বিজ্ঞাপন

গত বছর ১০ হাজার ৮৩০ কোটি টাকার ঘুষ লেনদেন: টিআইবি

August 31, 2022 | 8:39 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ২০২১ সালে বাংলাদেশে ১০ হাজার ৮৩০ কোটি ১০ লাখ টাকার ঘুষ লেদেন হয়েছে বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআইবি)। সংস্থাটি আরও বলেছে, গত বছর দেশে যে পরিমাণ ঘুষ লেনদেন হয়েছে, এটি পদ্মা সেতুর মোট খরচের প্রায় এক তৃতীয়াংশ।

বিজ্ঞাপন

২০২১ সালের জাতীয় পর্যায়ে প্রাক্কলিত মোট ঘুষের পরিমাণ ২০১৭ সালের তুলনায় ১৩৩ কোটি ২০ লাখ টাকা বা ১.২ শতাংশ বেশি। ২০১৭ সালে প্রাক্কলিত ঘুষের পরিমাণ ছিল ১০ হাজার ৬৮৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা। বিপরীতে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে জাতীয় পর্যায়ে প্রাক্কলিত মোট ঘুষের পরিমাণ বাংলাদেশের জিডিপি’র দশমিক ৪ শতাংশ এবং জাতীয় সংশোধিত বাজেটের ৫ দশমিক ৯ শতাংশ।

বুধবার (৩১ আগস্ট) রাজধানীর ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআইবি) উদ্যোগে ‘সেবা খাতে দুর্নীতি: জাতীয় খানা জরিপ-২০২১’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এ সব কথা বলেন।

টিআইবি‘র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে— ২০২১ সালে সার্বিকভাবে ঘুষের শিকার হওয়া খানার হার ৪০ দশমিক ১ শতাংশ। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ঘুষ গ্রহণকারী তিনটি খাত হল- পাসপোর্ট, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা ও বিআরটিএ।

বিজ্ঞাপন

জরিপে অন্তর্ভুক্ত ঘুষদাতা খানার ৭২ দশমিক ১ শতাংশ ঘুষ দেওয়ার কারণ হিসেবে ‘ঘুষ না দিলে সেবা পাওয়া যায় না’- এ কথা বলেছেন। অর্থাৎ ঘুষ আদায়ে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ অব্যাহত রয়েছে। এতে বলা হয়েছে- ২০২১ সালে সার্বিকভাবে খানা প্রতি গড়ে ৬ হাজার ৬৩৬ টাকা ঘুষ দিতে বাধ্য হয়েছে। সর্বোচ্চ ঘুষ আদায়ের তিনটি খাত হলো- বীমা, বিচারিক ও গ্যাস সেবা।

২০১৭ সালের তুলনায় ২০২১ সালে কোনো কোনো খাতে ঘুষের শিকার খানার হার বেড়েছে (স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান) এবং কোনো কোনো খাতে কমেছে (কৃষি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা)।

২০১৭ সালের তুলনায় ২০২১ সালে ঘুষ বা নিয়মবহির্ভূত অর্থের হার কমেছে কিন্তু ঘুষ আদায়ের পরিমাণ বেড়েছে। অপরদিকে অন্যান্য অনিয়ম-দুর্নীতি বেড়ে যাওয়ায় সার্বিকভাবে সেবাখাতে দুর্নীতি বেড়েছে

বিজ্ঞাপন

টিআইবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে— ২০২১ সালে বিচারিক সেবা খাতে ঘুষ লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৬০৮ কোটি টাকা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা খাতে ঘুষ লেনদেন ১ হাজার ৪৮৮ কোটি টাকা, ভূমি সেবা খাতে ১ হাজার ৩৩৬ কোটি টাকা, বীমা খাতে ঘুষ লেনদেনের পরিমাণ ৯৩২ কোটি টাকা। এই শীর্ষ চার খাতেই ২০১৭ সালের খানা জরিপের তুলনায় ঘুষ লেনদেন বেড়েছে।

টিআইবি প্রতিবেদনে দুর্নীতির ধরন সম্পর্কে বলা হয়েছে— ৫৫ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ সেবা নিতে এসে সেবাদানকারী সংস্থার লোকজনের কাছ থেকে দায়িত্ব পালনে অবহেলার শিকার হয়েছেন। ৪০ দশমিক ১ শতাংশ মানুষকে ঘুষ বা নিয়মবর্হিভূতভাবে অর্থ লেনদেন করতে হয়েছে। ২৩ দশমিক ৪ শতাংশ সেবা গ্রহিতা অসদাচারণ ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। ৫ দশমিক ৭ শতাংশ স্বজনপ্রীতি, ৫ দশমিক ৫ শতাংশ প্রতারণা, ৩ দশমিক ৫ শতাংশ প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপ এবং ৩ দশমিক ৪ শতাংশ সেবা গ্রহীতা আত্মসাতের মাধ্যমে দুর্নীতির শিকার হয়েছেন।

টিআইবি প্রতিবেদেনে ঘুষ লেনদেনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে পাসপোর্ট। এই খাতে সেবা নিতে এসে ৫৫ দশমিক ৮ শতাংশ সেবাগ্রহিতা ঘুষ লেনদেন করতে হয়েছে। ঘুষ লেনদেনে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা। এই সংস্থা থেকে সেবা নিতে এসে ৫৫ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষকে ঘুষ দিতে হয়। তৃতীয় স্থানে রয়েছে বিআরটিএ। এই খাতে সেবা নিতে গিয়ে ৫০ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ ঘুষ দিতে হয়েছে। ঘুষ লেনদেনে এর পর রয়েছে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান ( ৩৩ দশমিক ৫ শতাংশ), ভূমি সেবা ( ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ), বিচারিক সেবা (২৩ দশমিক ৭ শতাংশ) এবং শিক্ষা ১৬ দশমিক ৯ শতাংশ)।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা প্রযোগকারী সংস্থা হিসেবে তাদের দায়িত্ব ছিল অনিয়ম দুর্নীতি ও ঘুষ লেনদেন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়া। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানের সদস্যরা নিজেরাই দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছে। একই কথা পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীদের ক্ষেত্রেও। সেবা খাতের সংস্থাগুলোর মধ্যে সেবা নিতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি ঘুষ লেনদেন করতে হয় পাসপোর্ট অফিসে।’

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/জিএস/একে

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন