বিজ্ঞাপন

কানসাটে ৫৫ কেজিতে আমের মণ, অসহায় চাষিরা

June 17, 2022 | 11:44 pm

মো. আশরাফুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

চাঁপাইনবাবগঞ্জ: সারাজীবন ৪০ কেজিতে একমণ জানলেও অবিশ্বাস্য হলেও সত্য কানসাটে আমের মণ ৫২ থেকে ৫৫ কেজিতে। কাঁচামাল হওয়ায় সাধারণ সময়ে ৪০ কেজির স্থলে আড়ৎদারদের মাধ্যমে ৪৫ কেজিতে মণ হিসাব করতেন ব্যাপারিরা। এই বেশি নেওয়ার প্রবণতা বেড়ে চলেছে দিনদিন। ৪৫ থেকে ৪৮, ৪৮ থেকে ৫০, ৫০ থেকে ৫২, ৫২ থেকে ৫৫ কেজিতে এখন মন চাঁপাইনবাবগঞ্জের এবং দেশ ও বিদেশে আমের বড় বাজার নামে পরিচিত ঐতিহ্যবাহী কানসাট আমবাজারে।

বিজ্ঞাপন

কোনো কোনো আড়তে আবার ৬০ কেজিতেও মণ হিসাবের করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ আমচাষিদের। ৪০ কেজিতে আমের মন হলেও চাষিদের কাছ থেকে জোরপূর্বক এবং বাধ্য করে বর্তমানে প্রায় ১২ থেকে ১৫ কেজি আম বেশি নেওয়া হচ্ছে, কিন্তু চাষিদের বারবার অভিযোগের পরও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নীরব।

এই বেশি আমের সব সুবিধা ভোগ করেন বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ব্যাপারিরা। আর এসব ব্যাপারিদের সহযোগিতার নামে নিজের এলাকার চাষি বা ব্যবসায়ীদের আম দিয়ে দিচ্ছেন আড়ৎদাররা।

আম চাষি ও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, শুধু আম বেশি নিয়েই ক্ষান্ত নন এসব আড়ৎদাররা। রয়েছে আম বেছে ফেলা এবং টাকা পরিশোধের ক্ষেত্রেও নানা গড়িমসি। জেলার আম বাজার নিয়ন্ত্রণ বা সমস্যা সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট অনেক দফতর রয়েছে। কিন্তু কোন দফতরই বিষয়টিকে আমলে নিচ্ছেন না।

বিজ্ঞাপন

শুধু কানসাট বাজারেই নয়, জেলার রহনপুর, ভোলাহাট আম বাজারসহ বিভিন্ন আম বাজারেও ৫০ কেজির উপরে আমের মণ নেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে জেলার বিভিন্ন কৃষি ও আম ব্যবসায়ী সংগঠন রয়েছে। তাদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

আমচাষিরা জানান, তাদের জিম্মি করেই ৫০-৫২ কেজিতে একমণ ধরে আম কিনছেন আড়তদাররা। তাদের ইচ্ছেমতো ওজনে আম বিক্রি করতে অপারগতা প্রকাশ করলে ভোগান্তিও পোহাতে হয়।

বিজ্ঞাপন

আম বিক্রি করতে আসা শ্যামপুর এলাকার আরিফ আলী বলেন, ‘এ বছর অন্য বছরের থেকে গাছে আম অনেক কম ধরেছে। আর এদিকে আম বিক্রি করতে এসে শুনছি ৫২ কেজিতে এক মণ ধরা হবে। এতে আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে। গত বছরও আমাদের জিম্মি করে ৫০ কেজিতে মণ নিয়েছেন আড়তদাররা। আর এবার ফের ৫২ কেজিতে মণ নিচ্ছেন। এমন চলতে থাকলে আমরা কিভাবে লাভ করবো?’

কানসাট পুখুরিয়া এলাকার বিপ্লব বিশ্বাস বলেন, ‘আম হচ্ছে কাঁচা পণ্য। গত ৫ বছর থেকে আমরা ৪৫ কেজিতে এক মণ ধরেই আম বিক্রি করতাম। তবে গত বছর হঠাৎ আড়তদাররা ৫০ কেজিতে মণ নেওয়া শুরু করে। এবার ফের বলছে ৫২ কেজিতে মণ বিক্রি করতে হবে। এতে আমরা তাদের কাছে জিম্মি হয়ে গেছি। আম বাজারে এক কথা বলে আম কিনেন আড়ৎদাররা, আর ঘরে গিয়ে ওজনের সময় খারাপ আচরণ করে। আমরা কিছু বলতে পারি না।’

কানসাটে আম বিক্রি করতে আসা জিয়াউর নামে এক কলেজ শিক্ষক বলেন, ‘গত ১০ দিন থেকে এ কানসাট বাজারে আম বিক্রি করতে আসছি। এমন কোন দিন নেই যে আড়তদারদের সঙ্গে ঝামেলা হয় না। কেউ বলে ৫০ কেজিতে মণ নিবে, ফের কেউ বলে ৫২ কেজিতে মণ নিব। তবে এবার আমের দাম ভালো আছে।‘

কানসাট আম আড়ৎদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক টিপু বলেন, ‘কানসাট বাজারে ওজন নিয়ে একটি ঝামেলা সৃষ্টি হয়েছে। এটি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত সমাধান করা হবে।’

বিজ্ঞাপন

শিবগঞ্জ ম্যাংগো প্রডিউসার কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিডেটের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল খান শামীম বলেন, ‘কানসাট বাজারে আম চাষিদের জিম্মি করে ৫০ কেজিতে মণ নিচ্ছে আড়তদাররা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন হাজারও চাষি। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল হায়াত বলেন, ‘কানসাট আম বাজারে ওজন নিয়ে একটি ঝামেলার বিষয়টি শুনেছি। পরে জেলার অন্য আম বাজারের সঙ্গে ওজন মিলিয়ে এ বাজার চালানো নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে আমের মণ ৫২ কেজিতে, বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সারাবাংলা/এমও

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন