বিজ্ঞাপন

জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর

August 8, 2022 | 1:02 pm

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: সারাদেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর। বিশেষ করে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছে জাদুঘরটি বঙ্গবন্ধুকে আরও জানার সুযোগ করে দিয়েছে বলে জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

জাদুঘর সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, জাদুঘরটি স্টেশনে থামতেই একরকম জনারণ্যে পরিণত হয়। বেশিরভাগ স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পরিদর্শনে আসছেন। পাশাপাশি নানা শ্রেণি-পেশার মানুষও জাদুঘর ঘুরে দেখছেন।

গত ১ আগস্ট গোপালগঞ্জ শহরের রেলওয়ে স্টেশনে ভ্রাম্যমাণ জাদুঘরটি রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের উদ্বোধনের পর পরই দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়। এরপর থেকে একেকটি স্টেশনে যতদিন জাদুঘরটি অবস্থান করছে , ততদিনই প্রচুর দর্শনার্থী সমাগম হয়েছে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ, অধিকার আদায়ে আন্দোলন, সংগ্রাম এবং তার অসামান্য কর্মজীবন প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে এক ব্যতিক্রমধর্মী ভ্রাম্যমাণ জাদুঘর নির্মাণ করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। যা বাংলাদেশে এ ধরনের উদ্যোগের মধ্যে এটিই প্রথম।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ রেলওয়ে মুজিব জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে নতুন প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানান দিতেই এ ব্যতিক্রমী আয়োজন করেছে। একটি মিটারগেজ ও একটি ব্রডগেজ রেল কোচের ভেতরে গড়ে তোলা ভ্রাম্যমাণ জাদুঘরটি ২৭ এপ্রিল উদ্বোধন করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এভাবেই সেজেছে রেল জাদুঘর

এভাবেই সেজেছে রেল জাদুঘর

শোকের মাসের প্রথমদিনে গোপালগঞ্জ শহরের রেলওয়ে স্টেশনে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। উদ্বোধনের পর থেকেই বিভিন্ন বয়সের মানুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর দেখতে স্টেশনটিতে ভিড় করছেন। এই স্টেশনে পাঁচদিন অবস্থান করে এটি অন্য আরেকটি স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

এই জাদুঘরে ১৯২০ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ১২টি গ্যালারির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। কোচের একপাশের দেয়ালের ছয়টি ভাগে রাখা হয়েছে কিংবদন্তির প্রথম প্রহর, ধ্রুবতারার প্রথম কিরণ, নক্ষত্র হওয়ার পথে, বাংলার মাটি ও ভাষার বঙ্গবন্ধু, ধূমকেতু থেকে নক্ষত্র, মুক্তির স্বপ্নের সূচনা শিরোনামে বঙ্গবন্ধুর জীবনচরিত। এখানে তুলে ধরা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর শৈশব থেকে পর্যায়ক্রমে তার ছাত্রজীবন, রাজনীতিতে হাতেখড়ি, মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করার মাধ্যমে গণমানুষের প্রাণের নেতা হয়ে ওঠা। আরও রয়েছে, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক, অধিকার আদায়ের সংগ্রামে অবর্ণনীয় নির্যাতন, চুয়ান্নর যুক্তফ্রন্ট, মিথ্যা মামলা ও কারাভোগ, স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে আপসহীন সংগ্রামের ইতিহাস।

বিজ্ঞাপন

আরেকপাশের দেয়ালে থাকা ছয় ভাগে রয়েছে, দুর্বার পথচলা, নিপীড়িতদের কাণ্ডারি, এক নতুন স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন, মুক্তি, সংগ্রাম ও স্বাধীনতার কথা, স্বপ্নগড়ার দিনগুলো, যে আলো নেভেনি আজও এমন শিরোনামে শিল্প প্রদর্শনী। এতে বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ৬৬ এর ঐতিহাসিক ছয় দফা, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও জাতির গৌরবোজ্জ্বল, একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা অর্জনের প্রধান নায়ক হিসেবে বঙ্গবন্ধুর অবদান দর্শকদের চোখের সামনে জীবন্ত হয়ে উঠবে। কোচের এক প্রান্তে রাখা একটি বড় এলইডিতে রাখা হয়েছে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশে দেওয়া বঙ্গবন্ধুর বক্তব্য ও সাত মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ। অর্থাৎ প্রতিটি গ্যালারিতে ডিসপ্লের পাশাপাশি শ্রবণযন্ত্রের মাধ্যমে তৎকালীন প্রেক্ষাপটের ধারা বর্ণনা দেওয়া হচ্ছে। ভিডিওচিত্রের সঙ্গে ধারা বর্ণনা শুনে নতুন প্রজন্ম ইতিহাস জানার সুযোগ পাচ্ছে।

শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত জাদুঘরটিতে আরও রাখা হয়েছে জয়বাংলা স্লোগানের আদলে তৈরি করা একটি বুক শেলফ। বইগুলোর মধ্যে শিশুদের জন্য বঙ্গবন্ধুর রচিত বিভিন্ন শিশুতোষ বই। ‘যাদু মনি’ সম্বোধন করে মেয়ে হাসুকে নিয়ে লেখা বঙ্গবন্ধুর চিঠিসহ মোট ছয়টি চিঠি রাখা হয়েছে। দর্শকদের নজর কাড়ার জন্য ভেতরেই তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম ফুলের বাগান। আরও রয়েছে জাতির পিতার ব্যবহৃত পোশাক ও জিনিসপত্রের প্রতিকৃতি। রয়েছে বঙ্গবন্ধুর সমাধিস্থল, স্মৃতিসৌধ, তার হাতে লেখা চিঠি। জাদুঘরটি রয়েছে একটি ডিসপ্লে, যেখানে বঙ্গবন্ধুর জীবনের নানা সময়ের ভিডিও চিত্র প্রদর্শিত হচ্ছে। এর পেছনে বেজে চলে ‘তুমি ইতিহাস জুড়ে সর্বশ্রেষ্ঠ মহানায়ক এই বাংলার তুমি শোষকের জম শোষিতের দম স্রষ্টা স্বাধীনতার’ রেলওয়ে কর্মকর্তা মো. মঞ্জুর উল আলম চৌধুরীর লেখা গানটি জাদুঘরে থিম সং হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। আর কোচ দুটির বাইরের অংশে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত ধারাবাহিক সংগ্রামের ওপর শিল্পীর আঁকা রঙিন ম্যুরাল চিত্র।

নতুন প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধুকে এভাবে তুলে ধরতে এর মূল পরিকল্পনা করেন রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (রোলিং স্টক) মো. মঞ্জুর উল আলম চৌধুরী। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘সাধারণত মানুষ জাদুঘরের কাছে যায় কিন্তু আমাদের ভ্রাম্যমাণ জাদুঘর মানুষের কাছে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর অসামান্য কর্মজীবন তুলে ধরবে। আমরা গ্রামীণ মানুষকে টার্গেট করেছি যাতে প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্টেশনে রেখে গ্রামীণ মানুষের কাছে তার জীবন তুলে ধরা যায়।’

বিজ্ঞাপন
রেল জাদুঘরে বঙ্গবন্ধুর ব্যবহৃত চশমা

রেল জাদুঘরে বঙ্গবন্ধুর ব্যবহৃত চশমা

তিনি বলেন, ‘আসলে একটি মাত্র কোচে বঙ্গবন্ধুকে ধারণ করা প্রায় অসম্ভব একটি কাজ। সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। ভুল ত্রুটি থাকা স্বাভাবিক। সবার ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টি কামনা করছি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটিকে আরও সমৃদ্ধ করা হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এরই মধ্যে জাদুঘরটি ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। যে সব স্থানে রেল লাইন রয়েছে, প্রতিটি স্টেশনে এই জাদুঘর ঘুরবে।’

শিডিউল অনুযায়ী গত ৫ আগস্ট পর্যন্ত পাঁচদিন জাদুঘরটি গোপালগঞ্জে অবস্থান করে। এরপর শনিবার (৬ আগস্ট) অবস্থান করছে কাশিয়ানীতে সেখানে দুইদিন অবস্থান করে তারপর যাবে ভাটিয়াপাড়া ঘাট। সেখানে দুইদিন অবস্থান করে এরপর যাবে মধুখালী জং, সেখানে ১৩ আগস্ট পর্যন্ত দুইদিন অবস্থন করবে। এরপর রাজবাড়ীতে অবস্থান করবে ১৭ আগস্ট পর্যন্ত তিনদিন। আর ফরিদপুরে দুইদিন থেকে পাংশা স্টেশনে ২৩ আগস্ট পর্যন্ত দুইদিন অবস্থান করে যাবে কুমারখালী এলাকায়। সেখানে ২৬ আগস্ট পর্যন্ত দুইদিন অবস্থান করবে। এরপর জাদুঘরটি কালুখালী জং এলাকায় থাকবে ২৯ আগস্ট পর্যন্ত। কুষ্টিয়াতেও দুইদিন অবস্থান করবে। পূর্বাঞ্চলে মোট ২৪ দিন পরিদর্শনের জন্য ঘুরবে এই জাদুঘর। এ ছাড়া খুলনা শহরে থাকবে ৬ দিন, দৌলতপুর স্টেশনে থাকবে ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর, নোয়াপাড়া স্টেশনে ১২ ও ১৩ সেপ্টেম্বর, যশোরে ১৫ থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর মোট ৪ দিন অবস্থান করবে।

সীতাকুণ্ডে রেল জাদুঘর দেখতে শিক্ষার্থীরা

বেনাপোলে দুইদিন, মোবারকগঞ্জে দুইদিন, দর্শনায় দুই দিন এবং চুয়াডাঙ্গা স্টেশনে ১ দিন করে এই অঞ্চলে মোট ২৩ দিন অবস্থান করবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর। আর মিটার গেজ শুরু হয় চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে। সেখানে ১ আগস্ট থেকে ৫ আগস্ট অবস্থান করে শনিবার ( ৬ আগস্ট) ভাটিয়ারি স্টেশনে চলে যায়। সেখানে দুইদিন, সীতাকুণ্ডে ৯ আগস্ট পর্যন্ত দুইদিন, চিনকি আস্তানা স্টেশনে ১১ আগস্ট পর্যন্ত দুই দিন, ফেনী জংশনে ৪ দিন, গুণবতীতে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনদিন, নাঙ্গলকোর্টে চারদিন, লাকসাম জংশনে ৫ দিন, চৌমুনীতে ২৫ আগস্ট পর্যন্ত অবস্থান করবে। আর মাইজদীকোর্টে ২৭ আগস্ট পর্যন্ত অবস্থান করবে। নোয়াখালীতে চারদিন ২৯ আগস্ট পর্যন্ত অবস্থান করবে। এরপর চাঁদপুর স্টেশনে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত, কুমিল্লায় ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত, আখাউড়াতে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত, ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত, ভৈরববাজার ১২ সেপ্টেম্বর , নরসিংদীতে ১৪ সেপ্টেম্বর, টঙ্গীতে ১৬ সেপ্টেম্বর, ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে ১৮ সেপ্টেম্বর, ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর, ফতুল্লা ২৩ সেপ্টেম্বর, চাষাড়া স্টেশনে ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এবং নারায়ণগঞ্জ স্টেশনে ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৫০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই জাদুঘর অবস্থান করবে।

সারাবাংলা/জেআর/একে

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন