বিজ্ঞাপন

ভুয়া ভিসায় ইউরোপে পাঠানো মানবপাচারকারী গ্রেফতার

July 18, 2022 | 7:40 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: রাজধানীর পল্টন এলাকা থেকে জাল ভিসা, বিপুল পরিমাণ পাসপোর্ট ও নকল বিএমইটি কার্ডসহ মো. আবুল কালাম (৪১) নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। র‌্যাবের দাবি, আবুল কালাম একজন প্রতারক চক্রের সদস্য ও সংঘবদ্ধ মানবপাচারকারী। তিনি সহজ সরল বিদেশে যেতে ইচ্ছুক নারী-পুরুষদের মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে বিদেশে পাঠিয়ে সর্বনাশ করেছেন।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (১৮ জুলাই) দুপুরে কারওয়ান বাজার মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন এ সব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব জানতে পারে, পল্টন এলাকায় একটি মানবপাচার ও প্রতারক চক্র মধ্যপ্রাচ্য হয়ে ইউরোপে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে ভুয়া ভিসা ও নকল বিএমইটি কার্ড সরবরাহ করে বিদেশ গমনে ইচ্ছুকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়ে তাদেরকে সর্বস্বান্ত করছে। সহজ-সরল বিদেশ গমনে ইচ্ছুক ব্যক্তিরা ওই ভুয়া ভিসা ও বিএমইটি কার্ড বিমানবন্দরে গেলে তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এ রকম কিছু সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে র‌্যাব-৩ গোয়েন্দা নজরদারি ও ছায়া তদন্ত শুরু করে।

এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব-৩ এর একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল রাতে রাজধানীর পল্টন এলাকায় অভিযান চালিয়ে মানবপাচার ও প্রতারক চক্রের হোতা মো. আবুল কালামকে (৪১) গ্রেফতার করে। এ সময় তার কাছ থেকে লেনদেনের বিভিন্ন লেজার, রেজিস্ট্রার এবং ডায়েরি উদ্ধার করা হয়।

বিজ্ঞাপন

প্রাথমিক অনুসন্ধান ও গ্রেফতার আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, আবুল কালাম একজন সংঘবদ্ধ মানবপাচার ও প্রতারক চক্রের সদস্য। তার জনশক্তি রফতানির লাইসেন্স নেই। কিন্তু দীর্ঘদিন জনশক্তি রফতানির নামে অবৈধভাবে ভ্রমণ ভিসার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে লোক পাঠিয়ে আসছেন।

এ ছাড়াও এই চক্রটি মধ্যপ্রাচ্য হয়ে ইউরোপে জনশক্তি পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশ গমনে ইচ্ছুকদের কাছ থেকে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে ভুয়া ভিসা ও নকল বিএমইটিকার্ড ধরিয়ে দেয়। ভুক্তভোগীরা এ বিষয়ে প্রতিকার চাইলে আসামি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। গত ৩ বছরে চক্রটি অবৈধভাবে অর্ধ-শতাধিক লোককে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাঠায়। যারা বিদেশ গিয়ে কাজ না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। অন্যদিকে এই চক্র তিন শতাধিক লোককে মধ্যপ্রাচ্য হয়ে ইউরোপে জনশক্তি পাঠানোর কথা বলে অন্তত ৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

গ্রেফতার মো. আবুল কালাম ৪র্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। তিনি ২০০৪ সালে ফ্রি ভিসায় দুবাই গিয়ে দর্জি হিসেবে কাজ শুরু করে। মালিকের সঙ্গে মনোমালিন্য হওয়ায় ২০১১ সালে সে দেশে ফিরে আসেন। তারপর তিনি তার এলাকায় দর্জি ব্যবসা করার চেষ্টা করে সফল না হওয়ায় ২০১৯ সাল হতে অবৈধভাবে জনশক্তি বিদেশে পাঠিয়ে প্রতারণা শুরু করেন। তিনি প্রথমে ভিকটিমদের ইউরোপে উচ্চ বেতনে চাকরির আশ্বাস দেখিয়ে পাসপোর্ট এবং প্রাথমিক খরচ বাবদ ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা নিয়ে থাকে। তারপর ভিসা, টিকেট, মেডিক্যাল, বিএমইটি ক্লিয়ারেন্স ইত্যাদির খরচ দেখিয়ে ধাপে ধাপে ভিকটিমদের কাছ থেকে টাকা আদায় করতে থাকেন। এক পর্যায়ে ভিকটিমের আস্থা অর্জনের জন্য দুই একজনকে ভ্রমণ ভিসায় দুবাই পাঠায় এবং ভিকটিমদের স্থায়ী ঠিকানা সংশ্লিষ্ট জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে নিবন্ধন করতে বলে।

বিজ্ঞাপন

ওই নিবন্ধন বিএমইটিকার্ড পাওয়ার কোনো নিশ্চয়তা বহন করে না। কিন্তু ভিকটিমরা তাদের অজ্ঞতার কারণে ওই নিবন্ধনকে বিএমইটি ক্লিয়ারেন্স প্রাপ্তির চূড়ান্ত ধাপ হিসেবে মনে করে। এভাবেই ওই প্রতারকের হাতে গ্রাহকরা ভোগান্তির শিকার হতেন।

সারাবাংলা/ইউজে/একে

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন