বিজ্ঞাপন

কোথায় যাবেন আগেই বুকিং দিন— সরকারকে গয়েশ্বর

July 30, 2022 | 8:56 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: বাংলাদেশের মানুষ আগের অবস্থানে ফিরে গেলে সরকার কোথায় যাবে সেই জায়গা আগেই বুকিং দেওয়ার জন্য বলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। ২০১৩ সালের চেয়েও শর্টকার্ট আন্দোলনে বর্তমান সরকার নদীর পানিতে ভেসে যাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

সারাদেশে লোডশেডিং ও জ্বালানি খাতে অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে শনিবার (৩০ জুলাই) চট্টগ্রাম নগরীর পুরাতন রেল স্টেশন চত্বরে নগর বিএনপির আয়েজিত বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের আমাদের সঙ্গে মশকরা করেন। বলেন, আন্দোলন করার ক্ষমতা নাকি বিএনপির নেই। বিএনপির ক্ষমতা আছে কি নেই, সেটা ২০১৩ সালে, ২০১৪ সালে, ২০১৫ সালে টের পান নাই? আমার তো মনে হয় ২০১৫ সালের মতো আন্দোলনেরও দরকার নেই। ২০১৩ সালের শেষে যে আন্দোলন হয়েছে, এরকম আন্দোলনও লাগবে না। তার চেয়েও অনেক শর্টকার্ট আন্দোলনে এই সরকার নদীর পানিতে ভেসে যাবে, হাবু-ডুবু খাবে। কূলকিনারা খুঁজে পাবে না। বাংলাদেশের মানুষ যদি আবার আগের অবস্থানে যায়, আওয়ামী লীগ সরকারকে বলব- কোথায় যাবেন, কোথায় থাকবেন, ঠিকানা আগেই বুকিং দিন।’

তিনি বলেন, ‘আমরা সরকারের বিরুদ্ধে হরতাল দিচ্ছি না এখন। অনেক বছর দিইনি, ভুলে গেছি, তাই না? হরতাল তো সাংবিধানিক অধিকার। হরতাল দেব না, তা তো বলি নাই। অবরোধ সাংবিধানিক অধিকার। অবরোধ অনেকদিন করি না, করব না এমন কথা তো দিই নাই। মানুষের ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে গেছে। এই আন্দোলন বিএনপির লাভ ক্ষতির জন্য না, এই আন্দোলন জনগণের জন্য। জনগণের হাতে হ্যারিকেন ধরিয়ে দিয়েছে সরকার। সেই হ্যারিকেন সরকারকে ধরিয়ে দিতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে গয়েশ্বর বলেন, ‘বক্তৃতা–স্লোগানে সরকার পরিবর্তনের সুযোগ নেই। ভোটের মাধ্যমেও পরিবর্তনের সুযোগ রাখেনি। রাতের আঁধারে ভোট নিয়ে নেয়। আন্দোলন করতে হবে। আপনারা কি হরতাল করতে রাজি, অবরোধ করতে রাজি? চট্টগ্রাম বন্দর বন্ধ করতে পারবেন? রাজপথে না নামলে জনগণ ভালো চোখে দেখবে না। নেতাকর্মীরা প্রস্তুত থাকলে আমরা তো ঘরে বসে থাকতে পারি না। জনগণের এই দুর্দশার মধ্যে যদি মাঠে না নামি, তাহলে জনগণ ভালো চোখে দেখবে না। বিএনপির জন্মই হয়েছে জনগণের জন্য।’

বিদেশিদের বোকা বানিয়ে রাখার দিন শেষ হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘সবাই সংক্ষেপে বক্তব্য দিচ্ছেন। সংক্ষেপে বক্তব্য না দিয়ে সংক্ষেপে রাজপথে আন্দোলন করলে সরকারও সংক্ষেপে চলে যাবে। এই সরকারের ক্ষমতায় থাকার মতো শক্তি নেই। মৌলবাদ–জঙ্গিবাদের তকমা দিয়ে বিদেশিদের অনেকদিন বোকা বানিয়ে রাখা হয়েছে। কিন্তু বেশিদিন বোকা বানানো যায় না। আজ পশ্চিমা দেশগুলো বুঝতে পারছে, এই দেশে জঙ্গিবাদ-মৌলবাদ নেই। আস্তে আস্তে শেখ হাসিনা সরকারের কুকর্মের কথা প্রচার হচ্ছে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘আপনারা বলেন নিশিরাতের সরকার। এই সংসদে বিনা ভোটে অনেকে এমপি হয়েছেন। কিছু বাইচান্স মন্ত্রী, বাইচান্স এমপি, বাইচান্স রাজনীতিবিদ হয়েছেন শেখ হাসিনার কল্যাণে। এসব বাইচান্স এমপি–মন্ত্রী দেশের অর্থনীতি শেষ করে দিয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

বিদ্যুৎখাতে লুটপাটের অভিযোগ এনে গয়েশ্বর বলেন, ‘কোটি কোটি টাকা খরচ করে বিদ্যুৎকেন্দ্র করলেন। এখন বলছেন বিদ্যুৎ নেই। বিদ্যুৎ নেই মানে শেখ হাসিনার সরকারও নেই। ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনা বলেছিলেন, বিদ্যুতের শতভাগ চাহিদা মেটাবেন। কুইক রেন্টাল করলেন। কুইক কমিশন পেলেন। বিদ্যুৎ খাতে কত টাকা ব্যয় করেছেন হিসাব দিতে হবে। কুইক রেন্টাল বেসিসে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কোন কোন কোম্পানিকে বরাদ্দ দিয়েছে তাদের তালিকা করুন।’

তিনি আরও বলেন, ‘কোন কোম্পানির বিদ্যুৎ উৎপাদনে কতটুকু ক্যাপাসিটি ছিল, সেসব কোম্পানিকে রেশনিং প্রথায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কত ফার্নেস অয়েল দিয়েছেন, তারা ব্যাংক থেকে কী পরিমাণ ঋণ নিয়েছে, কত বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে তার হিসাব জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে। এর মাধ্যমে বোঝা যাবে বিদ্যুৎ খাতে লুটপাটের পরিমাণ কত। এই হিসাব চাওয়া অন্যায় নয়। যদি হিসাব না দেয় তাহলে বলতে হবে এই সব দুর্নীতির সঙ্গে সরকার প্রধান জড়িত। যদি জড়িত না হয়, তাহলে হিসাব দেবে না কেন।’

টাকা পাচারের দায় সরকারের উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই সরকারের সময় ১০ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে। যারা পাচার করেছে তারা সরকারের লোক। এই অবৈধ সরকার বলে- অবৈধভাবে পাচার হওয়া টাকা নাকি বৈধভাবে দেশে আনতে পারবে। যিনি অর্থমন্ত্রী আছেন, তিনি অর্থনীতি বোঝেন না। বৈধভাবে তো টাকা নেননি, তাহলে বৈধভাবে আনবেন কীভাবে। এই সরকার জনগণকে ধোঁকা দেয়। প্রতিনিয়ত প্রতারণা করে। সরকার প্রধান কখনো সত্য কথা বলেন না। মানুষের আয় নেই। জিনিসপত্রের দাম বেড়ে চলছে। তবে শেখ হাসিনার সরকারের দাম ক্রমান্বয়ে কমছে। ফ্যাসিস্ট সরকারের মূল্য প্রতিদিনই কমছে।’

লুটপাটের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি ফোকলা করে দেওয়া হয়েছে মন্তব্য করে বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘ব্যাংকে টাকা নেই। আইএমএফ শুধু জানতে চেয়েছে রিজার্ভের পরিমাণ কত? যা আছে সরকার তার চেয়ে বেশি বলেছে। সরকারের আয় নেই। রিজার্ভের টাকা নিয়ে সরকার খরচ করছে। ৬৫০ কোটি টাকার রিজার্ভ চুরি হলো- এ নিয়ে উদ্বেগ নেই সরকারের। এর হিসাব পাওয়া গেল না। বাংলাদেশকে লুটপাটের রাজত্ব বানানো হয়েছে। সরকার লুটপাটের মাধ্যমে অর্থনীতি ফোকলা করে দিয়েছে। আর কয়দিন পর ব্যাংকে টাকা পাওয়া যাবে না। মানুষ ব্যাংকে টাকা জমা দিলেও তা ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। মেগা প্রজেক্টের মাধ্যমে মেগা দুর্নীতি হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

ব্যাংকখাতেও দুর্নীতির অভিযোগ এনে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আওয়ামী লীগ করে না বলে অনেকেই ব্যাংকের পরিচালক থাকতে পারেননি। বাংলাদেশের প্রায় সব ব্যাংকের সব শেয়ারের মালিক চট্টগ্রামের একজনই। আর কয়দিন পর দেখা যাবে, বাংলাদেশে যে কয়টি ব্যাংক আছে সবগুলোর মালিক হয়ে বসে আছেন। এই সুযোগ কে দেয়? এই সরকার দেয়। দেয় তার কারণ হচ্ছে, নিশ্চয় কোনো সুযোগ সুবিধা পায়।’

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করের পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন- কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জালাল উদ্দিন মজুমদার, দক্ষিণ জেলা কমিটির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, নগর কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ আজিজ, মোহাম্মদ মিয়া ভোলা, আবদুস সাত্তার, সৈয়দ আজম উদ্দীন, এস এম সাইফুল আলম, এস কে খোদা তোতন, নাজিমুর রহমান, শফিকুর রহমান স্বপন, কাজী বেলাল উদ্দিন, ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, শাহ আলম, ইসকান্দর মির্জা, আবদুল মান্নান, আহবায়ক কমিটির সদস্য আর ইউ চৌধুরী শাহীন, আবুল হাশেম, আনোয়ার হোসেন লিপু, গাজী মো. সিরজ উল্লাহ, মন্জুর আলম চৌধুরী মন্জু, কামরুল ইসলাম, নগর যুবদলের সভাপতি মোশাররফ হোসেন দিপ্তী ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহেদ, নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এইচ এম রাশেদ খান ও সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বুলু, নগর ছাত্র দলের আহ্বায়ক সাইফুল আলম ও সদস্য সচিব শরিফুল ইসলাম তুহিন।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন