়িতেই টিনেজার ও তরুণী থেকে সদ্য যুবতী হওয়া মেয়েদের দুই বৎসর বিনামূল্যে থাকা এবং খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তারপর তাদের ইরানে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে। সেখানে গিয়েও তারা বিনামূল্যে থাকবে, খাবে। পাশাপাশি পড়াশোনা করে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে ডিগ্রি অর্জন করতে পারবে। এমনকি তাদের ক্যারিয়ারের নিশ্চয়তাও দেওয়া হয়ে থাকে। তাদের দেওয়া ক্যারিয়ারের নিশ্চয়তা যে একটি নিশ্চিত প্রতারণা, তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ড. সামিউল হক।

তিনিই ‘আল-মুস্তাফা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি’ থেকে প্রথম পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করা বাংলাদেশি নাগরিক। অথচ তাকে বাদ দিয়ে ইন্টারমিডিয়েট পাস করা অযোগ্য লোকজন দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠদান করানো হচ্ছে।

উকিল নোটিশে উল্লেখ করা হয়, এটি একটি নারী পাচারকারী চক্র তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ বাংলাদেশের কোথাও এক জন ছেলের জন্য তথাকথিত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এক বেলা বিনামূল্যে থাকা খাওয়ার কোনো ব্যবস্থা করেনি।

ওই অভিযোগে ড. সামিউল হক বলেন, “নারী কেলেঙ্কারির একটি বিষয়ে ব্যাপকভাবে জনশ্রুতি আছে যে, অবৈধ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনচার্জ আশরাফের ছোট বোন যিনাত ফেরদৌস ইরান রাষ্ট্রের প্রভাবশালী মোল্লাদের সঙ্গে তথাকথিত ‘মোতা-বিবাহ’ নামক চুক্তিভিত্তিক যৌন বাণিজ্য করে থাকেন। যদিও অফিশিয়ালি তিনি একজন কুমারী। আর শিয়া সম্প্রদায়ের ফতোয়া অনুযায়ী কুমারী মেয়ে কোনো অবস্থাতেই ‘মোতা-বিবাহ’ করতে পারে না।”

উকিল নোটিশে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়, যিনাত ফেরদৌসের সাঙ্গপাঙ্গরা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কোনো বিদেশি অপশক্তির এজেন্ট হিসেবে কাজ করতে পারেন। তারা সুইসাইড স্কোয়াড তৈরি করতে পারেন, জঙ্গি সংগঠন তৈরি করতে পারেন, এক কথায় বাংলাদেশের নিরাপত্তাও বিক্রি করে দিতে পারেন। কেননা, এই আন্তর্জাতিক অবৈধ চক্রের নেতাদের কেউই বাংলাদেশি নন। বাংলাদেশের প্রতি দেশপ্রেম থাকা তাদের জন্য অপরিহার্য নয়। বরং যাবতীয় অপরাধযজ্ঞের নমুনা দেখে তাদের ধর্মব্যবসায়ী যৌনবুভুক্ষ পুরোহিত শ্রেণি বলেই মনে হয়। বিজ্ঞ মহল অবগত আছেন যে, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান রাষ্ট্র তার সীমান্তের বাইরে বেশ কিছু মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে তাদের অনুসারীদের দিয়ে প্রক্সি-ওয়ার পরিচালনা করে থাকে। পথভ্রষ্ট শিয়া-সুন্নির অন্তর্দ্বন্দ্বে পৃথিবীর বহু দেশেই নিরীহ মানুষের রক্ত ঝরছে এবং সেখানকার অর্থনীতি ধ্বংসপ্রাপ্ত হচ্ছে। অতএব, দুধ-কলা খাইয়ে সাপের বাচ্চাদের প্রতিপালন করা নিতান্তই আত্মঘাতী ছাড়া আর কিছুই নয়।

উকিল নোটিশে উল্লেখ করা হয়, মাঝে মাঝে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান রাষ্ট্র থেকে টুরিস্ট ভিসা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নাম ধারণ করে কিছু ইরানি নাগরিক এসে ওই বাড়িতেই বসবাস করেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টিও তারা বাংলাদেশ সরকারের সব কর্তৃপক্ষের কাছে গোপন করে রাখেন। তারা চুপিসারে এদেশে আসেন এবং চুপিসারেই দেশ ত্যাগ করেন। আর ওইসব বিদেশি ইরানী নাগরিকদের সঙ্গে সরাসরি গোপন বৈঠকগুলো করেন ধানমন্ডি আবাসিক এলাকায় অবস্থিত ইরানী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কাউন্সিলর ড. সৈয়দ হাসান সেহাত।

উকিল নোটিশে আরও উল্লেখ করা হয়, বাদী একজন শিয়া সম্প্রদায়ের শান্তিপ্রিয় মানুষ এবং তিনি পবিত্র কোরআনের একজন সম্মানিত মোফাসসের। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করছেন যে, ওই অবৈধ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ যদি কখনো নারী পাচারকারী অথবা জঙ্গি সংগঠনের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে যান, তবে তা বাংলাদেশে বসবাসকারী সংখ্যালঘু শিয়া সম্প্রদায়ের জন্য মহা বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এতে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং সেটি খুব দ্রুত গণহত্যায় রূপ ধারণ করতে পারে। অতএব, দুর্ঘটনা ঘটার আগেই তা থামানো অতি আবশ্যক।

কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে ক্যাম্পাস ইনচার্জ আশরাফ উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের এখানে সুন্নী ও শিয়া দুই মতবাদেই পড়াশোনা করানো হয়। সুন্নী লাইনে পড়াশোনা করতে হলে টিউশন ফি দিতে হয়, তবে শিয়া লাইনে পড়াশোনা করলে কোনো ফি লাগে না। বরং থাকা-খাওয়া ফ্রি।’

তিনি আরও বলেন, ‘১২০টির মতো সাবজেক্ট আছে মুস্তাফা ইউনিভার্সিটিতে। আমরা আড়াই বছর ঢাকাতে পড়াই। পরে ক্রেডিট ট্রান্সফারের মাধ্যমে ইরানে যেকোনো সাবজেক্টে ভর্তি হওয়া যায়। ভিসা খরচ ও বিমান ভাড়া শুধু শিক্ষার্থীকে বহন করতে হয়।’

অবৈধ কার্যক্রমের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা ইউজিসির কাছে আবেদন করেছি। কিন্তু ইউজিজি অনুমোদন দিচ্ছে না। বাংলাদেশে মদিনা ইউনিভার্সিটি, আল আজহার ইউনিভার্সিটিরও অনুমোদন নেই। আমাদের তো পেট চালাতে হবে। আল মুস্তাফার সার্টিফিকেট বাংলাদেশে অনুমোদিত নয়। ফলে চাকরির বাজারে এই সার্টিফিকেট কোনো কাজে আসে না’ বলেও উল্লেখ করেন মীর আশরাফ। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আল মুস্তাফার এক ছাত্র এমফিল করার জন্য প্রপোজাল জমা দিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেটি গ্রহণ করেছে বলে দাবি আশরাফ উদ্দিন খানের।

২০১১ সাল থেকে আল মুস্তাফা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ভাঙিয়ে জার্নাল প্রকাশ করেছে। সম্পাদনায় ছিলেন আশরাফ উদ্দিন খান ও মঈন উদ্দিন। ওই জার্নালে ‘বাংলাদেশ শাখা’ লেখা রয়েছে। করোনা পরিস্থিতির ধকল কেটে গেলে আবারও নতুন করে প্রকাশ করা হবে জার্নাল। এ বিষয়ে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের কথিত শিক্ষক মাঈন উদ্দিন বলেন, ‘করোনার কারণে জার্নাল প্রকাশ বন্ধ রয়েছে। শিগগিরই জার্নালের নতুন সংখ্যা প্রকাশ করা হবে।’

ছবিতে শাহনাজ আরেফিন, যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও মেয়েদের হোস্টেল ইনচার্জ

শাহনাজ আরেফিন, যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও মেয়েদের হোস্টেল ইনচার্জ

শাহনাজ আরেফিন। একাধারে হোস্টেল ইনচার্জ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষার শিক্ষক। তার সাবেক স্বামী ইরান দূতাবাসে কর্মরত। শাহনাজ আরেফিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘ইরানিয়ান কালচালাল সেন্টারে চাকরি করি আমি। পাশাপাশি আল মুস্তাফা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ভাষা কোর্স করাচ্ছি। আমার সম্পর্কে জানতে হলে ইরানিয়ান কালচালার সেন্টারে যোগাযোগ করতে হবে।’

বাংলাদেশে আল মুস্তাফা ইউনিভার্সিটির অনুমোদন আছে কি না? জানতে চাইলে শাহনাজ আরেফিন বলেন, ‘এটি আমি জানি না। আমি চাকরির অফার পেয়েছি তাই ঢুকেছি। এটির অনুমোদন আছে কি না সেটির ব্যাপারে অফিস বলতে পারবে।’

ছাত্রীদের হোস্টেল তদারকিতে ব্যস্ত শাহনাজ আরেফিন। ইউনিভার্সিটির অবৈধ ক্যাম্পাসে দায়িত্ব পালনকালে তোলা ছবি

ছাত্রীদের হোস্টেল তদারকিতে ব্যস্ত শাহনাজ আরেফিন। ইউনিভার্সিটির অবৈধ ক্যাম্পাসে দায়িত্ব পালনকালে তোলা ছবি

ইরানিয়ান কালচালারের সেন্টারের ইনচার্জ আসিফ বলেন, ‘ইরানিয়ান কালচারাল সেন্টারে স্বল্পমেয়াদী ভাষার কোর্স আছে। সেখানে খণ্ডকালীন কোর্স পড়ান শাহনাজ আরেফিন। তিনি এই সেন্টারের স্থায়ী কোনো চাকুরে নন। তার সঙ্গে ইরানিয়ান কালচারাল সেন্টারের কোনো যোগসূত্র নেই।’

আল মুস্তাফা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অবৈধ কার্যক্রম বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসির প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক ওমর ফারুক সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশে তিনটি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন আছে। এর বাইরে আর কাউকে অনুমতি দেওয়া হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘আল মুস্তাফা ইউনিভার্সিটির কার্যক্রম সম্পর্কে আমরা অবগত নই। নাম-ঠিকানা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’

সারাবাংলা/ইউজে/একে/পিটিএম

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন