বিজ্ঞাপন

সঠিক পথেই কেমিক্যাল মেট্রোলজি অবকাঠামো প্রকল্পের বাস্তবায়ন

June 29, 2022 | 9:07 am

জোসনা জামান,স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বাস্তবায়নে সঠিক পথেই রয়েছে ‘কেমিক্যাল মেট্রোলজি অবকাঠামো সমৃদ্ধকরণ’ প্রকল্প। ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে গত এপ্রিল মাস পর্যন্ত প্রকল্পটির ক্রমপুঞ্জিত বাস্তব অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৯৫ দশমিক ১৮ শতাংশ। কোভিড-১৯ এর ধাক্কা কিছুটা লাগলেও তা কাটিয়ে উঠেছে দ্রুত। এটির মেয়াদ রয়েছে চলতি বছরের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন নির্ধারিত এই মেয়াদের মধ্যেই শেষ হবে বাস্তবায়ন কাজ। লাগবে না ব্যয় বৃদ্ধি। বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) নিবিড় পরীক্ষণ সমীক্ষার খসড়া সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। তৃতীয় পক্ষ দিয়ে সমীক্ষার কাজটি করিয়েছে আইএমইডি।

বিজ্ঞাপন

এ প্রসঙ্গে আইএমইডির সাবেক সচিব ও পরিকল্পনা সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী সারাবাংলাকে বলেন, প্রকল্প মূল্যায়ন করা মানেই যে শুধু খারাপ দিকগুলো তুলে ধরা তা নয়। যে প্রকল্পে যেসব দিক থাকবে তার সবই তুলে ধরা হয়। প্রকল্পে অনিয়ম, দুর্নীতি থাকলে যেমন তুলে আনা হয়, তেমনি ভালো দিক থাকলেও সেগুলো তুলে ধরা হয়। এ প্রকল্পে যেহেতু বেশিরভাগই ভালো দিক রয়েছে, তাই এটি অন্যান্য প্রকল্পের জন্য উদাহরণও হতে পারে।

সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩৩ কোটি ১১ লাখ টাকা। এখন পর্যন্ত বরাদ্দ ছিল ১০৯ কোটি ১৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে গত এপ্রিল মাস পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৮৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৯৯ দশমিক ৯১ শতাংশ।বাস্তবায়ন কাল ছিল ২০১৮ সালের এপ্রিল মাস থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে এক বছর বাড়িয়ে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়।

আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্পটি ঢাকা জেলার ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে অবস্থিত হওয়ায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং আইএমইডি মনিটরিং করেছে। তাছাড়াও প্রকল্পটিতে শুরু থেকে একজন প্রকল্প পরিচালক নিয়োজিত থাকায় এবং প্রকল্প এলাকায় সার্বক্ষণিক উপস্থিত থেকে সকল কাজ পরিচালনা করায় প্রকল্পটির কার্যক্রম কোভিড-১৯ মহামারি এবং অন্যান্য কারণে তেমন ব্যাহত হয়নি। স্টিল-কংক্রিট কম্পোজিট স্ট্রাকচারের অনাবাসিক ভবন নির্মাণের কাজের সঙ্গে টার্ন-কি ভিত্তিতে ইলেকট্রো মেকানিক্যাল সরঞ্জাম স্থাপন করার ব্যবস্থা নেওয়ায় প্রকল্পের সার্বিক কাজ মনিটরিং করা এবং কাজের গুণগতমান বজায় রাখা সহজ হয়েছে। বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রী এমএস রড, কংক্রিট, এইচ বিম, নাট বোল্টস, এম এস প্লেট, ইলেকট্রো মেকানিক্যাল সরঞ্জাম ইত্যাদির টেস্ট রিপোর্ট ও স্পেসিফিকেশন এবং কাজের গুণগতমান সন্তোষজনক।

বিজ্ঞাপন

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, প্রকল্পটিতে অনুমোদিত ড্রইং অনুযায়ী নির্মাণ কাজ সম্পাদন করা হয়েছে। তবে এক তলা বেজমেন্টসহ ৭ তলা ফায়ার ফেস কম্পোজিট বিল্ডিং অনুমোদিত ড্রইং ও ডিজাইন অনুযায়ী নির্মাণ করা হলেও ফায়ার ফেস বিল্ডিংয়ের প্রকৃত রূপ আসেনি। ভবনের বেজমেন্ট সকল ধরনের ইলেকট্রো মেকানিক্যাল সরঞ্জাম স্থাপন করা হয়েছে এবং ভবনের অভ্যন্তরীণ ইলেকট্রিক্যাল, ফায়ার ডিটিকশন ও প্রটেকশন সিস্টেম, এইচভিএসি সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া ভবনে ৪টি লিফট ড্রইং অনুযায়ী স্থাপন করা হয়েছে ও ৪টি সিঁড়ি আছে এবং মাঝখানে ড্রইং অনুযায়ী সুপরিসর একটি খালি জায়গা রাখা হয়েছে। ল্যাবগুলোর জন্য নির্মিত কক্ষগুলোর ফায়ার, ভাইব্রেশন ও সাউন্ড প্রোটেকশন করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ভবনের প্রায় সব কাজ সম্পন্ন হলেও বেজমেন্ট ও গ্রাউন্ড ফ্লোরের স্বল্প জায়গার সিলিং, ভয়েড স্পেসের কিছু অংশ, গ্রাউন্ড ফ্লোরের সৌন্দর্য্যবর্ধন কাজ, বেজমেইন্টের কিছু জায়গায় ইলেকট্রিক্যাল ওয়্যারিং, বিভিন্ন জায়গায় কিছু কিছু ফিনিশিং কাজ ইত্যাদি শেষ হয়নি। অবশিষ্ট কাজ নির্ধারিত সময়ে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে বলে জানা গেছে। বর্তমানে ভবন নির্মাণ ও ইলেকট্রো মেকানিক্যাল সরঞ্জামের কাজ প্রায় ৯৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পের সম্পাদিত কাজের অগ্রগতি সন্তোষজনক।

প্রকল্পের ঝুঁকি: প্রকল্পটিতে বেশ কিছু ঝুঁকিও আছে বলে উল্লেখ করা হয়ে প্রতিবেদনে। এগুলো হচ্ছে, কাস্টমারের জন্য প্রকল্পটি আকর্ষণীয় ও লাভজনক করতে না পারলে কাস্টমার বিমুখ হবে। ফলে প্রকল্পে স্থাপিত অবকাঠামো ও যন্ত্রপাতি কার্যকরভাবে সম্পূর্ণ কাজে লাগান যাবে না। প্রকল্পের অধীনে স্থাপিত মেশিনারিজ চালান ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন জনবল নিয়োগের মাধ্যমে পিরিয়ডিক্যালি রক্ষণাবেক্ষণ করতে না পারলে মেশিনারিজ টেকসই হবে না। এছাড়া মেট্রোলজি সংক্রান্ত বিষয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থা, প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগের মাধ্যমে নিজেদের যুগোপযোগী করতে না পারা, লোকবলের অভাব এবং পরিবেশ দূষণ ও রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহারে সাবধানতা থাকতে হবে।

বিজ্ঞাপন

প্রকল্পের সবল দিক: প্রকল্পের সবল দিকগুলো হচ্ছে—বাস্তবায়নকালীন সময়েই এ সংক্রান্ত আইন, কৌশলপত্র ও বিধিবিধান প্রণয়ন করা হয়েছে। এছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়নকালীন সময়ে সেবা দেওয়া ও রাজস্ব খাতে আয় করা সম্ভব হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নকালীন সময় একজন প্রকল্প পরিচালকই দায়িত্ব পালন ও প্রকল্প এলাকায় অবস্থান করেছেন। পণ্য পরীক্ষার ফলাফল সঠিক এবং গুনগত মান উন্নয়ন হচ্ছে। আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ও সম্পর্ক ভালো আছে। খাতওয়ারী বাজেটে চাহিদা ও বরাদ্দ যথেষ্ট ছিল। প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান এবং যথাসময়ে অর্থ ছাড় করায় প্রকল্প পরিচালক সব কাজ সুষ্ঠুভাবে করাতে পেরেছেন। কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যেও প্রকল্পের কার্যক্রম নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। প্রকল্পের ডিজাইন ও স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী সব ক্রয় সম্পন্নকরণের চেষ্টা করা হয়েছে। ভবন নির্মাণের কাজের সঙ্গে ইলেক্ট্রো মেকানিক্যাল কাজগুলো টার্ন কি ভিত্তিতে করার ব্যবস্থা করা, নিয়মানুযায়ী পিআইসি ও পিএসসি সভা করা এবং সভার সিদ্ধান্তগুলো যথা সময়ে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। সঠিকভাবে বাস্তবায়নের জন্য আইএমইডি দুইবার পরিদর্শন করেছে।

সারাবাংলা/জেজে/আইই

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন