বিজ্ঞাপন

প্রবাসী শ্রমিকদেরও কলেরা ভ্যাকসিন দেওয়ার পরিকল্পনা

June 26, 2022 | 8:10 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: সাম্প্রতিক সময়ে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশের শ্রমিকদের কলেরা ভ্যাকসিন দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। তাদের দাবি—বাংলাদেশ থেকে যাওয়া শ্রমিকদের দেহে পাওয়া গেছে কলেরার জীবাণু। আর তাই আগামীতে কলেরার ভ্যাকসিন দিয়েই বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর পরিকল্পনা করছে সরকার।

বিজ্ঞাপন

রোববার (২৬ জুন) রাজধানীর মহাখালীতে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশে (আইসিডিডিআর, বি) ঢাকার পাঁচটি এলাকায় কলেরার টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সরকারের এই পরিকল্পনার কথা জানান স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।

তিনি বলেন, ‘বাইরের দেশগুলোতে আমাদের শ্রমিকদের কলেরার ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে আগামীতে তাদের ভ্যাকসিন দিয়েই পাঠানো হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের মনে রাখতে হবে, সব ডায়রিয়া কলেরা নয়, আবার সব কলেরাই প্রাণঘাতী নয়। ঢাকা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা হওয়ায় এখানে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘একসময় গ্রামের পর গ্রাম কলেরায় উজাড় হয়ে যেত। এখন সে অবস্থা নেই। অতীতে যেসব এলাকায় সংক্রমণ দেখা দিয়েছিল, আমরা সে সব এলাকায় কলেরা ভ্যাকসিন দিয়েছি। এবার যেহেতু রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। তাই আমরা এসব এলাকায় ভ্যাকসিন দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি।’

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘প্রবাসীদের মাঝে অনেকের শরীরে কলেরার জীবাণু পাওয়া যায় বলে মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশ থেকে আমাদের বলা হয়। আমরা বিষয়টি নিয়ে ভাবছি।’

তিনি বলেন, ‘এক সময় ডায়রিয়া-কলেরায় হাজার হাজার মানুষ মারা যেত। এখন তা হয় না। এর পেছনে সরকার ও আইসিডিডিআরবি,র গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে। সরকার সারাদেশে নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা করেছে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘সরকার এসব রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি পর্যাপ্ত চিকিৎসার ব্যবস্থাও করেছে। সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতার থেকে আমরা প্রতিটি জেলা-উপজেলা হাসপাতালে কলেরা-ডায়রিয়া ইউনিট চালুর নির্দেশ দিয়েছি।’

এদিন (রোববার,২৬ জুন) দেশে কলেরা ও ডায়রিয়া প্রতিরোধে রাজধানীর সংক্রমণ-প্রবণ পাঁচটি এলাকার ২৪ লাখ মানুষকে ওরাল ভ্যাকসিন খাওয়ানো শুরু করা হয়।

এই কর্মসূচির উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা আইসিডিডিআরবির সহযোগিতায় এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে ছিলেন আইসিডিডিআরবি,র নির্বাহী পরিচালক ড. তাহামিদ আহমেদ, ড. মু. শফিকুল ইসলাম, সিনিয়র সায়েন্টিস্ট ও ইনফেকশন ডিজিজ ডিভিশনের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ড. ফেরদৌসী কাদরীসহ অন্যান্যরা।

বিজ্ঞাপন

স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, মুখে খাওয়ার কলেরার এই ভ্যাকসিনের দুই ডোজ গ্রহণ করতে হবে। প্রথম ডোজ নেওয়ার পর অন্তত ১৪ দিন পর দ্বিতীয় ডোজ নিতে হবে। সর্বোচ্চ ছয় মাসের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া যাবে।

প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়ার ইউবায়োলোজিক্স কোম্পানি লিমিটেডের তৈরি ইউভিকল প্লাস নামের কলেরার দুই ডোজের ভ্যাকসিন এক বছর থেকে তদূর্ধ্ব বয়সীদেরকে প্রদান করা হবে। এই ভ্যাকসিন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত। গর্ভবতী মহিলা এবং যারা বিগত ১৪ দিনের মধ্যে অন্য কোনো ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছে তারা ব্যতীত সবাই এটি গ্রহণ করতে পারবেন। এই ভ্যাকসিন নেওয়ার ১৪ দিনের মধ্যে করোনার ভ্যাকসিনসহ অন্য কোনো ভ্যাকসিন নেওয়া যাবে না। এই ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নেওয়ার পর ১৪ দিন থেকে ছয় মাস পর্যন্ত দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া যাবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, রোববার (২৬ জুন) থেকে শনিবার (২ জুলাই) পর্যন্ত সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত প্রথম ডোজ কলেরা টিকাদান কর্মসূচি চলবে। যাত্রাবাড়ীর প্রায় ৫ লাখ, সবুজবাগের প্রায় ৪ লাখ ২০ হাজার, দক্ষিণখানের প্রায় ২ লাখ ৮০ হাজার, মিরপুরের প্রায় ৭ লাখ ৮০ হাজার এবং মোহাম্মদপুরের প্রায় ৪ লাখ অধিবাসীকে কলেরার ভ্যাকসিন দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে মাইকিং করা হচ্ছে। প্রায় ৭০০টি টিকাদান কেন্দ্রের মাধ্যমে এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রতি এক হাজার বাড়ির জন্য একটি ভ্যাকসিন কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে ইপিআই কর্মসূচিতে ব্যবহৃত টিকাদান কেন্দ্র, সূর্যের হাসি ক্লিনিক রয়েছে।

সারাবাংলা/এসবি/একে

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন