বিজ্ঞাপন

আইন শিক্ষানবিশের মৃত্যু: ডিবি পুলিশকে অব্যাহতির আদেশ স্থগিত

August 15, 2022 | 4:09 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বরিশাল জজ কোর্টের আইন শিক্ষানবিশ রেজাউল করিমকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগের মামলায় গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) এসআই মহিউদ্দিনকে অব্যাহতি দিয়ে বিচারিক আদালতের দেওয়া আদেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে বিচারিক আদালতের দেওয়া আদেশ কেন বাতিল ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।

বিজ্ঞাপন

এক রিভিশন আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি মো. বশির উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রোববার (১৪ আগস্ট) এ আদেশ দেন।

আদালতে রিভিশন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. এনামুল হক মোল্লা।

আদেশের পরে আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির সারাবাংলাকে জানান, বরিশালের শিক্ষানবিশ আইনজীবী রেজাউল করিমকে পুলিশ হেফাজতে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগের মামলায় এসআই মহিউদ্দিনকে অব্যাহতি দিয়ে বিচারিক আদালতের প্রদান করা আদেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেছেন। একই সঙ্গে পুলিশ সদস্যকে অব্যাহতি দিয়ে বিচারিক আদালতের দেওয়া আদেশ কেন বাতিল ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন। চার সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

আইনজীবী শিশির মনির আরও বলেন, আমরা আগামী ছয় মাস (স্থগিতাদেশের নির্ধারিত সময়ের পর) পর এ ঘটনায় নতুন করে বিচার বিভাগীয় তদন্তের জন্য আদালতে আবেদন করব।

মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর রাত ৮টার দিকে বরিশাল নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের হামিদ খান রোডের একটি চায়ের দোকানের সামনে থেকে আইন শিক্ষানবিশ রেজাউল করিমকে আটক করে ডিবি পুলিশ। পরে রেজাউলের কাছে এলাকার দুই মাদক ব্যবসায়ীর নাম জিজ্ঞেস করলে সে মাদক ব্যবসায়ীর নাম জানেন না বললে তাকে ধরে নিয়ে যায় এবং পকেটে মাদকের ইনজেকশন রাখার অভিযোগে মাদক মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।

আইনজীবী শিশির মনির জানান, গ্রেফতারের পর রেজাউলকে নির্যাতন করা হয় এবং পরবর্তীতে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। কারাগারে তার অবস্থার অবনতি হলে রেজাউলকে ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর ২ জানুয়ারি ভোর রাতে ওই হাসপাতালে রেজাউলের মৃত্যু হয়।

বিজ্ঞাপন

অতঃপর রেজাউল করিমকে পুলিশ হেফাজতে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে তার বাবা ইউনুস মুন্সী স্থানীয় থানায় মামলা করতে গেলে থানা কর্তৃপক্ষ মামলা নিতে অস্বীকার করে।

পরবর্তীতে এ ঘটনায় একই বছরের গত ৫ জানুয়ারি ডিবির এসআই মহিউদ্দিন আহমেদকে প্রধান আসামি করে আদালতে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে মামলা দায়ের করা হয়। বরিশাল মেট্রোপলিটন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে রেজাউলের বাবা ইউনুস মুন্সী বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন।

আদালত মামলার শুনানি নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) এ ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেন। পরে আদালতের ওই আদেশের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে আপিল করেন মামলার বাদী ইউনুস মুন্সী।

হাইকোর্ট ২০২১ সালের ৩ মার্চ বরিশালের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটকে এ ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত করতে নির্দেশ দেন। বিচারপতি এম. এনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

বিজ্ঞাপন

তারপর বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে ডিবির এসআই মহিউদ্দিনকে অব্যাহতি দিয়ে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। ওই প্রতিবেদনের ওপর আদালতে মামলার বাদী ইউনুস মুন্সী নারাজি দেন। এরপর আদালত নারাজি আবেদন খারিজ করে আসামিকে অব্যাহতি দিয়ে আদেশ দেন।

পরবর্তীতে আসামিকে অব্যাহতি প্রদান করে বিচারিক আদালতের দেওয়া আদেশ স্থগিত চেয়ে চলতি বছরের জুলাই মাসে হাইকোর্টে রিভিশন আবেদন দায়ের করেন রেজাউলের বাবা ইউনুস মুন্সী।

গতকাল (১৪ আগস্ট) ওই রিভিশন আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারিক আদালতের দেওয়া আদেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে আসামিকে অব্যাহতি প্রদান করে বিচারিক আদালতে দেওয়া আদেশ কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন। চার সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

উল্লেখ্য, রেজাউল করিম বরিশাল নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের হামিদ খান সড়কের বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী ইউনুস মুন্সীর ছেলে। তিনি জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য জাকির হোসেন মিন্টুর সঙ্গে কাজ করে।

সারাবাংলা/কেআইএফ/একে

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন