বিজ্ঞাপন

সেই জবি শিক্ষার্থীর ফোন ৪ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেওয়া হয়

August 3, 2022 | 5:06 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) প্রাণিবিদ্যা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী পারিশা আক্তারের (২৫) ছিনতাই হওয়া মোবাইলফোনটি বিক্রি হয়েছিল মাত্র চার হাজার টাকায়। বিক্রির পর ভিডিও ভাইরালের বিষয়টি টের পেয়ে মোবাইল ফোনটি রিসেট দেওয়া হয়। আর এ ছিনতাইয়ে প্রধান অভিযুক্ত আকাশ অন্য একটি মামলায় গত ১৪ জুলাই জামিনে কারাগার থেকে বের হন।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (৩ আগস্ট) দুপুরে তেজগাঁও থানায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান তেজগাঁও জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) রুবাইয়াত জামান।

তিনি বলেন, ‘গত ২১ জুলাই মাস্টার্স থিসিসের কাজ শেষে বাসে করে নিজ বাসায় ফিরছিলেন পারিশা। পথে কারওয়ান বাজারের ওয়াসা ভবনের সামনে আনুমানিক সন্ধ্যা ৬টার দিকে বাসের জানালা দিয়ে তার ব্যবহৃত পোকো এম থ্রি কালো রংয়ের মোবাইল ফোনটি টান দিয়ে নিয়ে যায় ছিনতাইকারী।’

পারিশা দ্রুত বাস থেকে নেমে সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে সন্দেহভাজন একজনকে ধরে ফেলেন। তার সঙ্গে থাকা বন্ধুরা ঘটনাস্থল থেকে অপর একজনকে ধরে ফেলে। তবে সন্দেজভাজন দু’জন বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকলেও পারিশার মোবাইল ছিনতাইয়ে সম্পৃক্ত ছিলেন না। পারিশা ও তার বন্ধুদের সাহসী ভূমিকার বিষয়টি বিভিন্ন প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়।

বিজ্ঞাপন

রুবাইয়াত জামান বলেন, ‘এ বিষয়ে প্রথমে তেজগাঁও থানায় একটি জিডি করেন পারিশা আক্তার। পরে পুলিশের অনুরোধে তেজগাঁও থানায় মামলা (নং ৪১) করেন তিনি। ঘটনার পর পরই ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ ও অপরাধীর বিষয়ে অভিযোগকারীর মৌখিক বর্ণনা অনুযায়ী কাজ শুরু করে তেজগাঁও থানা পুলিশ।’

সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে রাশেদুল ইসলামকে (১৭) গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে মো. রিপন ওরফে আকাশ (২৪) নামে আরেকজনের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে সে। পরে আকাশকে ধরতে অভিযান চালাতে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে, অন্য মামলায় গ্রেফতার হয়ে সে এখন জেলে। পরে জিজ্ঞাসাবাদের স্বার্থে আদালতের নির্দেশে তাকে দু’দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে আকাশ ওই ছিনতাইয়ে নিজের সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করে। সে জানায়, ছিনতাই করা মোবাইল ফোনটি মাত্র চার হাজার টাকায় কারওয়ান বাজারের চোরাই মোবাইল ক্রেতা মো. শফিকের (২১) কাছে বিক্রি করে। তার দেওয়া তথ্য মতে, কারওয়ান বাজারে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয় শফিককে এবং তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ছিনতাই হওয়া মোবাইলটি।

বিজ্ঞাপন

গ্রেফতাকৃতদের সম্পর্কে এডিসি রুবাইয়াত বলেন, ‘অভিযুক্ত আকাশের নামে বিভিন্ন থানায় ছয়টি মামলা রয়েছে। এছাড়া রাশেদের বিরুদ্ধে চারটি এবং শফিকের নামে দুটি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।’

পারিশার সাহসিকতার ভাইরাল ভিডিও পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘পারিশা ও তার বন্ধুরা ব্যাপক সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে। তবে চিন্তার বিষয় হচ্ছে, এ ধরনের অপরাধীরা ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করে থাকে। এক্ষেত্রে হয়তো তিনি গুরুতর জখমের শিকার হতে পারতেন। যাই হোক, তিনি চরম বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘পারিশা ছিনতাইকারীদের পোশাক ও শারীরিক গঠন সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দিয়েছেন পুলিশকে। এটি পুলিশের তদন্তে খুবই কাজে লেগেছে। আমরা তার বিবরণী অনুযায়ী ছিনতাই করার সময়কার পোশাক পরিহিত অবস্থাতেই অপরাধীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি।’

তেজগাঁও এলাকায় অনেক ছিনতাই হলেও এখানে পুলিশের ভূমিকা স্পষ্ট নয়। এছাড়া ছিনতাইয়ের ঘটনায় অনেক ভুক্তভোগী মামলা করতে চান না, আবার করতে গেলেও অনেক সময় পুলিশ মামলা নেয় না। শুধু কি ভাইরাল হলেই মোবাইল উদ্ধার হয়?- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তেজগাঁও জোনের এই অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘পারিশা আমাদের অনেক সহযোগিতা করেছেন। তিনি জিডির পর মামলা করেছেন। সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখেছেন।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘এই ছিনতাইয়ে জড়িত আকাশ গত ১৪ জুলাই অন্য একটি মামলায় মাত্র জামিনে বেরিয়েছে। কিন্তু সমস্যা এটাই যে, জামিনে বেরিয়ে আবারও ছিনতাইয়ে জড়াচ্ছে সে। আমরা শুধু তেজগাঁও এলাকাতেই গত জুলাইয়ে অন্তত ৫০টি মোবাইল উদ্ধার করেছি। ৩০ জনের মতো গ্রেফতার করেছি। এর মধ্যে সাতটি মামলার বাদী কিন্তু পুলিশই।’

তিনি জানান, পারিশার মামলায় জড়িতরা যাতে পুনরায় জামিনে বেরিয়ে অপরাধে জড়াতে না পারেন, সেজন্য অপরাধ দমন ও ন্যায় বিচার নিশ্চিতে তদন্ত কার্যক্রম দ্রুততম সময়ে শেষ করা হয়েছে। মামলা করার ১০ দিনের মধ্যে আজ (বুধবার) অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।

এদিকে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ভুক্তভোগী পারিশা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি অনেক খুশি। পুলিশ খুব দ্রুত আমার মোবাইলটি উদ্ধার করেছে। সবচেয়ে খুশির কথা হচ্ছে, ছিনতাইকারীদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আমি বলব, এই ছিনতাইকারীরা যেন কোনোভাবে জামিনে ছাড়া না পায়। আর কেউ যেন ছিনতাইয়ের শিকার না হয়।’

নিজের সাহসিকতা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমাকে জনগণসহ সবাই সাহস দিয়েছেন। আমি চাই, সবাই সবার বিপদে এগিয়ে আসুক। সবাই সাহসিকতার পরিচয় দিক।’

সারাবাংলা/ইউজে/পিটিএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন