বিজ্ঞাপন

নাশকতার তথ্য, পদ্মা সেতুর উদ্বোধন ঘিরে সতর্ক থাকার নির্দেশ

June 15, 2022 | 3:10 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বিরোধিতাকারীরা যাতে কোনরকম ধ্বংসাত্বক কর্মকাণ্ড চালাতে না পারে সে জন্য সশস্ত্র বাহিনীসহ সব বাহিনীকে সজাগ থাকার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে এত বড় একটা চ্যালেঞ্জ নিয়ে সেতু নির্মাণের কাজ আমরা সম্পন্ন করেছি। কিন্তু যারা সেতু নির্মাণের বিরোধিতা করেছিল তাদের একটা উদ্দেশ্য রয়েছে। যার কিছু কিছু তথ্যও আমরা পেয়েছি। আমরা জানতে পেরেছি, এমন একটা ঘটনা ঘটানো হবে যাতে ২৫ তারিখে আমরা উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করতে না পারি। বিরোধিতাকারীরা কী করবে তা কিন্তু আমরা জানি না।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (১৫ জুন) সকালে তার কার্যালয়ের (পিএমও) শাপলা হলে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স’র (এসএসএফ) ৩৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে উপস্থিত তিন বাহিনীর প্রধান, পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি এবং আনসার ও ভিডিপি’র প্রধানদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমাদের সবাইকে কিন্তু সতর্ক থাকতে হবে। সমস্ত বিষয়টাই একটু রহস্যজনক। এ জন্য সবাইকে বলব, একটু সতর্ক থাকতে হবে এবং আমাদের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার দিকেও সবাইকে নজর দিতে হবে। সেগুলোর নিরাপত্তা দিতে হবে।’

সরকার প্রধান বলেন, ‘ভুয়া দুর্নীতির অভিযোগ তুলে এ দেশের ব্যক্তি বিশেষের প্ররোচনায় বিশ্ব ব্যাংক পদ্মা সেতু নির্মাণে অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়। তখন আমাদের সরকার ঘোষণা দিয়েছিল, নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু করব, না হলে করব না। সরকার সেই পদ্মা সেতু নিজেদের অর্থে নির্মাণ করেছে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে আপনারা দেখেছেন রেলে আগুন, লঞ্চে আগুন, ফেরিতে আগুন এমনকি সীতাকুণ্ডে যে আগুনটা সেটা একটা জায়গা থেকে লাগতে পারে, কিন্তু বিক্ষিপ্তভাবে কয়েকটা জায়গায় আগুন লাগে কীভাবে। আর রেলের আগুনের বিষয়ে একটি ভিডিও পাওয়া গেছে। যেখানে দেখা গেছে রেলের চাকার কাছে আগুন জ্বলছে। সেটা কী করে সম্ভব!’ সে প্রশ্নও তোলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী জানান, তার সরকার গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তিকে মানুষের নাগালের মধ্যে এনে যে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছে। কিন্তু এসবের সুযোগ নিয়ে সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদ সৃষ্টির অপপ্রয়াস সম্পর্কেও সকলকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা যেমন একদিকে আমাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টি করেছে, অপরদিকে এই আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করেই সন্ত্রাসী এবং জঙ্গি গোষ্ঠী তাদের তাদের নানা কর্মকাণ্ড পরিচালিত করে থাকে।’ সেজন্য তার সরকার আধুনিক বিশ্ব এবং যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এসএসএফসহ অন্যান্য বাহিনীগুলোকে প্রযুক্তিনির্ভর করে শক্তিশালীভাবে গড়ে তুলছে বলে উল্লেখ করেন সরকার প্রধান।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে এবং সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকেও দমন করতে হবে। বিভিন্ন বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কারণেই সরকার সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমন এবং নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমাদের আরও সতর্ক থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে আমরা যখন এগিয়ে যাব তখনই এ ধরনের ঘটনা কোনো না কোনো মহল ঘটনানোর চেষ্টা করবে। এটাই আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যের বিষয়। সে জন্য সবাইকে আমি সতর্ক থাকার আহ্বান জানাই।’

সরকার প্রযুক্তি শিক্ষায় বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে উল্লেখ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘হাইটেক পার্ক করে দিচ্ছি। কম্পিউটার ল্যাব করে দিয়ে প্রযুক্তি শিক্ষার দিকে নজর দিয়েছি। পাশাপাশি স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। রাজধানীবাসীর চলাচল সুবিধার জন্য মেট্রোরেল প্রকল্পও আজকে দৃশ্যমান। এছাড়া এক্সপ্রেসওয়ে হচ্ছে। চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিতে হবে।

সরকার প্রধান বলেন, “পদ্মা সেতু নিয়ে একটা মিথ্যা অপবাদ আমাদের দিয়েছিল। দুর্ভাগ্য, আমাদের একজন স্বনামধন্য মানুষ, যাকে আমি সবচেয়ে বেশি সুযোগ-সুবিধা দিয়েছিলাম, সেই ড. ইউনূস বেঈমানি করেছেন। গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদে থাকতে না পেরে তিনি এ কাজ করেছেন। তিনি তার বন্ধু তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের স্বামীর ‘ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে’ তিন লাখ ডলার ডোনেশনও দিয়েছিলেন।”

বিজ্ঞাপন

শেখ হাসিনা জানান, হিলারি ক্লিনটন তাকে ফোনও করেছেন। তার কাছে ধর্ণাও দেন এবং যাকে তিনি আইনের কথা বলেছিলেন। অন্যদিকে, পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি হয়েছে বলে তারা বিশ্ব ব্যাংকের কাছে বার বার মেইল পাঠিয়েছেন। কিন্তু তিনি বলেছিলেন, দুর্নীতির প্রমাণ দিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম যে, দুর্নীতি প্রমাণ করতে হবে। পরে কানাডার আদালতে এটা ভুয়া প্রমাণ হয়েছে। কিন্তু ড. ইউনুসের প্ররোচনায় বিশ্ব ব্যাংক অর্থায়ন থেকে সরে দাঁড়ায়। আমরা বলেছিলাম, নিজের টাকায় পদ্মা সেতু করব। খুব স্বাভাবিকভাবে অনেকেই ভেবেছিল, এটা বোধ হয় আমরা কোনোদিন করতে পারব না। কিন্তু আল্লাহর রহমতে আমরা কিন্তু সেটা করে ফেলেছি।’

একজন রাজনীতিকের কাছে জনগণই তার ‘প্রাণ শক্তি’ এ কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে জোর করে দেশে ফিরে আসার পর থেকে বার বার হত্যা প্রচেষ্টার শিকার হয়েছি। আল্লাহর রহমতে এবং দলের নেতাকর্মীদের সৃষ্ট মানবঢালে প্রাণে রক্ষা পেয়েছি।‘ শেখ হাসিনা বলেন, ‘গুলি ও বোমার মুখে পড়েছি। আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়েছেন। হয়তো আল্লাহ আমাকে দিয়ে কোনো কাজ করাবেন, এ জন্য বাঁচিয়ে রেখেছেন।’

তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা হত্যাকাণ্ডের বিচার এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে পেরেছিলেন বলেই দেশ আজ অভিশাপ মুক্ত হয়েছে এবং দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। এটাই সব সময় মাথায় রাখতে হবে যে, পেশাগত দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি চারিত্রিক দৃঢ়তা, সততা শৃঙ্খলা সবকিছু মেনেই চলতে হবে। আমাদের এসএসএফ সে ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন।’

তিনি আরও বলেন, ‘তবে একটা কথা মনে রাখতে হবে, আমরা রাজনীতি করি জনগণের জন্য। জনগণের সঙ্গে একটু কথা বলা, জনগণের সঙ্গে একটু মেশাও কাজ। এটাই আমাদের শক্তি। আর কোনো শক্তি কিন্তু নেই। বিরোধীদলে যখন ছিলাম মানুষকে কী দিতে পেরেছি? দিতে পেরেছি একটু কথা ও আস্থা। সেজন্য জনবিচ্ছিন্ন যেন না হয়ে পড়ি সেটা একটু দেখতে হবে। পানি থেকে মাছ তুলে ডাঙায় রাখলে যেরকম, আমরা যদি জনগণের সঙ্গে মিশতে না পারি তাহলে আমাদের অবস্থাও কিন্তু সেরকমই হয়ে যায়।’ তিনি বলেন, ‘জনগণই আমাদের প্রাণশক্তি। তাদের জন্যই আমার এ রাজনীতি।’

প্রধানমন্ত্রীত্ব নিজের কাছে ভোগের কোনো বস্তু নয় জানিয়ে শেখ হাসিনা জানান, তার বাবা অতীতে মন্ত্রী ছিলেন এবং তার নেতৃত্বে স্বাধীনতা অর্জনের পর স্বাধীন দেশে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীও হয়েছেন। কিন্তু তারা পাঁচ ভাই-বোন কখনোই ক্ষমতা ভোগ করার কথা চিন্তা করেননি। যা তাদের বাবা-মায়ের নির্দেশ ছিল। দীর্ঘ সময় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকার পরও তার পরিবারের সদস্যরা নিজেদের জীবন-যাপনের ধরনে কোনো পরিবর্তন আনেননি বলেও জানান তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীতে নারী সদস্য নিয়োগ আমরা শুরু করি। পুলিশে নারী সদস্য নিয়োগ জাতির পিতাই শুরু করেছেন।’ তিনি বলেন, ‘ভৌগলিক সীমারেখায় আমরা হয়তো ছোট। কিন্তু জনসংখ্যায় বড়। আমরা বড় হয়ে চলব, বিশ্বে মর্যাদা নিয়ে চলব। আমরা দেশটাকে সেভাবে গড়ে তুলতে চাই।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীন দেশ হিসেবে আমরা যে মর্যাদা পেয়েছি সেই মর্যাদা নিয়ে আমরা যেন মাথা উঁচু করে চলতে পারি। আজ আমরা উন্নয়নশীল দেশের যে মর্যাদা পেয়েছি তা নিয়েই যেন সামনে এগিয়ে যেতে পারি এবং দেশি-বিদেশি কোনো শক্তিই যেন এই অগ্রযাত্রায় বাধা সৃষ্টি করতে না পারে।’

জাতির পিতার করে দেওয়া পররাষ্ট্রনীতি ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ এই নীতি নিয়েই বাংলাদেশ আগামীতেও সামনে এগিয়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।

এসএসএফ’র মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) মো. মজিবুর রহমান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক এবং মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস এ সময় উপস্থিত ছিলেন। [সূত্র: বাসস]

সারাবাংলা/পিটিএম

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন