বিজ্ঞাপন

সেন্সরে এফডিসির অনাপত্তিপত্রে পরিচালকদের আপত্তি

August 2, 2022 | 7:51 pm

আহমেদ জামান শিমুল

দেশের আইনানুযায়ী সেন্সর ছাড়পত্র ছাড়া কোনো ছবি সিনেমা হলে প্রদর্শন করা যায় না। এর জন্য সেন্সর আবেদনের সময় অন্যান্য কাগজের সঙ্গে দিতে হয় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএফডিসি) অনাপত্তিপত্র। আর এ নিয়ে আপত্তি তুলেছেন চলচ্চিত্র নির্মাতারা।

বিজ্ঞাপন

পরিচালকরা বলছেন, এফডিসির সেবা না নিয়ে কেনো প্রত্যায়নপত্রের জন্য তাদেরকে ফি দিতে হবে? আবার এর জন্য তাদের চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিচালক সমিতির সদস্যপদ লাগছে। সবমিলিয়ে পুরো ব্যাপারটায় তাদের সঙ্গে অন্যায় করা হচ্ছে।

সাম্প্রতিক সময়ে এফডিসির অনাপত্তিপত্রের জন্য রেজা ঘটক তার ‘হরিবোল’ ছবির সেন্সর করাতে পারছেন না। ২০১৯ সালের ১০ ডিসেম্বর তার ছবিটি সেন্সর বোর্ডে জমা দেওয়া হয়। দুদিন পরে তাকে একটি চিঠি দিয়ে এফডিসির অনাপত্তি জমা দেওয়ার অনুরোধ করা হয়।

রেজা ঘটক পুরো প্রক্রিয়ায় বেশ ক্ষুব্ধ। তিনি বলেন, ‘ছাড়পত্রের জন্য সেন্সর বোর্ড টাকা নিচ্ছে, তা দিতে আমি রাজি আছি। কারণ তা সরকারি আইন এবং সেটা ছাড়া আমি সিনেমা হলে ছবি দেখাতে পারবো না। ওই ফি থেকে সরকার ট্যাক্স পাচ্ছে। কিন্তু তার জন্য আমার এফডিসির চিঠি কেনো লাগবে। তা তো সেন্সর আইনে লেখা নেই। আইনের বাইরের জিনিস কেনো আমি জমা দিবো? এটা কি আমাকে হয়রানি করা নয়?’

বিজ্ঞাপন

পরিচালক সমিতির সদস্য হতে লাগে ৫৭ হাজার এবং প্রযোজক সমিতির সদস্য হতে ১ লাখ ৫ হাজার টাকা। এ দুই সমিতির সদস্যপদ ব্যতীত ছাড়পত্র পাবেন না বলে জানানো হয়েছে বলে জানালেন রেজা ঘটক। তিনি বলেন, ‘একজন নতুন পরিচালকের পক্ষে প্রায় দুই লাখ টাকা খরচ করতে হবে অনাপত্তিপত্র নিতে হবে, যা সম্ভব নয়। এফডিসি, পরিচালক সমিতি, প্রযোজক সমিতি ও সেন্সর বোর্ড মিলে একটা দুষ্ট চক্র। আমার কেনো সেন্সর করানো জন্য এতকিছু নিতে হবে।’

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বিজয়ী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান মানিকও এ অনাপত্তির বিপক্ষে। তার মতে, এটা এক প্রকার হয়রানি এবং বাড়তি খরচ পরিচালকদের জন্য।

‘কাঠবিড়ালী’খ্যাত পরিচালক নিয়ামুল মুক্তা একটু ভিন্নভাবে বললেন। ‘সিনেমা সেন্সরে এনওসি সিস্টেম থাকতেই পারে। তবে এনওসির জন্য আলাদা ফি থাকা ঠিক না। কেউ এর জন্য আবেদন করলে বিএফডিসি কর্তৃপক্ষ যাচাই বাছাই করবেন এই চলচ্চিত্র থেকে সরকার বা তাদের কোনো টাকা পয়সা বকেয়া আছে কিনা। থাকলে আদায় করবেন আর না থাকলে হাসি মুখে এনওসি দিয়ে দিবে্ন কোন ফি ছাড়াই।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, সেন্সর আইনে না থাকলেও ২০১৯ এর ২৬ ফেব্রুয়ারি পরিচালক, প্রযোজক সমিতি, সেন্সর বোর্ড, এফডিসির মধ্যকার অনুষ্ঠিত এক বৈঠকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক এফডিসির অনাপত্তি ছাড়া কোনো ছবির ছাড়পত্র না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। মূলত এফডিসি বিভিন্ন প্রযোজকের কাছে কয়েক কোটি টাকা পাওনা অনেক বছর ধরে। সে টাকা ফাঁকি দিতে অনেক প্রযোজক এফডিসিতে এক নামে ছবি নিবন্ধন করিয়ে, অন্য নামে ছবি সেন্সর করিয়েছিলেন। তাতে করে এফডিসি পাওনা টাকা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এ কারণে অনাপত্তিপত্র বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

সেন্সর বোর্ডের উপসচিব মো. মমিনুল হক জানান, তারা পরিচালকদের আপত্তির ব্যাপারে মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছিলেন। কিন্তু তাদেরকে বলা হয়েছে যেভাবে আছে আপাতত সেভাবেই চলুক। তাই এ ক্ষেত্রে তাদের কিছু করার নেই।

পরিচালক সমিতির সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান বলেন, গেল ১৭ জুলাই আমাদের সঙ্গে এফডিসির এমডির একটি মিটিং হওয়ার কথা ছিলো এ ইস্যুতে, তা হয়নি। এর আগে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও আমাদের কথা হয়েছে। সেখানে আমরা বলেছিলাম, এফডিসির সেবার মূল্য অনেক বেশি। শর্তাবলীও কঠিন। যার কারণে বর্তমানে পরিচালকরা বাইরে শুটিং করেন। এবং বর্তমানের অধিকাংশ ছবিই এর বাইরে থেকে সম্পূর্ণ কাজ করাচ্ছে। তাই এ ফি নেওয়া ঠিক না। তাদের কাছ থেকে সার্ভিস নিলে আমরা তা দিতে রাজি আছি, এছাড়া না। আর এটা তো তারা প্রথমে ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা করেছিল, আমাদের আপত্তির মুখে ১৫ হাজারে নামিয়েছে।

অনাপত্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক (উৎপাদন) মো. সহিদুল ইসলাম। তিনি জানালেন, অনাপত্তি নিতে ফি লাগার ব্যাপারটি শুধু যারা এফডিসিতে কোনো শুটিং করেননি তাদের জন্য প্রযোজ্য। আমরা শুধু প্রযোজক সমিতির সদস্যপদ চাই, অন্য কোনো সদস্যপদ চাই না। এ ফি সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে বসেই নির্ধারণ করা হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এজেডএস

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন