বিজ্ঞাপন

‘মাস্টার কি’ দিয়ে ৫০০ মোটরসাইকেল চুরি!

August 17, 2022 | 5:58 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: রাজধানীর শনির আখড়া ও ধলপুর এলাকা থেকে ১৩টি চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের গাড়ি চুরি প্রতিরোধ টিম। সেই সঙ্গে চোর চক্রের মুল হোতাসহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ। ডিবি পুলিশের দাবি, বিশেষ কৌশলে তারা এ পর্যন্ত ৫০০টির বেশি মোটরসাইকেল চুরি করেছে তারা। এসব মোটরসাইকেল তারা ‘মাস্টার কি’ দিয়ে নিমিষেই চুরি করতো।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) রাতে রাজধানীর শনির আখড়া ও ধলপুর এলাকায় এক বিশেষ অভিযান চালিয়ে চোর চক্রের পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলো- নূর মোহাম্মদ (২৬), রবিন (২৩), সজল (১৮), মনির (২২) ও আকাশ।

বুধবার (১৭ আগস্ট) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবি প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ‘ডিএমপির ওয়ারী এবং গেন্ডারিয়া থানার দু’টি চুরি মামলা তদন্তকালে সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা, গোয়েন্দা সংবাদ ও তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় চোর চক্রকে ধরার জন্য গোয়েন্দা (ওয়ারী) বিভাগ, ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে।’

বিজ্ঞাপন

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেফতার চোর চক্রটি ঢাকা মহানগর এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে মোটরসাইকেল চুরি করে আসছিল। চোর চক্রের মূল হোতা নূর মোহাম্মদ জানায়, সে মূলত জুরাইন এলাকায় একটি কাঠের দোকানে নকশার কাজ করতো। আগে তার বাসা ছিল কেরাণীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায়। একদিন হাসনাবাদ গলির ভিতর চা দোকানে গ্রেফতার রবিনের সাথে পরিচয় হয় তার। পরে দু’জন মিলে পরিকল্পনা করে, কীভাবে দ্রুততম সময়ে বড়লোক (ধনী) হওয়া যায়। নূর মোহাম্মদ রবিনকে বলে, তার কাছে করাত ধার দেওয়ার রেদ আছে, যা দিয়ে মোটরসাইকেলের চাবি পাতলা করে ‘মাস্টার কি’ বানানো যাবে।

পরিকল্পনা মোতাবেক রবিনের জিক্সারের চাবি রেদ দিয়ে ঘষে পাতলা করে শারিঘাট, হাসনাবাদ এলাকায় মোটরসাইকেল চুরির পরীক্ষামূলক চেষ্টা চালায়। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়। পরে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জে পার্ক করা একটি জিক্সার মোটরসাইকেল পরীক্ষামূলক চেষ্টা চালিয়ে স্টার্ট করতে পারে এবং সেটি তারা চুরি করে নিয়ে যায়। এর পর থেকে তারা এ চাবিকেই ‘মাস্টার কি’ হিসেবে ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে মোটরসাইকেল চুরি করে আসছিল। এক পর্যায় তারা চোরাই মোটরসাইকেল বিক্রির জন্য দোহারের সজলকে তাদের চক্রের সদস্য হিসেবে যুক্ত করে।

তারা জানিয়েছেন, ঢাকা মহানগর এলাকা থেকে মোটরসাইকেল চুরি করে নিরাপদ রোড হিসেবে পোস্তগোলা ব্রিজ পার হয়ে মাওয়া রোডের শ্রীনগর বাইপাস হয়ে মেঘুলা বাজার, দোহার রুট হিসেবে ব্যবহার করতো তারা। অন্যদিকে, বাবুবাজার ব্রিজ পার হয়ে কেরাণীগঞ্জ, জয়পাড়া ও দোহার এলাকা যাওয়ার রুট হিসেবে ব্যবহার করতো। সজল ও মনির দোহারের বিভিন্ন এলাকার সাধারণ মানুষের কাছে চোরাই মোটরসাইকেল ‘ইন্ডিয়ান বর্ডার ক্রস’ বলে বিক্রি করে আসছিল।

বিজ্ঞাপন

গ্রেফতার সজল জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সে নিজেও বড়লোক হওয়ার নেশায় দোহারের মেঘুলা বাজারের ধনী এক বেকারি ব্যবসায়ীর মেয়েকে পালিয়ে নিয়ে বিয়ে করে। কিন্তু ওই বেকারি ব্যবসায়ী এ সম্পর্কে মেনে নেয়নি। সে নিজের মেয়েকে সজলের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। এতে সজল হতাশ হয়ে পড়ে। পরে বড় লোক হওয়ার নেশায় নুর মোহাম্মদ ও রবিনদের চক্রে যোগ দেয়। গ্রেফতার সজল, মনির ও আকাশদের মূল কাজ ছিল দোহার ও আশেপাশের এলাকা থেকে চোরাই মোটরসাইকেল বিক্রির জন্য ক্রেতা খুঁজে বের করা। প্রতিটি চোরাই মোটরসাইকেল তারা ৪০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করতো। বিক্রির টাকার ৪০ শতাংশ নূর মোহাম্মদ, ৩০ শতাংশ রবিন ও অবশিষ্ট টাকা অন্যান্যরা নিতো।

গ্রেফতার চোর চক্র আরও জানায়, তারা এ পর্যন্ত ৫০০টির বেশি মোটরসাইকেল চুরি করেছে। তারা এই কাজ করে আসছে ২০১৫ সাল থেকে।

উল্লেখ্য, গ্রেফতারকৃত নুর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় চারটি, রবিনের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা এবং অন্যান্য তিন জনের বিরুদ্ধে একটি করে মামলা রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/ইউজে/পিটিএম

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন