বিজ্ঞাপন

চবিতে ছাত্রলীগের একাংশের ডাকা অবরোধ প্রত্যাহার

August 2, 2022 | 1:51 pm

চবি করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: ঘোষিত পূর্ণাঙ্গ কমিটি পুনর্গঠনের দাবিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ একাংশের ডাকা অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়েছে। শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল আশ্বাসে অবরোধ প্রত্যাহার করেছেন বলে জানিয়েছেন অবরোধকারীরা।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (২ আগস্ট) দুপুর সোয়া বারোটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া সারাবাংলাকে অবরোধ প্রত্যাহার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

প্রক্টর অধ্যাপক ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া বলেন, ‘ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বসে ছিল না। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ, শিক্ষা উপমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। পরে শিক্ষা উপমন্ত্রী আশ্বাসে অবরোধ প্রত্যাহার করেছে আন্দোলনকারীরা। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছি।’

বিজ্ঞাপন

শাটল ট্রেন নিয়মিত শিডিউলে চলবে। আর শিক্ষক কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বাসও নিয়মিত শিডিউলে চলবে। ক্লাসে বিষয়ে এখন ইতিমধ্যে দুপুর হয়ে গেছে। কোন কোন ডিপার্টমেন্ট যদি চায়, ক্লাস নিতে পারবে বলেও জানান তিনি।

পদবঞ্চিত ছাত্রলীগ নেতা মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের নেতা মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল আশ্বাস দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সঙ্গে আমাদের দাবিগুলো পুনর্বিবেচনা করতে বলছেন। সে কারণে আমরা অবরোধ প্রত্যাহার করছি।’

বিজ্ঞাপন

আশ্বস্ত করার বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল সারাবাংলাকে বলেন, ‘এখানে আশ্বস্ত করার মতো কোনো বিষয় হয়নি। আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বলেছি, যারাই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ব্যাহত করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যেতে। এটাই আমার অবস্থান।’

এর আগে, সকাল ১১টায় উপমন্ত্রী ফেসবুকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি নিয়ে একটি স্ট্যাটাস দেন। এতে তিনি বলেন, ‘ছাত্র সংগঠনের পদপদবির বিষয়ে কোনো দাবিদাওয়া থাকলে সংগঠনের যে কোনো কর্মী, নেতাদের সাথে আলোচনা করতে পারে। কোনো সাংগঠনিক দাবি থাকলে সেটি সংগঠনকে সাথে নিয়ে সমাধান করা যায়। কিন্তু সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট করা, ভাঙচুর করা, অপহরণ করা, অপরাধের হুমকি দেওয়া, হত্যার হুমকি দেওয়া কোনোভাবেই ছাত্র সংগঠনের আদর্শিক কর্মীর কাজ হতে পারে না। যারা এসব করছে তারা নিজেদের ব্যক্তি স্বার্থেই অরাজকতা করছে, এদের কাছে সংগঠন বা শিক্ষার মূল্য আছে বলে মনে হয়না। নিজেদের সাংগঠনিক দাবীতে অপরাধমূলক সহিংসতা যারা করছে, তাদের বিষয়ে সংগঠন এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অত্যন্ত কঠোর হওয়া প্রয়োজন।’

বিজ্ঞাপন

মূলত উপমন্ত্রীর এই ফেসবুক স্ট্যাটাস দেওয়ার ১৫ মিনিটের মধ্যেই চবিতে অবরোধ প্রত্যাহারের ঘোষণা আসে।

ষোলোশহর রেলওয়ে সহকারী স্টেশন মাস্টার আলম তন্ময় চৌধুরী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের একমাত্র যাতায়াত বাহন শাটল ট্রেন নিরাপত্তার কারনে সকালে চলাচল বন্ধ ছিল। তবে অবরোধ প্রত্যাহার বিষয়ে এখনও জানি না। যদি অবরোধ প্রত্যাহার করা হয় তাহলে পরবর্তী শিডিউলে ট্রেন চলবে বলে আশা করছি।’

বিজ্ঞাপন

এদিকে মঙ্গলবার (২ আগস্ট) সকালে নিরাপত্তাজনিত কারণে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবহন পুল থেকে কোনো বাস বের হতে পারেনি বলে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবহন দপ্তরের প্রশাসক এস এম মোয়াজ্জম হোসেন জানান।

এর আগে, রোববার (৩১ জুলাই) মধ্যরাতে কেন্দ্র থেকে ৪০০ সদস্যের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটি ঘোষণার পরই মূলত উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে পুরো ক্যাম্পাসে। পূর্ণাঙ্গ কমিটিকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের একাংশের নেতাকর্মীরা চবি’র মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে অবরোধ করছেন। চালককে অপহরণের পর চট্টগ্রাম শহর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়মুখী শাটল ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেন। শিক্ষকদের বহনকারী বাসও ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারেনি। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস–পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যায়।

ঘোষিত কমিটিতে পদবাণিজ্য, বহিরাগত ও অছাত্র রাখার অভিযোগে রাতেই ছাত্রলীগের একাংশ আন্দোলনে নামে। ছাত্রলীগের শাটল ট্রেনের বগিভিত্তিক গ্রুপ চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ারের (সিএফসি) নেতাকর্মীরা রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মূলফটকে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ করে।

এসময় তারা ‘অবৈধ কমিটি, মানিনা মানব না’ ও ‘টাকার বিনিময়ে কমিটি মানিনা মানব না’ বলে স্লোগান দেন। নতুন কমিটিতে যুগ্ম সম্পাদকের পদ পাওয়া মোহাম্মদ ইলিয়াসকে ‘ইয়াবা বিক্রেতা’ উল্লেখ করে বহিষ্কারের দাবি তোলেন।

পরে রাতে ছাত্রদের পাঁচটি আবাসিক হলের অন্তত ৪০টি কক্ষ ভাঙচুর হয়েছে। এর মধ্যে চবির আলাওল হলের অন্তত ১৫টি, এ এফ রহমানের ৫টি, সোহরাওয়ার্দীর ১৫টি, শাহজালালের ৪টি ও শাহ আমানতের ৬টি কক্ষ রয়েছে। এসময় চবি শাখা ছাত্রলীগের ত্রাণ ও দুর্যোগবিষয়ক সম্পাদক সাহিল কবির মারধরের শিকার হন। পরে তাকে চবির চিকিৎসা কেন্দ্রে ভর্তি করা হয় বলেও জানা যায়।

একই দাবিতে সোমবার (১ আগস্ট) সকাল থেকে ফের চবির মূল ফটকে তালা দিয়ে অবরোধ শুরু করেন ছাত্রলীগের একাংশের নেতাকর্মীরা। ফটকের সামনে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ার (সিএফসি) গ্রুপের সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দেন বগিভিত্তিক আরেক গ্রুপ বিজয়’র নেতাকর্মীরাও। ছাত্রলীগের ঘোষিত কমিটি বাতিল না করা পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যাবার ঘোষণাও দেন তারা।

ওই দিন সকালে চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে শাটল ট্রেনের চালককে তুলে নিয়ে যায় অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা। এ কারণে চবিতে যাতায়াতকারী কোনো শাটল ট্রেন যেতে পারেনি। শিক্ষকদের বহনকারী বাসগুলো শহর ছেড়ে গেলেও ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারেনি বলে জানা যায়।

সারাবাংলা/সিসি/এমও

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন