বিজ্ঞাপন

শিক্ষক অবমাননা: নাগরিক ঐক্য গড়ার ডাক

June 29, 2022 | 8:22 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের আপসের রাজনীতির কারণে দেশে পাকিস্তানের ভূত চেপে বসেছে বলে মন্তব্য করেছেন একুশে পদকপ্রাপ্ত বুদ্ধিজীবী আবুল মোমেন। ধর্মান্ধ শক্তিকে পরাস্ত করতে বৃহত্তর নাগরিক ঐক্য গড়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীদের লড়াইয়ের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

শিক্ষক হত্যা এবং নড়াইলে কলেজের অধ্যক্ষকে জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছনার প্রতিবাদে বুধবার (২৯ জুন) বিকেলে নগরীর চেরাগি চত্বরে আয়োজিত এক মানববন্ধনে আবুল মোমেন এসব কথা বলেছেন।

কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে দেখছি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকের প্রতি অবমাননা চলছে। জাতীয় পার্টির একজন নেতা নারায়ণগঞ্জে একজন শিক্ষককে অপমান করেছিলেন। সেই ঘটনার কোনো বিচার হয়নি। এরপর থেকে শিক্ষকদের অবমাননা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এর পেছনে আমরা সামাজিক-রাজনৈতিক অবক্ষয় যেমন দেখছি, সাম্প্রদায়িক চেহারাও দেখছি। নারায়নগঞ্জে শিক্ষককে অপমান করা, উত্তরবঙ্গের নারী শিক্ষককে ফাঁসানোর চেষ্টা, হৃদয় কুমার মণ্ডলের ঘটনা, সাম্প্রতিক দু’জন শিক্ষকের সঙ্গে যা হয়েছে সবগুলো চিত্র একই ধরনের।’

শুধুমাত্র হিন্দু সম্প্রদায়ের শিক্ষকদের টার্গেট করে পরিকল্পিতভাবে লাঞ্ছনা, অবমাননা এমনকি হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনাও ঘটছে বলে মন্তব্য করেন আবুল মোমেন।

বিজ্ঞাপন

সমাজে সাম্প্রদায়িকতা বিস্তার লাভ করেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সংবিধানকে সাম্প্রদায়িক করা হয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষতার চরিত্র পাল্টে ফেলা হয়েছে। যারা বাংলাদেশের বিরোধিতা করেছিল, সেই মৌলবাদী সংগঠনগুলোকে রাজনীতি করবার অধিকার দেওয়া হয়েছিল। প্রগতিশীল রাজনৈতিক সংগঠনগুলোকে কোণঠাসা করা হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশের সমাজে একটা বড় পরিবর্তন হয়ে গেছে। সাম্প্রদায়িক চেতনা, ধর্মান্ধতা সমাজে বিস্তার লাভ করেছে। এর ওপর ভিত্তি করে ধর্মভিত্তিক দলগুলো সমাজের মধ্যে তাদের প্রতিষ্ঠা লাভ করছে।’

আওয়ামী লীগের আপসের রাজনীতির সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, যে দল মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছে, সেই দল কৌশলের রাজনীতি করছে। তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল দলগুলোকে দূরে ঠেলে দিয়েছে। আর যারা ধর্মান্ধ, হেফাজতের মতো দল এমনকি জামায়াত ইসলামী থেকেও নিজের দলে লোকজন এনে তাদের প্রতিষ্ঠিত করছে। পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, এই আপসের রাজনীতি বাংলাদেশে চলবে না। এই আপস ১৯৭১ সালে হয়নি বলেই পাকিস্তান ভেঙে আমরা বাংলাদেশ করেছি। এখন কৌশলের রাজনীতি, আপসের রাজনীতির নামে পাকিস্তানের ভূত আমাদের ওপর চেপে বসেছে। এটা আমরা মেনে নিতে পারি না।’

বৃহত্তর নাগরিক ঐক্য গড়ার ডাক দিয়ে আবুল মোমেন বলেন, ‘সমাজে মানবিকতাবোধ জাগ্রত করা, গণতান্ত্রিক চেতনা বাড়িয়ে তোলা, অসাম্প্রদায়িক ভাবকে জাগিয়ে তোলার ডাক দিতে হবে। যেসব রাজনৈতিক দল এখনো মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে ক্ষমতার কথা না ভেবে, তাদের একমঞ্চে আসতে হবে। বৃহত্তর নাগরিক ঐক্য দরকার। রাজনীতিবিদ, পেশাজীবী, সাংস্কৃতিক সংগঠন- সবাই মিলে একটা বৃহত্তর নাগরিক ঐক্য দরকার। সেই ঐক্যের মধ্য দিয়ে আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, একাত্তরের চেতনা ফিরিয়ে আনব। স্বপ্নের বাংলাদেশকে ধর্মান্ধদের হাত থেকে রক্ষা করব।’

বিজ্ঞাপন

মানববন্ধনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, চট্টগ্রাম জেলা শাখার সভাপতি অশোক সাহা বলেন, ‘আমাদের সমাজ তো কখনো এমন ধর্মান্ধ ছিল না। এই বাংলাদেশ হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সবার সম্মিলিত চেতনা ও ঐক্যের মধ্য দিয়ে স্বাধীন হয়েছিল। তাহলে আজ বাংলাদেশে সেই ঐক্য বিনষ্ট হল কেন? একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের শিক্ষকদের টার্গেট করে কেন বারবার বিভিন্ন ঘটনা ঘটছে? এর কারণ অনুধাবন করতে না পারলে মিটিংয়ের পর মিটিং করতে থাকব, মানববন্ধন করতে থাকব কিন্তু সুফল পাব না। এদের পঁচাত্তরের পর জিয়াউর রহমান, এরশাদ যে সাম্প্রদায়িক ধারার রাজনীতির সূচনা করেছিল, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে সেই ধারা অব্যাহত রাখে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য সেই সাম্প্রদায়িক ধারার সঙ্গে আপস করছে। এটা আমাদের বুঝতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘এদেশে ধর্মীয় অনুভূতির কথা বলে হাজার হাজার শিক্ষার্থী রাস্তায় নেমে আসে। তাহলে শিক্ষকের গলায় জুতার মালা পরানোর প্রতিবাদে, শিক্ষককে হত্যার প্রতিবাদেও হাজার হাজার শিক্ষক, হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীর রাস্তায় নেমে আসা দরকার ছিল। যে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আছে, যারা ক্ষমতায় যেতে চায় তাদের হাজার হাজার কর্মী, তারা আজ কোথায়? আজ রাস্তায় বামপন্থীরা ছাড়া আর কেউ নেই কেন? যেখানে জুলুম-অত্যাচার, নির্যাতন, সাম্প্রদায়িকতা, সেখানেই হাজার হাজার মানুষকে প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসতে হবে। আমরা একটি প্রগতির ধারার বাংলাদেশ চাই। সেই বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে হলে বিকল্প গড়তে হবে। আসুন, নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি।’

ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক সভাপতি দেলোয়ার মজুমদার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘শিক্ষকের গলায় যখন জুতার মালা পরিয়ে রাস্তা দিয়ে নামানো হয়েছে, সেখানে আপনার বাহিনী যারা জুতা পরিয়েছে তাদের নিরাপত্তা দিয়েছে। আপনার কাছ থেকে একটি বিবৃতি আমরা আশা করি। শিক্ষামন্ত্রীর কাছ থেকেও আমরা এখনো পর্যন্ত কোনো বিবৃতি পাইনি। সবাই তাকিয়ে থাকেন প্রধানমন্ত্রীর দিকে। উনি কী বলবেন, তারপর মন্ত্রীরা ভাববেন কোনটা বলা উচিৎ আর কোনটা অনুচিৎ।’

তিনি বলেন, ‘এভাবে একটা দেশ চলতে পারে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এখন দুর্বৃত্তদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দল দাবি করে যারা দুর্বৃত্ত লালন করে, তাদের বিরুদ্ধে আমরা রাজপথে নামব। আমাদের লড়াই করতে হবে। লড়াই করে এই দুর্বৃত্তদের পরাজিত করতে হবে। দেশ বিকলাঙ্গ হয়ে যাবে, এটা আমরা মেনে নিতে পারি না।’

বিজ্ঞাপন

‘সর্বস্তরের সংস্কৃতিকর্মী ও সচেতন নাগরিক সমাজ’ আয়োজিত মানববন্ধনে আবৃত্তিশিল্পী রাশেদ হাসানের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন লেখিকা অধ্যাপিকা আনোয়ারা আলম, বাংলাদেশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির (বাকবিশিস) কেন্দ্রীয় মহাসচিব অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, কবি কামরুল হাসান বাদল, উদীচী চট্টগ্রাম জেলা সংসদের সাধারণ সম্পাদক শীলা দাশগুপ্তা এবং জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক শরীফ চৌহান।

সারাবাংলা/আরডি/এনএস

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন