বিজ্ঞাপন

অনুমতি ১ বছরের, বিধি ভেঙে নর্থ সাউথে পড়াচ্ছেন ৪ বছর

August 13, 2022 | 6:11 pm

রাহাতুল ইসলাম রাফি, ঢাবি করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. এ কে এম রেজাউল করিম। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন অধ্যাপনার জন্য এক বছরের অনুমতি পান ২০১৭ সালের অক্টোবরে। তবে বিধি ভেঙে প্রায় চার বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে খণ্ডকালীন অধ্যাপনা চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে। আর এই পরিপ্রেক্ষিতে বিধি ভঙ্গের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানিয়েছে বিভাগটির বর্তমান চেয়ারম্যান মো. কামাল উদ্দিন।

বিজ্ঞাপন

এছাড়াও অধ্যাপক রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে আছে আরও বেশ কিছু অভিযোগ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সহকর্মীদের হেয়প্রতিপন্ন করা, বিভাগটির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাসরীন ওয়াদুদকে শারীরিক ও মানসিকভাবে ‘বিকারগস্ত’ বলে সম্মানহানি করা, বিভাগের দুই শিক্ষক সমন্ধে মিথ্যাচার, প্রাক্তন চেয়ারম্যানের সঙ্গে একাডেমিক ও প্রশাসনিক বিষয়ের আলোচনা গোপনে রেকর্ড করাসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।

এর মধ্যে একটি ঘটনায় ক্ষমাও চেয়েছেন তিনি। ‘অশিক্ষকসুলভ আচরণ এবং অপেশাদার কার্যকলাপের প্রেক্ষাপটে’ তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে সম্প্রতি উপাচার্য বরাবর লিখিত আবেদন জানিয়েছেন একই বিভাগের অন্তত ১০জন শিক্ষক।

আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৭ অক্টোবর ২০১৭ মনোবিজ্ঞান বিভাগের সমন্বয় ও উন্নয়ন কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অধ্যাপক ড. এ কে এম রেজাউল করিমকে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে নিয়োগদানের জন্য সুপারিশ করা হয়। ওই মাসের ২৯ তারিখে অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের সভায় বিভাগীয় কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি না করার শর্তে এক বছরের জন্য তাকে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে পাঠদানের জন্য অনুমতি দেওয়া হয়। পরের মাসের ৭ তারিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন রেজিস্ট্রারের সই করা চিঠির মাধ্যমে অনুমতি প্রাপ্তির বিষয়টি অধ্যাপক রেজাউল করিমকে জানানো হয়। চিঠির একটি কপি সারাবাংলার কাছে সংরক্ষিত আছে।

বিজ্ঞাপন

চিঠিতে বলা হয়, ‘২৯/১০/২০১৭ তারিখের সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আপনাকে জানানো যাচ্ছে যে, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজের ব্যাঘাত সৃষ্টি না করার শর্তে ১ (এক) বছরের জন্য নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে পাঠদানের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।’

তবে অনুমোদিত এক বছর পার হওয়ার পরও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনুমতি না নিয়েই বর্তমান সময় পর্যন্ত তিনি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে অধ্যাপনা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। অনুমতিবিহীন এই সময় প্রায় চার বছর।

এদিকে, বিনা অনুমতিতে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে অধ্যাপনা করার অভিযোগে অধ্যাপক ড. এ কে এম রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গত ২ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বরাবর চিঠি পাঠিয়েছেন মনোবিজ্ঞান বিভাগের বর্তমান চেয়ারম্যান মো. কামাল উদ্দিন। ওই চিঠির একটি কপি সারাবাংলার কাছে সংরক্ষিত আছে।

বিজ্ঞাপন

অভিযোগের বিষয়ে জানতে অধ্যাপক ড. এ কে এম রেজাউল করিমের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে হোয়াটসঅ্যাপে খুদেবার্তা পাঠালে তারও কোনো উত্তর দেননি তিনি।

এদিকে, প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপাচার্য বরাবর আবেদন করার বিষয়টি স্বীকার করে মনোবিজ্ঞান বিভাগের বর্তমান চেয়ারম্যান মো. কামাল উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘হ্যাঁ, এমন একটি আবেদন করেছি। তিনি (অধ্যাপক রেজাউল করিম) পারমিশন না নিয়ে এমন কাজ করেছেন। যখন উনাকে একবছরের জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজের ব্যাঘাত সৃষ্টি না হওয়ার শর্ত ছিল সেখানে। অধিকন্তু, এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি পরিপন্থী কাজ।’

অনুমোদিত সময়ের বাইরে বিনা অনুমতিতে অতিরিক্ত সময় অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষকতা করা বিধিসম্মত নয় উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, ‘ওই বিভাগ থেকে অনেকগুলো অভিযোগ আসছে। এগুলো একটু ভালোমতো দেখা দরকার। এ ব্যাপারে আমি জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন এ কে এম মাহবুব হাসানকে দায়িত্ব দিয়েছি। সম্প্রতি বিধি ভেঙে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো সংক্রান্ত একটি চিঠি এসেছে। সেটাও জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিনের কাছে পাঠিয়েছি। উনাকে বলেছি, সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেদন দিতে। দেখি, এরপর কী বেরিয়ে আসে।’

সার্বিক বিষয়ে জানতে জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. এ কে এম মাহবুব হাসানকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। এদিকে, অধ্যাপক রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে আছে আরও বেশ কিছু অভিযোগ। অশিক্ষকসুলভ আচরণ এবং অপেশাদার কার্যকলাপের প্রেক্ষাপটে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের কাছে তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে আবেদন করেছেন বিভাগের অন্তত ১০ শিক্ষক।

বিজ্ঞাপন

চলতি বছরের ১৯ জুলাই উপাচার্য বরাবর করা সেই আবেদনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সহকর্মী শিক্ষকদের হেয়প্রতিপন্ন করা, বিভাগটির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাসরীন ওয়াদুদকে শারীরিক ও মানসিকভাবে ‘বিকারগস্ত’ বলে সম্মানহানি করা, বিভাগের অন্য দুই শিক্ষক সমন্ধে মিথ্যাচার করা, একাডেমিক কমিটির সভায় একজন শিক্ষককে অশোভনীয় ভাষায় গালি দেওয়া, প্রাক্তন চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাসরীন ওয়াদুদের সঙ্গে একাডেমিক ও প্রশাসনিক বিভিন্ন বিষয়ের আলোচনা গোপনে রেকর্ড করাসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগের কথা সংযুক্ত করা হয়।

এর মধ্যে মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষকদের অযোগ্য ও অদক্ষ বলে অভিহিত করে বিভাগটির তদানীন্তন চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর একটি চিঠি পাঠানো এবং ওই চিঠি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শেয়ারের মাধ্যমে তার সহকর্মীদের ‘হেয়প্রতিপন্ন করার’ ঘটনায় ক্ষমাও চেয়েছিলেন অধ্যাপক রেজাউল করিম।

ক্ষমা চাওয়া প্রসঙ্গে ২০১৬ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর মনোবিজ্ঞান বিভাগের তৎকালীন চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাসরীন ওয়াদুদ বরাবর একটি পত্র দেন অধ্যাপক রেজাউল করিম। যার একটি কপি সারাবাংলার কাছে সংরক্ষিত আছে। পত্রে তিনি লেখেন, ‘২০১৬ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর লিখিত চিঠি এবং ফেসবুকে মনোবিজ্ঞান বিভাগের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে আমার দেওয়া বক্তব্য সম্পর্কে আমি অত্যন্ত দুঃখিত এবং তা পরিহার করছি।’

ওই পত্রে তিনি আরও লেখেন—‘…মানুষ ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। আমিও মানুষ। আশা করি আপনারা সবাই বিষয়টিকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।’

সারাবাংলা/আরআইআর/পিটিএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন