বিজ্ঞাপন

‘আগেও অভিযোগ ছিল ২ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে’

August 17, 2022 | 9:47 am

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (বিআরটি) প্রকল্পের ঠিকাদার হিসেবে চীনের দুই প্রতিষ্ঠানের কাজে খামখেয়ালি থাকার কথা জানিয়েছেন প্রকল্পটির পরিচালক শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমরা এর আগেও জেনেছি, এই দুই প্রতিষ্ঠান লোকবল কম রেখে, ইকুইপমেন্ট কম ব্যবহার করে কাজটা শুধুমাত্র রানিং রাখে। কিন্তু ওই রকম স্পিড থাকে না কাজে। কোনোভাবেই তাদের কাছ থেকে কমপ্লায়েন্স না পেলেও খামখেয়ালিপনা পেয়েছি।

বিজ্ঞাপন

গতকাল মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) উত্তরার জসীমউদ্দীনে গার্ডার দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে এসব কথা বলেন শফিকুল ইসলাম। এর আগে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র (ডিএনসিসি) মো. আতিকুল ইসলাম দুর্ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেন। কমপ্লায়েন্স বা নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে কাজ চালিয়ে যাওয়ার কারণে ঘটনাস্থলে থাকা প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ করেন তিনি।

মেয়র মো. আতিকুলের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (বিআরটি) প্রকল্পের পরিচালক শফিকুল ইসলাম ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের খামখেয়ালিপনার কথা জানান।

এদিন সকালে ঘটনাস্থলে এসে মেয়র আতিকুল ইসলাম প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনারা যেখানে কাজ করবেন সেখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করবেন না? এসব উন্নয়ন কাজ তো সাধারণ জনগণের জন্যই করা হচ্ছে। আর তাই তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে আগে। কিন্তু সেখানে যদি তাদেরই নিরাপত্তা না থাকে তাহলে এই কাজ করে লাভ কি? সেফটি ফার্স্ট এই কথাটা কি আপনারা জানেন না?’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘আগে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঠিক করবেন এরপর পরবর্তী কাজ করতে পারবেন। এখানে সবাই উপস্থিত আছেন। ওয়ার্ক সেফটি, প্লেস সেফটি, পাবলিক সেফটির বিষয়টি আমার কাছে নিশ্চিত করে এরপর পরবর্তী কাজ।’

মেয়রের এমন বক্তব্যের পরে বিআরটি প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (বিআরটি) প্রকল্পে দুটি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। এই দুটি প্রতিষ্ঠানই চীনের। আমরা এর আগেও শুনেছি, এই দুই প্রতিষ্ঠান লোকবল কম রেখে, ইকুইপমেন্ট কম ব্যবহার করে কাজটা শুধুমাত্র রানিং রাখে। কিন্তু ওই রকম স্পিড থাকে না কাজে। কমপ্লায়েন্সের ক্ষেত্রেও বলতে হয় একই কথা।’

তিনি বলেন, ‘আজকে দুঃখের বিষয় হলেও সত্যি যে মেয়র মহোদয় বলেছেন, আমাদের কাজে খামখেয়ালিপনা হচ্ছে। বাস্তবতা হলো এই খামখেয়ালিপনার বিষয়টা আমরা ঠিকাদারদের কাছ থেকে পেয়েছি। কোনোভাবেই তাদের কাছ থেকে কমপ্লায়েন্স পাচ্ছি না।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘শুধু আমরা না সিটি করপোরেশন, মিনিস্ট্রি প্লাস এডিবি যার যতটুকু ক্ষমতা আছে সবাই কমপ্লায়েন্সের বিষয়ে প্রেসার দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তাও একটা স্টান্ডার্ড ধরে রাখা যাচ্ছে না।’

কমপ্লায়েন্স বা নিরাপত্তা একেবারেই নাই তা কিন্তু না, আছে। এক্ষেত্রে হয়তো আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী যেভাবে করার কথা সেটা হচ্ছে না। শুধু এটা না, আরও কয়েকটা ঘটনা ঘটেছে— যোগ করেন প্রকল্প পরিচালক।

তবে এসব অভিযোগ জানতে চাইলে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দুটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে তাতে সাড়া মেলেনি।

এমনকি গার্ডার পরে দুর্ঘটনায় পাঁচজন নিহত হওয়ার ২৪ ঘণ্টা সময়েও ঘটনাস্থলে দেখা মেলেনি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান দুটির কোনো কর্মকর্তারই— স্থানীয়দের এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ঘটনাস্থলে কাউকে পাওয়া যায়নি।

বিজ্ঞাপন

পরবর্তীতে প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম কাজ বন্ধ থাকার কথা জানান। সরেজমিনে বিমানবন্দর সড়ক থেকে রাজলক্ষ্মী পর্যন্ত প্রকল্পের উড়ালসড়কের গার্ডার স্থাপনের কাজ বন্ধ দেখা যায়।

এর আগে, গত সোমবার (১৫ আগস্ট) রাতে মোহাম্মদ মোহসিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘গার্ডার স্থানান্তরের সময় দুর্ঘটনা ঘটেছে। গার্ডার যখন স্থানান্তর করা হয় তখন রাস্তায় গাড়ি চলছিল। এক্ষেত্রে আসলে প্রাথমিকভাবে বলা যায়, অবশ্যই গাফিলতি ছিল। তাই দুর্ঘটনা ঘটেছে। এ ধরনের ভারি বস্তু স্থানান্তরের জন্য যে পরিমাণ সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন ছিল, তাও দৃশ্যমান ছিল না।’

তিনি বলেন, ‘যেকোনো নির্মাণাধীন ভবন বা বড় প্রকল্পের আশেপাশে অবশ্যই নিরাপত্তা নিশ্চিত করে কাজ করা প্রয়োজন। দুর্ঘটনা এড়াতে হলে এর কোনো বিকল্প নেই।’

বিআরটি প্রকল্পের নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের গার্ডার দুর্ঘটনা যদি নিরাপত্তা বেষ্টনী না থাকার বিষয়কে স্পষ্ট অবহেলা বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক হাদিউজ্জামান।

তিনি বলেন, ‘ক্রেন থেকে গার্ডার কিন্তু দুর্ঘটনাক্রমে পড়ে যেতেই পারে, সে কারণেই পূর্ব সতর্কতা নিতে হয়। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী নিয়ম হচ্ছে, আমাকে কাজের জায়গায় আগেই নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করতে হবে। বেষ্টনীর মধ্যে যেন পথচারী বা কোনো যানবাহন ঢুকতে না পারে, সেটি নিশ্চিত করার দায়িত্বও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের।’

উল্লেখ্য, সোমবার (১৫ আগস্ট) বিকেল সোয়া ৪টার দিকে রাজধানীর উত্তরায় জসিমউদ্দিন মোড় সংলগ্ন সড়কে থাকা আড়ংয়ের সামনে বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) স্থাপনা প্রকল্পের একটি গার্ডার প্রাইভেটকারের ওপর পড়ে। এতে পাঁচ আরোহী নিহত হন। আহত হন আরও দুই জন। গার্ডারের নিচে প্রাইভেটকার চাপা থাকায় তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ধারকাজ চালানো সম্ভব হয়নি স্থানীয়দের পক্ষে। পরে এক্সেভেটর দিয়ে গার্ডার সরিয়ে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

দুর্ঘটনার শিকার প্রাইভেটকারে ছিলেন একই পরিবারের সাত সদস্য। এর মাঝে পাঁচ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। নিহতরা হলেন- রুবেল (৬০), ফাহিমা (৪০), ঝরনা (২৮), ঝরনার দুই সন্তান জান্নাত (৬) ও জাকারিয়া (২)। হৃদয় ও রিয়া মনি নামে দুইজন গাড়িতে থাকলেও সেখান থেকে উদ্ধার করে তাঁদের গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয়।

সারাবাংলা/এসবি/এনএস

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন