বিজ্ঞাপন

থার্ড পার্টি প্রতিষ্ঠান থেকে ফিটনেসবিহীন ক্রেনটি ভাড়া নেওয়া হয়

August 18, 2022 | 6:51 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: রাজধানীর উত্তরায় প্রাইভেটকারের ওপর নির্মাণাধীন বিআরটি প্রকল্পের যে ক্রেন থেকে গার্ডার পড়ে একই পরিবারের পাঁচজন মারা যান সেই ক্রেনটির ফিটনেস ছিল না। ক্রেনটি ছিল অনেক পুরাতন এবং অপেক্ষাকৃত দুর্বল। এর ধারণক্ষমতা ছিল ৪৫ থেকে ৫০ টন। আর গার্ডারের ওজন ছিল ৬০ থেকে ৭০ টন। গার্ডার তোলার কাজ করার সময় আরেকটি সহযোগী ক্রেন থাকার কথা থাকলেও তা ছিল না।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া থার্ড পার্টি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিল্ড ট্রেড ইঞ্জিনিয়ার লিমিটেড মাসিক ভাড়ার চুক্তিতে ক্রেনটি সরবরাহ করে। প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক কর্মকর্তা গ্রেফতার রুহুল আমিন ও মার্কেটিং ম্যানেজার গ্রেফতার তুষার ক্রেনের ভাড়া, চুক্তি, ড্রাইভার নিয়োগ ও ক্রেনের ফিটনেস যাচাইসহ অন্যান্য দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন।

বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) দুপুরে কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ‘রুহুল ২০১০ সালে ও তুষার ২০১৫ সালে এই প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন। তারা অতিরিক্ত লাভের জন্য অল্প পারিশ্রমিকে ভারি গাড়ি চালানোর লাইসেন্স ছাড়া অপারেটর আল আমিনকে নিয়োগ দেয়। এছাড়াও এই ক্রেনের ফিটনেস যাচাই করা হয়েছিল সর্বশেষ ২০২১ সালে। কিন্তু ২০২২ সালে ক্রেনের কোনো ধরনের ফিটনেস যাচাই করা হয়নি।’

বিজ্ঞাপন

র‌্যাব জানিয়েছে, গত ১৫ আগস্ট বিআরটি প্রকল্পের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান চায়না গেঝুবা গ্রুপ কোম্পানির (সিজিজিসি) তত্ত্বাবধানে ক্রেন দিয়ে প্রজেক্টের গার্ডার উত্তোলনের কাজ চলাকালীন দুর্ঘটনাটি ঘটে। দুর্ঘটনায় ঘাতক ক্রেনের চালক মো. আল আমিন ও হেলপার রাকিব হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সিজিজিসি হতে ভারি যন্ত্রপাতি সরবরাহের ওয়ার্ক অর্ডার পায় ইফসকন নামক একটি প্রতিষ্ঠান যার সত্ত্বাধিকারী গ্রেফতার মো. ইফতেখার হোসেন ও হেড অব অপারেশন মো. আজহারুল ইসলাম মিঠু। কিন্তু ইফসকনের কাছে বড় ক্রেন না থাকায় তারা থার্ড পার্টি প্রতিষ্ঠান বিল্ড ট্রেড কোম্পানির কাছ থেকে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ক্রেনটি ভাড়া নেয়। এছাড়াও প্রকল্প এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিতে দায়িত্বে থাকা ফোর ব্রাদার্স গার্ড সার্ভিসের ট্রাফিক ম্যান আফরোজ ও রুবেল এবং ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সিজিজিসির সেফটি ইঞ্জিনিয়ার জুলফিকার আলীকে প্রকল্প এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের এবং হেভি ইক্যুইপমেন্ট সরবরাহের দায়িত্বে নিয়োজিত থাকা সিজিজিসি’র প্রকিউরমেন্ট অফিসার মঞ্জুরুল ইসলামকে দায়িত্বে অবহেলার কারণে গ্রেফতার করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ঘাতক ক্রেনের মূল অপারেটর মো. আল আমিন। তার হালকা গাড়ি চালানোর অনুমোদন থাকলেও ভারি গাড়ি চালানোর লাইসেন্স নেই। ২০১৬ সালে ক্রেন চালনার প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর ২/৩টি নির্মাণ প্রকল্পে কাজ করেন। এর পর ২০২২ সালের মে মাসে বিআরটি প্রকল্পে ক্রেন অপারেটর হিসেবে কাজ শুরু করেন। গ্রেফতারকৃত রাকিব তিন মাস আগে ওই প্রকল্পের ক্রেন হেলপার হিসেবে কাজ শুরু করে। তার ক্রেন চালনা করার কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ ছিল না। দুর্ঘটনার দিন আল আমিন ও রাকিব দুপুর ২টা থেকে ক্রেন চালনা শুরু করে। একটি গার্ডার স্থাপন শেষে দ্বিতীয় গার্ডার স্থাপনের সময় ক্রেনের ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত ওজনের গার্ডার উত্তোলনের জন্য ক্রেনটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গার্ডারটি প্রাইভেটকারের উপর ছিটকে পড়ে ওই দুর্ঘটনা ঘটে। আরও জানা যায় যে, দুর্ঘটনার সময় হেলপার রাকিব ক্রেন চালাচ্ছিল। আর ক্রেন অপারেটর আল আমিন বাহির থেকে নির্দেশনা দিচ্ছিল। দুর্ঘটনার পর অপারেটর আল আমিন হেলপার রাকিব ঘটনাস্থল থেকেই পালিয়ে যায়।

বিজ্ঞাপন

জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, থার্ড পার্টি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিল্ড ট্রেড ইঞ্জিনিয়ার লিমিটেড মাসিক ভাড়ার চুক্তিতে ওই ক্রেন সরবরাহ করে। ওই প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক কর্মকর্তা গ্রেফতার রুহুল আমিন এবং মার্কেটিং ম্যানেজার গ্রেফতার তুষার ক্রেনের ভাড়া প্রদান, চুক্তি, ড্রাইভার নিয়োগ; ক্রেনগুলোর ফিটনেস যাচাইসহ অন্যান্য দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল। গ্রেফতার রুহুল ২০১০ সালে এবং তুষার ২০১৫ সালে ওই প্রতিষ্ঠানে যোগ দেয়। তারা অতিরিক্ত লাভের জন্য অল্প পারিশ্রমিকে ভারি গাড়ি চালনার লাইসেন্স ছাড়া অপারেটর আল আমিনকে নিয়োগ দেয়। এছাড়াও ওই ক্রেনের সর্বশেষ ফিটনেস যাচাই করা হয়েছিল সর্বশেষ ২০২১ সালে। কিন্তু ২০২২ সালে ক্রেনের কোনো ধরণের ফিটনেস যাচাই করা হয়নি বলে জানা যায়।

গ্রেফতার জুলফিকার সিজিজিসি’র বিআরটি প্রকল্পের সেফটি ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ২০২১ সালে যোগ দেয়। সে মূলত এসএসসি পাস। তাকে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের সেফটি ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। বর্ণিত ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ক তার কোনো ধরনের দক্ষতা নেই। সে প্রকল্পের বিমানবন্দর সংলগ্ন এলাকা থেকে উত্তরার আজমপুর এলাকা পর্যন্ত নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল। দুর্ঘটনার দিনে ভারি গার্ডার স্থাপনের সময় নিরাপত্তা নিশ্চিতে কোনো ধরনের নিরাপত্তা বেষ্টনী স্থাপন ও পর্যাপ্ত ট্রাফিক রাখেনি।

এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ কাজ হওয়ার পরও সে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য ডিএমপি ও অন্যান্য কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা ছাড়াই ওই কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। গ্রেফতার মঞ্জুরুল সাড়ে তিন বছর যাবৎ এই প্রতিষ্ঠানে প্রকিউরমেন্ট অফিসার হিসেবে কাজ করে আসছে। সে চাইনিজ ভাষায় দক্ষ হওয়ায় ওই কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে ঠিকাদারি কাজ পাওয়ার ব্যবস্থা করে।

এদিকে গ্রেফতার রুবেল তিন মাস আগে এবং আফরোজ গত মাসে ফোর ব্রাদার্স গার্ডস সার্ভিস ট্রাফিক ম্যান হিসেবে যোগ দেয়। তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা বিষয়ক কোনো প্রশিক্ষণ ছিল না। দুর্ঘটনার সময় তারা দুর্ঘটনাস্থলে প্রকল্পের ট্রাফিকম্যান হিসেবে নিয়োজিত ছিল।

বিজ্ঞাপন

গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

সারাবাংলা/ইউজে/পিটিএম

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন