বিজ্ঞাপন

তেলের বিশ্ববাজারে স্বস্তির আভাস

August 16, 2022 | 8:43 am

আতিকুল ইসলাম ইমন, নিউজরুম এডিটর

ঢাকা: চীনে অর্থনৈতিক মন্দাভাবের প্রভাবে জ্বালানি তেলের চাহিদা কমছে। এতে বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম কিছুটা কমতির দিকে রয়েছে। এছাড়া সৌদি আরবের রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানি আরামকোর তরফ থেকে আসা বছর শেষে দৈনিক আরও ২০ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন বাড়ানোর ইঙ্গিত এবং ইরান ফ্যাক্টর বিশ্ববাজারে পণ্যটির দর কমাতে ভূমিকা রাখছে।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (১৫ আগস্ট) বিশ্ববাজারে ডব্লিউটিআই ও ব্রেন্ট ক্রুডের দাম কমেছে আগের দিনের তুলনায় ৫ শতাংশ পর্যন্ত। ওয়েল প্রাইস ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, সোমবার শুরুতে প্রতি ব্যারেল ডব্লিউটিআই ক্রুড ফিউচার ৮৬.৮২ ডলারে নেমে আসে। যদিও দিনভর এ দাম স্থির থাকেনি, বরং কিছুটা বেড়ে ৮৯ ডলারের বেশি দরে বিক্রি হয়েছে। একই দিনে ব্রেন্ট ক্রুডের দর ৯২.৭৮ ডলার পর্যন্ত নেমে আসলেও পরে ৯৪ থেকে ৯৫ ডলারে স্থির হয়।

গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর তেলের দাম বাড়তে থাকে। তবে সোমবারের এই দর যুদ্ধ শুরুর পর সর্বনিম্ন। বিশ্ববাজারে তেলের বাড়তি দামের কারণে ভোক্তা দেশগুলোর অর্থনীতি চাপে পড়েছে। জ্বালানি তেলের দাম কমার এ ধারা অব্যাহত থাকলে এসব দেশের অর্থনীতি কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে।

জুলাইয়ের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, শূন্য কোভিড নীতি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে নানা বিধিনিষেধে চীনের অর্থনীতি গতি হারিয়েছে। দেশটিতে গত জুলাইয়ে আবাসন খাতে বিনিয়োগ কমেছে ১২.৩ শতাংশ। বিনিয়োগ বাড়াতে চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক দ্য পিপলস ব্যাংক অব চায়না সোমবার শোদের হার কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। এ ঘোষণায় চীনের অর্থনৈতিক মন্দাভাবের আভাস বিনিয়োগকারীদের কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, চীনে চলতি বছরে ৫ থেকে ৫.৫ শতাংশের মধ্যে প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হবে না। চীনে মন্দার আভাসে দেশটিতে তেলের চাহিদা কমেছে।

বিজ্ঞাপন

চীনের তেল শোধনাগার থেকে প্রাপ্ত পরিসংখ্যানও দেশটির অর্থনীতির জন্য সন্তোষজনক নয়। সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, শোধনাগারের সরবরাহ দৈনিক ১ কোটি ২০ লাখ ৫৩ হাজার ব্যারেলে নেমে এসেছে যা ২০২০ সালের মার্চের পর সর্বনিম্ন।

এদিকে দৈনিক অপরিশোধিত তেলের উৎপাদন আরও ২০ লাখ ব্যারেল পর্যন্ত বাড়াতে প্রস্তুত সৌদি আরবের তেল কোম্পানি আরামকো। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানটির বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে আয়-ব্যয়ের হিসাব উপস্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আমিন নাসের জানান, সৌদি সরকার নির্দেশ দিলে দৈনিক ১ কোটি ২০ লাখ ব্যারেল পর্যন্ত তেল উৎপাদন করতে পারবে আরামকো। বিশ্বের শীর্ষ তেল রফতানিকারক দেশটির এ প্রতিষ্ঠানের তরফ থেকে আসা এমন ঘোষণায় তেলের বাজারে কিছুটা স্বস্তি এসেছে।

আয়-ব্যয়ের প্রতিবেদন প্রকাশ করে আরামকোর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, তেলের দাম বাড়ার ফলে চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৯০ শতাংশ আয় বেড়েছে তার প্রতিষ্ঠানের। তিনি জানান, বিশ্বব্যাপী তেলের চাহিদা বাড়ছে, এশিয়ায় চাহিদা সামনে আরও বাড়বে। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান, চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন বাড়ানো হয়নি, এছাড়া সম্প্রতি তেল শিল্পে বড় বিনিয়োগও হয়নি। তেলক্ষেত্রে কম বিনিয়োগের কারণে বিশ্বে তেলের দাম বেড়েছে। আয় বাড়ার ফলে আরামকোর তেলক্ষেত্রে বড় বিনিয়োগের ইঙ্গিত দেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

তেলের দর হ্রাসে ইরান ফ্যাক্টরও কাজ করছে। ইরানকে পারমানবিক অস্ত্র কর্মসূচি থেকে বিরত রাখতে ফের জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশন চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের যুক্ত হওয়ার জন্য গত বছর থেকে ভিয়েনায় চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া এবং যুক্তরাজ্য আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি ইরানের সঙ্গে ৫ দেশের এ আলোচনায় অগ্রগতি হয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র এ চুক্তিতে ফিরলে ইরানের তেল আবারও নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত হতে পারে। অন্যতম শীর্ষ উৎপাদক দেশ ইরান বিশ্ববাজারে নিষেধাজ্ঞামুক্ত হলে তেলের দর কমবে।

প্রসঙ্গত, ওপেকের সর্বশেষ মাসিক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, জুলাইয়ে বিশ্বব্যাপী তেলের চাহিদা ৩১ লাখ ব্যারেল পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে প্রতিবেদনটিতে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে চাহিদা ২৭ লাখ ব্যারেল হ্রাস পাবে।

সারাবাংলা/আইই

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন