বিজ্ঞাপন

নৌকার হালে পদ্মা পাড়ে স্বপ্নজয়ী শেখ হাসিনা

June 24, 2022 | 10:46 pm

নৃপেন রায়, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ‘যাত্রী আমি ওরে, পারবে না কেউ রাখতে আমায় ধরে’— কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের এই পঙ্ক্তির প্রত্যয়ের মতোই আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বপ্নপূরণের জয়োৎসব পদ্মার এ পাড়-ও পাড় হয়ে গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়ার অপেক্ষায়। পদ্মা পাড়ে সেতুর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে যে স্বপ্নের দুয়ার খুলছে, তারই অপেক্ষায় যেন গোটা দেশ। আর সেই স্বপ্নপূরণের কারিগর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বরণ করে নিতেই প্রস্তুত পদ্মার দুই পাড়।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (২৫ জুন) বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করতেই পদ্মা পাড়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যে সেতুকে ঘিরে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মহল থেকে ছিল ষড়যন্ত্র, বিদেশি অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়ে যে সেতুর বাস্তবায়নের পথেই রুদ্ধ করে দেওয়ার প্রয়াস ছিল, সেই সেতুটি নিজ অর্থায়নে তৈরিরর কারিগরই যে তিনি।

১৩ বছর আগে অদম্য সাহসিকতা নিয়ে সম্পূর্ণ দেশীয় অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দিয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। অনেকেই বিশ্বাস করতে পারেনি। অনেকেই মুখ টিপে হেসেছে এই ভেবে— বাংলাদেশের তো এমন প্রকল্প বাস্তবায়নের কোনো সক্ষমতাই নেই। কিন্তু কারও পরোয়া করেননি তিনি। একে একে নদী শাসনের কাজ হয়েছে, হয়েছে অ্যাপ্রোচ রোডের কাজ। প্রকৌশল বিদ্যার জটিল সব সমীকরণ মিলিয়ে একের পর এক বসেছে পিলার, স্প্যান। ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হয়েছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু।

আরও পড়ুন- পদ্মা পাড়ের বাসিন্দাদের স্বপ্নপূরণ, এখন কেবল জয়োৎসবের অপেক্ষা

বিজ্ঞাপন

সবশেষ ২০১৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর দক্ষিণাঞ্চলসহ দেশের মানুষের স্বপ্নপূরণের উৎসবের কর্মযজ্ঞ দেখতে পদ্মা পাড়ে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেদিন পদ্মা বহুমুখী সেতুর বিশাল কর্মযজ্ঞ পরিদর্শন শেষে মাওয়া প্রান্তের সুধী সমাবেশে বলেছিলেন, আমরা প্রমাণ করেছি— কেউ দাবায়ে রাখতে পারব না। পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করে আমরা দেখিয়ে দিয়েছি, আমরা পারি। আমাদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। ততদিনে সমালোচকদের মুখ বন্ধ হতে শুরু করেছে। তারপর তো সব ধাপ পেরিয়ে পদ্মা সেতু আজ বুকে করে যানবাহন নিয়ে পদ্মা পাড়ি দেওয়ার জন্য একেবারেই প্রস্তুত।

সেই পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট ঘাতকদের গুলিতে এক রাতে নিমিষেই মা-বাবা, ভাই-স্বজনদের হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছিলেন তিনি। এরপর দীর্ঘ ছয় বছর থাকতে হয়েছে নির্বাসনে। সেই নির্বাসন কাটিয়ে ১৯৮১ সালে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিনে জনতার জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে তিনি বলেছিলেন, সব হারিয়ে আমি আপনাদের মাঝে এসেছি। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তার আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির পিতার হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে আমি জীবন উৎসর্গ করতে চাই। আমার আর হারানোর কিছুই নেই। পিতামাতা, ভাই রাসেল সবাইকে হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি। আমি আপনাদের মাঝেই তাদেরকে ফিরে পেতে চাই। আপনাদের নিয়েই আমি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে বাঙালি জাতির আর্থসামাজিক তথা সার্বিক মুক্তি ছিনিয়ে আনতে চাই।

আরও পড়ুন- পদ্মা সেতুর উদ্বোধন ঘিরে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বলয়

বিজ্ঞাপন

সেই থেকে দিশাহীন বিভক্ত আওয়ামী লীগের ঐক্যের প্রতীক হয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বাংলার মাটিতে ফিরে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতির দায়িত্বভার কাঁধে নিয়ে দেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তনের পর থেকে এই দীর্ঘ ৪২ বছরের পথচলার আলোকিত যাত্রার জয়রথ ছুটিয়ে বিশ্বসভায় তিনি আজ নতুন বাংলাদেশকে চিনিয়েছেন। টানা তিন বারসহ মোট চারবার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করেছেন। টানা মেয়াদে সরকারপ্রধান হিসাবে দেশবাসীর মানসপটে বর্তমানের জন্য ভবিষতের বার্তায় উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা বিনির্মাণের অঙ্গীকার একের পর এক বাস্তবায়ন করে চলেছেন। দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষগুলোরও দীর্ঘ সময়ের যে অপ্রাপ্তির হতাশা, সেটিও পদ্মা সেতুর মাধ্যমে পূরণ করে দিলেন তিনি।

১৯৮১ সালের ১৭ মে মেঘমেদুর প্রকৃতির বিরূপতাকে আমলে না নিয়ে লাখো জনতা সমবেত হয়েছিল বিমানবন্দরে। ঝড়-বৃষ্টিতে উপেক্ষা করে কখন আসবেন তাদের নেত্রী, সে অপেক্ষার প্রহর গুনছিলেন। আজ ৪১ বছর পর এসে পদ্মা পাড়ের মানুষেরাও আজ একইভাবে প্রহর গুনছেন— কখন আসবেন প্রধানমন্ত্রী, খুলে দেবেন স্বপ্নের দুয়ার।

প্রধানমন্ত্রীর প্রেসউইং থেকে পাঠানো সূচিতে জানানো হয়েছে, শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে হেলিকাপ্টারে করে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তের উদ্দেশে রওনা হবেন তিনি। সকাল ১০টায় মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। এরপর ১১টায় পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকিট, স্যুভেনির শিট, উদ্বোধনী খাম ও সিলমোহর অবমুক্ত করবেন। ১১টা ১২ মিনিটে টোল দিয়ে মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-১ উন্মোচন করে মোনাজাতে অংশ নেবেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রী এরপর ১১টা ২৩ মিনিটে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্ত থেকে শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তের উদ্দেশে সড়কপথে যাত্রা করবেন। ১১টা ৪৫ মিনিটে জাজিরা প্রান্তে উপস্থিত হয়ে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন ফলক ও ম্যুরাল-২ উন্মোচন শেষে মোনাজাতে অংশ নেবেন। দুপুর ১২টায় মাদারীপুর শিবচর উপজেলার কাঠালবাড়ীতে অনুষ্ঠেয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জনসভায় অংশ নেবেন। জনসভা শেষে বিকেল সাড়ে ৫টায় জাজিরা প্রান্ত থেকে হেলিকাপ্টারে করে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করবেন।

স্থানীয় প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য বলছে, স্বপ্নপূরণের মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষায় এখন পদ্মার পাড়ের মানুষ। বহুল প্রতীক্ষিত ও কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের পদ্মা সেতুকে ঘিরে স্বপ্ন দেখছে গোটা দক্ষিণাঞ্চল। এই অঞ্চলের অধিবাসীদের প্রত্যাশা, জনপদের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বাড়বে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান। অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে এই অঞ্চল। এজন্যই পদ্মা সেতুকে ঘিরে এতো স্বপ্ন এবং উচ্ছ্বাস এখন মানুষের মধ্যে।

পদ্মা সেতুর জনসভাস্থলে মঞ্চ তৈরির কাজ এখন শেষ। লাখ লাখ মানুষের জনসভায় উপস্থিতিকে প্রাধান্য দিয়ে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ পয়ঃনিষ্কাশণের জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে ৫০০ টয়লেট, থাকছে পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা। নদীপথে আসা মানুষের জন্য তৈরি করা হচ্ছে ২০টি পন্টুন। ২৫ জুনের মাহেন্দ্রক্ষণের জন্য এখন সবাই অপেক্ষায়।

সভাস্থলের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছে সেনাবাহিনী, র‌্যাব, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জনসভা ঘিরে তিন বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে আলোকসজ্জার কাজ করা হয়েছে। মঞ্চের চারপাশে নেওয়া হয়েছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও সুধী সমাবেশের জন্য সাড়ে তিন হাজার আমন্ত্রণপত্র তৈরি করা হয়েছে। এরই মধ্যে এসব আমন্ত্রণপত্র পাঠিয়ে বিশিষ্ট ব্যক্তি ও সুধীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আগে বলা হলেও আইনি জটিলতায় শেষ পর্যন্ত পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তবে বিএনপির সাত নেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তারা আমন্ত্রণ প্রত্যাখান করেছেন। তবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে, যার বিরুদ্ধে রয়েছে পদ্মা সেতুতে বিদেশি অর্থায়ন বন্ধে ইন্ধন জোগানোর অভিযোগ। এছাড়া পদ্মা সেতু তৈরিতে দেশি-বিদেশি যারা বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন, তাদের সবাইকেও অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। দেশের যেসব কর্মী এ সেতু তৈরিতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন, তারাও আমন্ত্রিত হিসেবে থাকবেন। বাংলাদেশে অবস্থানরত কূটনীতিকরাও পেয়েছেন আমন্ত্রণ।

সারাবাংলা/এনআর/টিআর

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন