বিজ্ঞাপন

জ্বালানী তেলের মূল্য সমন্বয় এবং এর ত্রুটি কোথায়

August 6, 2022 | 3:49 pm

শেখ সাদাফ ইসলাম

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের উর্ধ্বগতির কারণে পার্শ্ববর্তী দেশ সহ বিভিন্ন দেশে নিয়মিত তেলের মূল্য সমন্বয় করে থাকে। ভারত ২২ মে ২০২২ তারিখ থেকে কলকাতায় ডিজেলের মূল্য প্রতি লিটার ১১৪.০৯ টাকা এবং পেট্রোল লিটার প্রতি ১৩০.৪২ টাকা নির্ধারণ করে। বাংলাদেশে কলকাতার তুলনায় ডিজেলের মূল্য লিটার প্রতি ৩৪.০৯ এবং পেট্টোল লিটার প্রতি ৪৪.৪২ টাকা কমে বিক্রয় হচ্ছিল। তাই মূল্য কম থাকায় তেল পাচার হওয়ার আশঙ্কাও ছিল।

বিজ্ঞাপন

এশিয়ার অনান্য দেশ যেমন- নেপালে ডিজেল ১২৭ টাকা, ইন্দোনেশিয়া ১৩৮, সিঙ্গাপুর ১৮৯ টাকা, চীন ১১৮ টাকা, আরব আমিরাত ১২২.৮০ টাকা ও হংকং-এ ২৬০ টাকা। অন্যান্য দেশ অনেক আগেই তাদের জ্বালানির দাম বাড়িয়েছে আর বাংলাদেশ সরকার ভর্তুকি এতদিন দিয়ে এসেছে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার জন্যও অপেক্ষা করেছে।

আওয়ামী লীগ সরকার সব সময় জনগণের স্বস্তি ও স্বাচ্ছন্দ্য বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়। যতদিন সম্ভব ছিল ততদিন সরকার জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির চিন্তা করে নাই। ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের কারণে অবস্থার প্রেক্ষিতে অনেকটা নিরুপায় হয়েই জ্বালানী তেলের মূল্য এডজাস্টমেন্টে যেতে বাধ্য হচ্ছে সরকার।

বাংলাদেশ পেট্টোলিয়াম কর্পোরেশন বিগত ছয় মাসে (ফেব্রুয়ারি ২২ থেকে জুলাই ২০২২ পর্যন্ত) জ্বালানি তেল বিক্রয়ে ৮০১৪.৫১ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে যাতে আল্টিমেটলি আমাদেরই দেয়া ট্যাক্স-এর টাকার ক্ষতি হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বর্তমানে, আন্তর্জাতিক তেলের বাজার পরিস্থিতির কারণে বিপিসির আমদানি কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে এবং দেশের রিজার্ভ ঠিক রেখে দেশ যেন শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতি না হয় তার আগাম সতর্কতা থেকেই দেশের ভবিষ্যৎ ভালোর জন্যই মূল্য সমন্বয় করতে বাধ্য হয়েছে সরকার।

কিন্ত এখন সমস্যা হলো গতকাল রাত ৮-৯ টার দিকে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম আর প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির নির্দেশনা প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই একটা যোদ্ধাংদেহী অবস্থা শহর থেকে মফসল পর্যন্ত গতকাল রাত দেখা গিয়েছে।

কারণ নির্দেশনায় উল্লেখ ছিলো রাত ১২ টার পর থেকে নতুন দাম কার্যকর হবে। আর একথা শোনার পর থেকেই ৯০% পেট্রোল পাম্প তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় বলে যে-তাদের পাম্পের জ্বালানি তেল-এর মজুদ শেষ। কিন্তু ঠিক রাত ১২টা বাজার পর থেকেই তারা নতুন দামে তেল বিক্রি শুরু করে। তাহলে এই ২-৪ ঘন্টা পর তেলের মজুদ কেমনে চলে আসল??

বিজ্ঞাপন

আমার জানামতে একটি পেট্রোল পাম্পে অন্তত ১ দিন এর তেল মজুদ থাকেই। এখন মাঝারি একটি পাম্পে যদি মিনিমাম ১ হাজার লিটার তেল মজুদ থাকে যা তারা বিপিসির কাছ থেকে আগের দামে কিনেছে তাহলে বাংলাদেশ অন্তত ১০০০ পাম্প যদি আগের দামে কেনা তেল বর্তমান দামে বিক্রি করেছে প্রায় ১০০০*১০০০=১০ লক্ষ লিটার। এখন প্রতি লিটার-এ যদি তারা এভারেজ ৩০ টাকা মুনাফা করে থাকে তাহলে তারা প্রায় ৩ কোটি টাকা একরাতের সিদ্ধান্তে জনগনের পকেট থেকে বের করে ফেলেছে। এটা শুধু গুটিকয়েক পেট্রোল পাম্প মালিকদের হিসেব, এখন এসব ক্ষেত্রে বড় বড় ওয়েল সিন্ডিকেট মাফিয়ারা কত হাজার হাজার কোটি টাকা দেশের জনগনের কাছ থেকে নিয়ে নিচ্ছে আর নিবে একবার চিন্তা করুন।

তারপরে আসুন বর্তমান রাজনীতির অন্যতম নিয়ামক ব্যুরোক্র্যাট বা আমলাদের কথায়। এস পার মাই নলেজ মন্ত্রী এমপিদের নিদেশপত্র বাস্তবায়ন এর সুপ্রিম পাওয়ার টাতে আমলাদের মতামত এবং দস্তখত ছাড়া হয় না। এসব আমলারা আরও আগে থেকেই জানত বিশ্বের তেলের বাজার ঊর্ধ্বগামী এবং রিজার্ভ এ কিছু ঘাটতি আছে যা এক প্রকার ওয়ার্নিং এলার্ম, সো তাদের কি উচিত ছিল না স্টেপ বাই স্টেপ দুই-তিন ধাপে বাড়িয়ে বাড়িয়ে জনগণ কে অভ্যস্ত করা। তারা না করে হুট করে এমন ডিক্রি দেয়ার মানে কি? আমার তো মনে হয় তাদের মধ্যে এখনও অনেক সরকার বিরোধী মনোভাবাপন্ন আমলা মানুষকে কালকে দিন রাতে একটা শ্রীলঙ্কা জুজুর ভয় দেখালো যেন মানুষ উত্তেজিত হয়, সরকার বিরোধী হয়।

তাহলে একবার চিন্তা করুন আমাদের সরকারের দোষ টা কোথায়, হ্যা সরকারের দোষ এতটুকু সরকার এখনো বুঝতে পারছে না সরকারকে অপমানিত করানোর জন্য এখনও অনেক রাষ্ট্রবিরোধী প্রেত্মাদের ব্যবসায়ী ও আমলা সিন্ডিকেট সুযোগ এর অপেক্ষায় বসে আছে। এদের বিরুদ্ধে দ্রুত সময়ে ব্যবস্থা না নিলে এরা সুযোগ পেলেই সরকার ও দেশের জনগন এর টুটি চেপে ধরবে বলে দিলাম।

শোকের মাসে স্বাধীনতা বিরোধীরা বরাবরই আওয়ামী লীগ এর ক্ষতি করতে চেয়েছে এবং যারা সরকারকে এইভাবে বুদ্ধি দিয়ে কাজটা করিয়েছে তারা আসলেই কি সরকার এর ভালো চায় না মন্দ তা নিয়ে আমি সন্দিহান। এই দুর্নীতিবাজ-ব্যবসায়ী-আমলাদের ট্রাইএঙ্গেল সিন্ডিকেট এর পরামর্শ মেনে অনেক দেশ এর যে বারোটা বেজেছে তা একটু ঘাটাঘাটি করলেই জানতে পারবেন। প্রিয় আপা, এসব ট্রাইএঙ্গেল সিন্ডিকেট-এর হোতাদের খুঁজে বের করুন। কেননা এই দেশের মানুষ এর ভালো আপনি ছাড়া আর কেউ চায় না। আর এজন্য এরা চায় আপনার বিরুদ্ধে বাংলার সাধারন জনগনকে নেগেটিভ মেসেজ দিয়ে আপনার ইমেজ এর ক্ষতি করা যা একজন মানুষ হিসেবে আমরা মেনে নিতে পারি না। কেননা আমরা বিশ্বাস করি যতদিন শেখ হাসিনার হাতে দেশ, পথ হারাবে না বাংলাদেশ।

বিজ্ঞাপন

লেখক: রাজনীতিবিদ

প্রিয় পাঠক, লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই ঠিকানায় -
sarabangla.muktomot@gmail.com

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব, এর সাথে সারাবাংলার সম্পাদকীয় নীতিমালা সম্পর্কিত নয়। সারাবাংলা ডটনেট সকল মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে মুক্তমতে প্রকাশিত লেখার দায় সারাবাংলার নয়।

সারাবাংলা/এসএসএ/এএসজি

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন