বিজ্ঞাপন

স্রোতহীন ভৈরবের সৌন্দর্য বর্ধনে এবার বাজেট ১৯ কোটি টাকা

August 24, 2022 | 8:08 am

তহীদ মনি, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

যশোর: নদ কেটে মরা ভৈরবে স্রোত প্রবাহিত করতে না পারলেও তার সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য কোটি কোটি টাকা ব্যয়ের আয়োজন হয়েছে। এর আগে প্রায় তিনশ কোটি টাকা ব্যয়ে ভৈরব নদ কেটে নর্দমায় পরিণত করা হয়। যা এখন বলতে গেলে ড্রেনের মতো। এবার সেই মরা নদের শহরাংশে ওয়াকওয়ে নির্মাণ ও সৌন্দর্য বর্ধনের ব্যয় করতে যাচ্ছে প্রায় ১৯ কোটি টাকা। যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ড পাঁচটি প্যাকেজে আগামী বছরের জুনের মধ্যে এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করবে। ইতোমধ্যে প্রকল্প পাস হয়েছে, টেন্ডার সম্পন্ন হয়েছে এবং খুব শিগগিরই কাজ শুরু হবে।

বিজ্ঞাপন

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ডিসেম্বর থেকে ভৈরব নদের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্প নামে প্রায় ২৭২ কোটি টাকার কাজ শুরু করে। কাজ বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা চলতি বছরের জুন পর্যন্ত থাকলেও ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছে। সেই প্রকল্পের আওতায় ৯২ কিলোমিটার ভৈরব খনন, ৪ কিলোমিটার ড্রেজিং, ২৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার নদীর সংযোগ খাল খনন এবং আপার ভদ্রা নদী ২১ দশমিক ৯২ কিলোমিটার খনন ছিল। ৯২ কিলোমিটার নদ খননের মধ্যে যশোর শহরাংশে প্রায় ১০ কিলোমিটার ছিল।

ভৈরবে কী খনন হয়েছে, কতটুকু কাজ হয়েছে, নদীর অবস্থা কী- এসব শহরের সবাই দেখেছেন, পত্র পত্রিকায় সংবাদ ও প্রতিবেদনও ছাপা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শত শত পোস্ট ও ট্রল হয়েছে। সেখানে সবারই অভিমত টাকা জলে ফেলে নদটাকে ড্রেনে পরিণত করা হয়েছে। এ চিত্র কেউ না বললেও যশোর শহরের দড়াটানা ব্রিজ, কাঠেরপুল ব্রিজ, বারান্দীপাড়া ব্রিজ, বাবলাতলা ব্রিজের উপর দাঁড়ালেই সবার চোখে পড়বে। শহরের অভিজাত কিছু স্থাপনা বাঁচাতে এঁকেবেঁকে খনন করা হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। তাছাড়া অসংখ্য পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে নদটাকে পরিপূর্ণরূপে ড্রেনে রূপান্তরিত করা হয়েছে বলেও নগরবাসীর অভিযোগ। তাছাড়া এতদিন ধরে খনন করা ভৈরব নজরদারির অভাবে ও কচুরিপানা জন্মে বেশিরভাগ জায়গা বদ্ধ জলাশয়ে পরিণত হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এমতাবস্থায় খননকৃত নদের শহরাংশের একপাশের পাড় হিসেবে ৩ দশমিক ১ কিলোমিটারে চারটি জায়গায় পাঁচটি প্যাকেজে দৃষ্টিনন্দন ও সৌন্দর্য বৃদ্ধির কাজের অনুমোদন পেয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। প্যাকেজ পাঁচটির মূল্য ১৯ কোটি ২২ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এই প্রকল্পে গরীব শাহ মাজার হতে দড়াটানা ব্রিজ পর্যন্ত দৃষ্টি নন্দন ও সৌন্দর্য বর্ধন হবে। এই অংশটুকুতে ব্যয় হবে প্রায় ৮ কোটি টাকা। এখানে ওয়াকওয়ে নির্মাণ হবে, পাবলিক টয়লেট হবে, বসবার বেঞ্চ দেওয়া হবে, এমপি মঞ্চ (মুক্তমঞ্চ) তৈরি করা হবে, পানির ফোয়ারা থাকবে, রাস্তা থেকে নদীতে নামার জন্যে সুদৃশ্য সিঁড়ি, নামার পর ওয়াকওয়ে ধরে হাঁটাহাঁটির ব্যবস্থা থাকবে। রয়েছে বৃক্ষরোপণ।

ওই একটি প্যাকেজের স্থান ছাড়া অনান্য প্রকল্পগুলোতে শুধু ওয়াকওয়ে ও ছোট ড্রেন নির্মাণ করা হবে। সূত্র মতে, বাবলাতলা ব্রিজ থেকে নদীর ডান তীরে গরীবশাহ মাজার পর্যন্ত একটি প্যাকেজ, গরীব শাহ মাজার থেকে একই তীর বরাবর আর একটি প্যাকেজ, দড়াটানা ব্রিজ থেকে বাম তীরে তিনশ মিটার পর্যন্ত আরেকটি প্যাকেজ, নদীর ডান তীরে ক্যান্টনমেন্ট এলাকা থেকে এক কিলোমিটার আরেকটি প্যাকেজ এবং নীলগঞ্জ ব্রিজ থেকে শ্মশান পর্যন্ত একটি প্যাকেজ। এসব জায়গায় ৫ দশমিক ৯ ফুট চওড়া ওয়াকওয়ে ও ২ দশমিক ১৩ ফুট প্রশস্ত এবং প্রায় ৩ ফুট গভীর ড্রেন নির্মাণ করা হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, এতে নদের তীর দেখতে যেমন সুন্দর হবে, তেমনি মানুষ এর পাশ দিয়ে চলাফেরা করতে পারবে। তাহলে সহজে দখলদাররা নদের জায়গা দখল করতে পারবে না। মানুষ প্রাকৃতিক পরিবেশ ফিরে পাবে।

বিজ্ঞাপন

দড়াটানা ব্রিজের ওপর দাঁড়িয়ে শহরের বিভিন্ন পেশার কয়েজন মানুষের কাছে নদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও দৃষ্টিনন্দন বিষয়ে তাদের অভিমত জানতে চাইলে সবাই একটি কথাই শুধু বলেন, যেখানে নদটাকে ড্রেনে রূপাান্তরিত করা হয়েছে সেখানে আর কী দৃষ্টি নন্দন হবে? তাছাড়া নদ যে এত টাকা খরচ করে কাটা হলো তার স্রোত কোথায়? প্রবাহমানতা কোথায়?

এ বিষয়ে জানতে চাইলে যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. তাওহীদুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘নদ কেটে ছোট করা হয়নি। ম্যাপে যে প্রশস্ততা রয়েছে সেটি রক্ষা করা হয়েছে। কারও ভবন বাঁচানোর দায়িত্ব পানি উন্নয়ন বোর্ড নেয়নি। তাছাড়া নদের মাটি কেটে ফেলবার জন্যে জায়গা দরকার, নদের জমিতে মাটি ফেলতে গিয়ে হয়তো সামান্য সমস্যা হয়েছে। তবে কোথাও অনিয়ম হয়নি।’

বিজ্ঞাপন

তিনি জানান, দৃষ্টি নন্দন ও সৌন্দর্য বৃদ্ধি প্রকল্প শেষ হলে মানুষ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজে খুশিই হবে। এবং নদের শহরাংশে তখন মানুষের বিচরণে আরও প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে।

সারাবাংলা/পিটিএম

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন