বিজ্ঞাপন

‘নিজের টাকায় নয়, অভ্যন্তরীণ উৎসের ঋণে পদ্মা সেতু’

August 30, 2022 | 6:30 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, পদ্মা সেতু হবে না- এই কথা কেউ কখনো বলে নাই। বলা হয়েছিল পদ্মা সেতুতে যে অর্থায়ন করা হয়েছে সেই অর্থায়নের যৌক্তিকতা নিয়ে। পদ্মা সেতুর অর্থায়নটা যৌক্তিক নয়, সেটা আজ আমি আবারও বলছি। আমরা বলি, পদ্মা সেতু নিজের টাকায় করেছি। আসলে পদ্মা সেতু অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ নিয়ে করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) মিলনায়তনে ‘ইআরএফ ডায়ালগ’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। ইআরএফের সভাপতি শারমিন রিনভী সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘আপনি তো ঘাটতি বাজেটে আছেন, তাহলে পদ্মা সেতুর টাকা পেলেন কোথায়? অবশ্যই ঋণ করেছেন। ঋণ করেছেন অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে। অর্থ্যাৎ আপনার, আমার পকেটের টাকা। ওই ঋণ যদি না করতেন তাহলে দেশের অন্য কোনো খাতে খরচ হতো। সেটা না করে এখানে করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতুতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ নেওয়ার কারণে গত ১০ বছরে শিক্ষা স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় বাড়াতে পারেনি সরকার। অর্থনীতির ফেইড অফ আছে। অর্থ্যাৎ, কোন জায়গায় ছাড় দিবেন। ছাড় দিয়ে অন্য জায়গায় তা সমন্বয় করবেন। এই ছাড়টা ঠিক হয়েছে কিনা তা ভবিষ্যতে বোঝা যাবে। আমি মনে করি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ছাড় দেওয়াটা সরকারের বড় ধরনের ঝুঁকি। তারপরেও আড়াই বিলিয়ন ডলারের সাপ্লাই ক্রেডিট নিয়ে চাইনিজদের দিয়ে পদ্মা সেতুতে রেললাইন বসাচ্ছি। মনে রাখবেন সাপ্লাই ক্রেডিটের টাকা সবচেয়ে দামি উৎস থেকে নেওয়া হচ্ছে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘অনেকেই বলেন, পদ্মা ব্রিজ নিয়ে আপনারা বিরোধিতা করেছেন, এটা সত্য নয়। পদ্মা ব্রিজ নিয়ে কোনো বিরোধিতা ছিল না। এটি বাংলাদেশের প্রযোজনীয় সবচেয়ে বড় ভৌত অবকাঠামো। এটা পাকিস্তান আমল থেকেই চেষ্টা হয়ে আসছে। বর্তমান সরবকার এটা করেছে সেজন্য তারা সবধরনের অভিনন্দন পাবে। তারা সবধরনের প্রশংসার দাবিদার। তবে অর্থায়নের দিক থেকে এটা আরও সাশ্রয়ভাবে করা যেত।’

ড. দেবপ্রিয় বলেন, ‘অর্থনীতিবিদরা সব সময় অপারচুনিটি কষ্ট দেখেন। আমরা বলি, এই টাকাটা দিয়ে আমরা জামা কিনব, না প্যান্ট কিনব। আমরা জামা কিনছি, কিন্তু প্যান্টও আমাদের লাগবে। যারা বলেন, আপনারা পদ্মাসেতুর বিরোধিতা করেছেন, এটা নিতান্তই অপ্রচার ছাড়া কিছু না। এটা অর্থায়নের পদ্ধতি ও সাশ্রয় নিয়ে কথা হয়েছে।’

সিপিডির সম্মানীয় এ ফেলো বলেন, ‘খেলাপি ঋণ শুরু হয়েছে ১৯৮০ সালে। সব সময় রাজনৈতিকভাবে পৃষ্টপোষকতা প্রাপ্ত ব্যক্তিরাই খেলাপি ঋণের সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী। এটা আমরা সবাই জানি। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১৪ সাল পর্যন্ত যে উৎসাহ এবং উদ্দীপনা নিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রকে বা সরকারি ব্যবস্থাকে বা প্রশাসনকে সংস্কার করার জন্য যে ধরনের উদ্দীপনা নিয়ে চেষ্টা করেছিল, সেটা আর এখন দেখি না।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘আমার মতো অর্থনীতিবিদ কেন গণতান্ত্রিক নির্বাচনি ব্যবস্থার কথা বলছি। কারণ, আমি দেখছি অর্থনৈতিক নীতিমালা ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে যাচ্ছে। আমার অর্থনীতির অগ্রধিকারগুলোর অসুবিধা সৃষ্টি হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ব্যাংকের সুদ ও আমনতের ক্ষেত্রে আমি নয়-ছয়ের পক্ষে নয়। আমি বলব, আপনি ৯ থেকে ১২ এর ভিতরে এবং ৬ থেকে ৯ এর ভেতরে রাখবেন। অর্থ্যাৎ আপনাকে নজরদারির মধ্যে রাখতে হবে। এটা যদি না করা হয় তাহলে অবশ্যই মূল্যস্ফীতি বাড়বে। ফলে সরকারি ব্যয় বেড়ে যাবে। এটার কারণে অনান্য জীবনমানে অসুবিধার সৃষ্টি হবে।’

বিশিষ্ট এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘অর্থনীতিবিদরা তিনটি বিষয় সর্বদা মনিটরিংয়ের ভেতরে রাখে। সেগুলো হলো মুল্যস্ফীতি, টাকার বিনিময় হার এবং সুদের হার। এই তিনটির ভেতর সমন্বয় থাকতে হবে। বর্তমানে এই তিনটির মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই। মুল্যস্ফীতি বাড়ার ফলে টাকার বিনিময় হারকে টাইট করার চেষ্টা করতে হয়। যাতে করে আমদানি পণ্যের দাম না বাড়ে। সুদের হার বাড়িয়ে টাকার প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সরকার এখনও জিডিপি‘র বিষয়ে তার মনোভাব স্থির করতে পারেনি। ব্যক্তি বিনিয়োগ কি হবে- এ বিষয়ে সরকারও সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। এই ধরনের সিদ্ধান্তহীনতার কারণে উপকার হচ্ছে না।’

মেগা প্রকল্প প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দুই/তিনটা সবচেয়ে বড় প্রকল্প আদৌ বাংলাদেশের জন্য উপকারী হবে কি না জানি না। আমি কোন প্রকল্পের কথা বলছি, আপনারা বুঝতে পেরেছেন। যে প্রকল্পটি (রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প) ১২ বিলিয়ন ডলারে বাস্তবায়ন করছি, একই প্রকল্প ভারত ৩ বিলিয়ন ডলারে বানাচ্ছে। তাহলে কত এদিক-ওদিক হয়েছে আপনারা দেখতে পাবেন।’

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/জিএস/পিটিএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন