বিজ্ঞাপন

ঢামেক ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার

August 14, 2022 | 7:49 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক একেএম সাজ্জাদ হোসেনকে মারধরের ঘটনায় ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের ডাকা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

রোববার (১৪ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সভাকক্ষে পুলিশ প্রশাসন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকের পর এই সিদ্ধান্ত নেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।

সভায় উপস্থিত ছিলেন, ঢাবির সহকারী প্রক্টর লিটন কুমার সাহা, ঢাকা মেট্রোপলিটনের রমনা জোনের উপকমিশনার মো. শহীদুল্লাহ, শাহবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মওদুত হাওলাদার, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ, সভাপতি অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সনাল, ঢামেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক, ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. টিটো মিঞা, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়সহ ইন্টার্ন চিকিৎসক ও নেতাকর্মীরা।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. মো. মহিউদ্দিন জিলানী বলেন, ‘১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস। এছাড়া চিকিৎসা সেবার কথা মাথায় রেখে আমরা আমাদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। আজ থেকেই আমরা কাজে যোগদান করছি। জড়িতদের শনাক্তে সবাই আমাদের আশ্বস্ত করেছেন এবং তাদের কাজের অগ্রগতীও দেখতে পাচ্ছি।’

বিজ্ঞাপন

সভায় ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডা. মারুফ উল আহসান শামীম বেশ কিছু দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো- তদন্ত কার্যক্রম দ্রুত ও জোরদারভাবে চালু রেখে দোষীদের শনাক্তের পর আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা। যাতে ভবিষ্যতে আর কেউ এমন ঘটনা ঘটাতে সাহস না পায়। এলাকাটি সম্পূর্ণ সিসিটিভির আওতায় আনা ও নিরাপত্তায়, রেপিড রেসপন্স টিম গঠন করা। এছাড়া চিকিৎসকদের কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক বলেন, ‘ইন্টার্ন চিকিৎসককে মারধর করা ন্যাক্কারজনক ঘটনা। তাদের ডাকা কর্মবিরতিতে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা ব্যহত হচ্ছিল। তবে রোগীদের সেবার কথা চিন্তা করে আজ তারা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।’

শাহবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মওদুত হাওলাদার বলেন, ‘শহীদ মিনারের যেই অংশে এই ঘটনা ঘটেছে সেই অংশটুকু সেখানকার সিসিটিভি ক্যামেরা কাভার করেনি। ভুক্তভোগীর বর্ণনা মতে, অভিযুক্তরা ঢাবির ১ম বর্ষ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছিল। এজন্য বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। দ্রুতই দোষীদের শনাক্ত করা সম্ভব হবে।’

বিজ্ঞাপন

ঢাবির সহকারী প্রক্টর লিটন কুমার সাহা বলেন, ‘অপরাধীর কর্মকাণ্ড ও উশৃঙ্খলতার দায়ভার প্রতিষ্ঠানের না। অভিযুক্তরা বিজয় একাত্তর হলের গেঞ্জি পড়া ছিল, তা দেখেই যে তারা ওই হলের হবে এমনটিও না। এটি প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না। দোষীদের শনাক্ত করার দায়িত্ব ঢাবির না। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সর্বোচ্চ সহযোগিতা ও সাজা নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে।’

সিসিটিভি ক্যামেরার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আউটডোর সিসি ক্যামেরা রাখা এত সহজ নয়। ঢাবিতে ৫ বছরে ১ হাজার সিসি লাগানো হয়েছে। শহীদ মিনারে অন্তত ৫ বার লাগানো হয়েছে। তবে সেগুলা অনেক সময় চুরি হয়ে যায় বা নষ্ট হয়ে যায়। ইন্টার্ন চিকিৎসককে মারধরের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকেও একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।’

ভুক্তভোগী ইন্টার্ন চিকিৎসক একেএম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘দেশের এই গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় নিরাপত্তার এই অবস্থা দেখে আমি অবাক।’

ঢাবি শিক্ষার্থীদের কর্মকাণ্ডের দায় ঢাবি কর্তৃপক্ষ নেবে না- ঢাবির সহকারী প্রক্টরের দেওয়া এমন বক্তব্যের বিরোধিতা করে তিনি বলেন, ‘ঢাবিতে ১ম বর্ষে যারা ভর্তি হয় তখনই তাদের ব্রেইন ওয়াশ করা হয় যে, শহীদ মিনার জায়গাটা ঢাবির। বুয়েট বা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে সঙ্গে তো কখনো এমন ঘটনা ঘটে না। ঢাবির সঙ্গে কেন এমন হয়? তাদের উশৃঙ্খলতা শিক্ষা দেওয়া হয়। তাদের সুশিক্ষা না দেওয়া হলে এমন ঘটনা ঘটবেই।’

বিজ্ঞাপন

স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সনাল বলেন, ‘হাসপাতালের চিকিৎসকদের নিরাপত্তা আইন করা হচ্ছে। আর এই ঘটনার বিচার আদায়ের দায়িত্ব আমরা নিলাম। তারা ঢাবির ছাত্র হলে ঢাবি শাস্তি নিশ্চিত করবে আর ছাত্র না হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তা নিশ্চিত করবে।’

স্বাচিপ মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ বলেন, ‘ইন্টার্ন চিকিৎসক তাদের বিচারের দাবিতে কর্মবিরতি দিয়ে এটি অন্যায় কিছু করেনি। শহীদ মিনার কারও সম্পত্তি না। ঢামেক ছাত্ররাই সর্বপ্রথম এটি তৈরি করেছিল। পরবর্তীতে এর দায়িত্ব ঢাবিকে দেওয়া হয়। এটি জাতীর সম্পদ। এখানে বহিরাগত বলতে কিছু নেই।’

সভায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, ‘ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিত। এতে পরিবারিক শিক্ষার অভাবও থাকতে পারে। যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের শাস্তি পেতে হবে।’

এর আগে, ৮ আগস্ট রাত সাড়ে ৯টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ঢাকা মেডিকেলের ইন্টার্ন চিকিৎসক একেএম সাজ্জাদ হোসেন মারধরের শিকার হন। তিনি অভিযোগ করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরিচয় দেওয়া ও ঢাবির টি-শার্ট পড়া কয়েকজন যুবক তার পরিচয় জানতে চায়। ইন্টার্ন চিকিৎসকের পরিচয় দেওয়ার পরও তারা তাকে ব্যাপক মারধর করে।

এরপর দিন ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদ জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয়। ৪৮ ঘণ্টায় কোনো সুরাহা না হওয়ায় গত বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) বেলা ১২টা থেকে শুরু হয় তাদের কর্মবিরতি।

সারাবাংলা/এসএসআর/এনএস

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন