বিজ্ঞাপন

প্রতিদিন লাখ টাকা লোকসান দিয়ে চলছে ‘ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন’

June 21, 2022 | 8:22 am

মাহী ইলাহি, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

রাজশাহী: চলছে আমের মৌসুম। এই মৌসুমে আমের রাজধানী রাজশাহী এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ও বিদেশে আম পাঠানো হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এবারও আম চাষি ও ব্যবসায়ীদের কথা মাথায় রেখে গত ১৩ জুন চালু করা হয় ‘ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন’। চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীতে এবার এমনিতেই গাছে আম কম। তার ওপরে ট্রেনে আম পরিবহনে ব্যবসায়ীদের আগ্রহ কম থাকায় লাভ করতে পারছে না ট্রেনটি। প্রতিদিন প্রায় লাখ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেনটিকে।

বিজ্ঞাপন

রেলওয়ের হিসাব মতে, ট্রেনটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ-ঢাকা রুটে যাওয়া-আসায় পরিবহন ও অপারেশন খাতে প্রতিদিন ব্যয় হয় প্রায় এক লাখ ২০ হাজার টাকা। কিন্তু আয় মাত্র ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। চাষি ও ব্যবসায়ীদের স্বার্থে প্রতিদিন প্রায় লাখ টাকার লোকসান দেওয়া হচ্ছে। এর আগের দুই বছরও আমের মৌসুমে ট্রেনটি চালু করা হয়েছিল। ওই দু’বছরও আম চাষি ও ব্যবসায়ীদের স্বার্থে লোকসান গুণেছিল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের কর্মকর্তা বলছেন, বিশেষ এই ট্রেনটি চাষি ও ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে চালু করা হয়েছে। আর্থিক লোকসান হলেও সরকারের উচ্চপর্যায় এ বিষয়ে অবহিত। চাষি ও ব্যবসায়ীদের সুবিধায় লোকসান হলেও এই ট্রেন চালানোর ব্যাপারে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সবুজ সংকেত আছে। তাই ট্রেনটি চালানো হচ্ছে। তবে গাছে আম কম থাকায় খুব বেশি দিন ট্রেনটি চলবে না।

প্রথম ছয় দিনের আম পরিবহনে ট্রেনটির আয়ের হিসাব পাওয়া গেছে ট্রেনটির। এতে দেখা গেছে- প্রথম দিন ট্রেনটিতে ৩২ হাজার ৩৯০ কেজি আম পরিবহন হয়েছে। এতে পাওয়া গেছে ৩৭ হাজার ৬৪৩ টাকা। এরপর ১৪ জুন ২২ হাজার ৫৬৩ কেজি আমে ২৭ হাজার ২৭৯ টাকা, ১৫ জুন ২৮ হাজার ১২৫ কেজিতে ৩৫ হাজার ৩১৯ টাকা, ১৬ জুন ২৬ হাজার ৮২৫ কেজি আমে ৩১ হাজার ৮৮৭ টাকা, ১৭ জুন ১৫ হাজার ৩৭৯ কেজিতে ১৭ হাজার ২৬ টাকা এবং ১৮ জুন ২২ হাজার ৯৭৪ কেজি আম পরিবহনে রেল পেয়েছে ২৬ হাজার ৪৮০ টাকা।

বিজ্ঞাপন

প্রথম ছয়দিনে ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন মোট ১ লাখ ৪৮ হাজার ২৫৬ কেজি আম পরিবহন করেছে। এসব আম পরিবহন করে ট্রেনটি মোট ১ লাখ ৭৫ হাজার ৬৩৪ টাকা আয় করেছে। আর এই ছয় দিনে খরচ হয়েছে প্রায় ৭ লাখ ২০ হাজার টাকা। ফলে লোকসান হয়েছে ৫ লাখ ৪৫ হাজার টাকা।

ট্রেনটিতে আমের পাশাপাশি রেলওয়ের আইনে পার্সেল হিসেবে গণ্য অন্য পণ্যও পরিবহন করা যায়। প্রতিদিন প্রায় ১৫০ টন আম পরিবহন করা যায় এই ট্রেনে। ট্রেনটি আমে পরিপূর্ণ হলে লোকসান হবে না। তবে আম কমের কারণেই লোকসান হচ্ছে।

আম চাষি ও ব্যবসায়ীদের ভাষ্য মতে, এ বছর এমনিতেই আম কম। তাই ট্রেনে যাচ্ছেও কম। তাছাড়া আড়ৎ থেকে আম স্টেশনে নিয়ে বুকিং দিয়ে ট্রেনে তোলা, আবার ঢাকায় গভীর রাতে ট্রেন থেকে আম নামিয়ে নিয়ে যাওয়া বিড়ম্বনার কাজ। তার চেয়ে ট্রাকেই সরাসরি আড়ৎ কিংবা বাগান থেকে আম নিয়ে যাওয়া যায়। আবার ঢাকাতেই ট্রাক সরাসরি মোকামে চলে যায়। এই ঝামেলা এড়ানোর জন্য বেশি ভাড়াতে ট্রাকের প্রতিই সবার আগ্রহ।

বিজ্ঞাপন

ম্যাঙ্গো স্পেশালে রাজশাহী থেকে মাত্র এক টাকা ১৭ পয়সা এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে মাত্র ১ টাকা ৩০ পয়সা খরচে প্রতিকেজি আম পরিবহনের সুযোগ থাকলেও তা গ্রহণ করছেন না বেশিরভাগ আম চাষি ও ব্যবসায়ী। ফলে ট্রেনটি পরিচালনায় লোকসান হচ্ছে।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার সারাবাংলাকে বলেন, ‘সরকার তো অনেক কিছুতেই ভর্তুকি দেয়। এক্ষেত্রেও চাষি ও ব্যবসায়ীদের স্বার্থে এটা করা হচ্ছে। ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেনটিকে আমরা সেবা হিসেবেই দেখছি। সরকারের উচ্চ পর্যায় এ বিষয়ে অবহিত আছে। তারপর আবারও দুয়েক দিনের মধ্যে সার্বিক বিষয় জানানো হবে।

সারাবাংলা/পিটিএম

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন