বিজ্ঞাপন

শোকের মাসে ছাত্রলীগের আন্দোলনে অচল চবি

August 1, 2022 | 12:50 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: শোকের মাস আগস্টের শুরুতে ছাত্রলীগের আন্দোলনে অচল হয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের একাংশের নেতাকর্মীরা চবি’র মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে অবরোধ করছেন। চালককে অপহরণের পর চট্টগ্রাম শহর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়মুখী শাটল ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। শিক্ষকদের বহনকারী বাসও ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারেনি। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস–পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে।
রোববার (৩১ জুলাই) মধ্যরাতে কেন্দ্র থেকে ৩৭৬ সদস্যের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়। রেজাউল হক রুবেলকে সভাপতি ও ইকবাল হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করে আংশিক কমিটি ঘোষণার তিনবছর পর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দিয়েছেন।
কমিটি ঘোষণার পরই মূলত উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে পুরো ক্যাম্পাসে। ঘোষিত কমিটিতে পদবাণিজ্য, বহিরাগত ও অছাত্র রাখার অভিযোগে রাতেই ছাত্রলীগের একাংশ আন্দোলনে নামে। ছাত্রলীগের শাটল ট্রেনের বগিভিত্তিক গ্রুপ চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ারের (সিএফসি) নেতাকর্মীরা রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ করে। এসময় তারা ‘অবৈধ কমিটি, মানিনা মানব না’ ও ‘টাকার বিনিময়ে কমিটি মানিনা মানব না’ বলে স্লোগান দেন। নতুন কমিটিতে যুগ্ম সম্পাদকের পদ পাওয়া মোহাম্মদ ইলিয়াসকে ‘ইয়াবা বিক্রেতা’ উল্লেখ করে বহিষ্কারের দাবি তোলেন।
অবরোধ থেকে সরে এলেও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন আবাসিক হলে গিয়ে রাতে ভাংচুর শুরু করেন। জানা গেছে, ছাত্রদের ৫টি আবাসিক হলের অন্তত ৪০টি কক্ষ ভাংচুর হয়েছে। এর মধ্যে চবির আলাওল হলের অন্তত ১৫টি, এ এফ রহমানের ৫টি, সোহরাওয়ার্দীর ১৫টি, শাহজালালের ৪টি ও শাহ আমানতের ৬টি কক্ষ রয়েছে। এসময় মারধরে আহত চবি শাখা ছাত্রলীগের ত্রাণ ও দুর্যোগবিষয়ক সম্পাদক সাহিল কবির চবির চিকিৎসা কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়।
একই দাবিতে সোমবার (০১ আগস্ট) সকাল থেকে ফের চবির মূল ফটকে তালা দিয়ে অবরোধ শুরু করেন ছাত্রলীগের একাংশের নেতাকর্মীরা। ফটকের সামনে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। সিএফসি গ্রুপের সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দেন বগিভিত্তিক আরেক গ্রুপ বিজয়’র নেতাকর্মীরাও। ছাত্রলীগের ঘোষিত কমিটি বাতিল না করা পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচী চালিয়ে যাবার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
সকালে চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে শাটল ট্রেনের চালককে তুলে নিয়ে যায় অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা। এ কারণে চবিতে যাতায়াতকারী কোনো শাটল ট্রেন যেতে পারেনি। শিক্ষকদের বহনকারী বাসগুলো শহর ছেড়ে গেলেও ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারেনি বলে জানা গেছে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. জাহাঙ্গীর আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘সকালে শাটল ট্রেনের চালককে অপহরণ করে অজ্ঞাতস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর আমরা শাটল ট্রেন চলাচল বন্ধ রেখেছি।’
সারাবাংলা’র চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় করেসপন্ডেন্ট চলন্ত চাকমা ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানিয়েছেন, অবরোধের কারণে পুরো ক্যাম্পাসে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। শাটল ট্রেন না যাওয়ায় এবং বিশ্ববিদ্যালয়গামী যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় অধিকাংশ শিক্ষক-শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে পৌঁছাতে পারেননি। ক্লাশ-পরীক্ষাও অনুষ্ঠিত হচ্ছে না।
চবির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এস এম মনিরুল হাসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে আসতে পারেনি। চলমান অবস্থায় ক্লাশ-পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব নয়।’
ক্যাম্পাসে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি ঠেকাতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তবে ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ করে উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তারা বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
জানতে চাইলে চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ বিরোধ নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে উত্তেজনা চলছে। সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরাও আছেন। এখনও পর্যন্ত অপ্রীতিকর কিছু হয়নি।’
এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেনকে ফোন করেও সাড়া মেলেনি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের রাজনীতি শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এবং নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারীদের মধ্যে বিভক্ত। এই দুই গ্রুপের অধীনে আবার ১১টি উপগ্রুপ আছে। এর মধ্যে বিজয় ও চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ার (সিএফসি) উপগ্রুপের নেতাকর্মীরা নওফেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। বাকি ৯টি উপগ্রুপ—ভার্সিটি এক্সপ্রেস, কনকর্ড, বাংলার মুখ, সিক্সটি নাইন, একাকার, রেড সিগন্যাল, উল্কা, এপিটাফ ও স্বাধীনতা নাছিরের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
২০১৯ সালে ১৪ জুলাই রেজাউল হককে সভাপতি ও ইকবাল হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করে চবি শাখা ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। সভাপতি রেজাউল নওফেল এবং ইকবাল নাছিরের অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত।
তিন বছর পর ঘোষিত পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সহসভাপতি পদ পেয়েছেন— আল-আমিন রিমন, নাছির উদ্দীন, প্রদীপ চক্রবর্তী, নাজমুল হাসান, রকিবুল হাসান, প্রীতম কর, মুজিবুর রহমান, শায়ন দাস গুপ্ত, আবু বকর তোহা, মুহাম্মদ আবদুল মবিন, মইনুল ইসলাম, মির্জা খবির সাদাফ, খালেদ মাসুদ, সালাউদ্দিন মাহমুদ, মো. গোলাম মোস্তফা, নাহিদ আলম,নূর মোহাম্মদ, খন্দকার রফিক, সাইফুল ইসলাম, কে এম রোমেল হোসেন, জাহিদুল ইসলাম, এনায়েত উল্লাহ, সৈকত দত্ত, আবু বক্কর চৌধুরী, মোফাজ্জল হায়দার ইবনে হোসাইন, মো.সবুজ মিয়া, শিমুল বিশ্বাস, জাহিদুল হাসান সাব্বির, মিজানুর রহমান খান, এখলাস উদ্দিন, নেছারুল করিম, আমরুল আমিন, মিজানুর রহমান, নজরুল ইসলাম, তাইফ আবেদিন তালুকদার, সামদানী রহমান, ইফরাতুল আলম, এস এম জাহেদুল আউয়াল, মনিরুজ্জামান বাবু।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ পেয়েছেন, রাজু মুন্সি, আব্দুল্লাহ আল নাহিয়ান, সাইদুল ইসলাম, মো. ইলিয়াস, শামসুজ্জামান চৌধুরী, আবু সাইদ মারজান, মারুফ ইসলাম, আরমানুল হক, আহসান হাবীব, রানা খান, শামীমা সীমা।
সাংগঠনিক সম্পাদক পদ পেয়েছেন, ফাহিম হোসেন, ফজলে হোসেন, আসাদুজ্জামান আসাদ, আরিফুল ইসলাম, আইয়ুব আলী, সৌমেন দত্ত প্রমুখ।
প্রচার সম্পাদক পদ পেয়েছেন, আশরাফ খান, দপ্তর সম্পাদক এহসান আহমেদ, গ্রন্থ ও প্রকাশনা সম্পাদক অমিত মাহমুদ, সমাজসেবা সম্পাদকমিনহাজুল ঢালী এবং সাংস্কৃতিক সম্পাদক সৌরভ শীল।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/আরডি/এসএসএ

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন