বিজ্ঞাপন

মফিজকে ‘আক্রমণ করে’ লাঞ্ছিত এমপি মোস্তাফিজ

September 3, 2022 | 10:24 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের উপস্থিতিতে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমানকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে বক্তব্য দিয়ে তোপের মুখে পড়েন বাঁশখালীর সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। এ সময় উপস্থিত নেতারা ক্ষুব্ধ হয়ে সাংসদের দিকে পানির বোতল ও খাবারের প্যাকেট ছুঁড়ে মারেন বলেন জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম নগরীর এলজিইডি ভবন মিলনায়তনে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা হয়। দক্ষিণের সভাপতি সাংসদ মোছলেম উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন। সভা পরিচালনা করেন মফিজুর রহমান।

রূদ্ধদ্বার সভায় কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের নির্দেশে সভার শুরু থেকে উপস্থিত সবার মোবাইল বন্ধ রাখা হয় এবং দলীয়ভাবে চিত্র ও ভিডিওধারণের কাজে নিয়োজিতদের বের করে দেওয়া হয় বলে জানা গেছে।

সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। একই কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল গফুরের সঙ্গে সাংসদের দূরত্ব আছে। এ নিয়ে বাঁশখালীতে স্পষ্টত নেতাকর্মীরা দু’ভাগে বিভক্ত।

বিজ্ঞাপন

বর্ধিত সভায় উপস্থিত কয়েজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সভায় বক্তব্য দেওয়ার সময় মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী বিভিন্ন অভিযোগ তুলে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। প্রথমে তিনি আব্দুল গফুরের অসহযোগিতা ও অসাংগঠনিক কার্যকলাপের কারণে বাঁশখালী উপজেলায় তৃণমূলের সম্মেলন করা যাচ্ছে না এবং আওয়ামী লীগের মধ্যে বিভক্তি তৈরি হয়ে আছে এমন অভিযোগ করেন। আব্দুল গফুর সাংসদের এই অভিযোগের জবাব দেন।

জানতে চাইলে আব্দুল গফুর সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাঁশখালী উপজেলায় ওয়ার্ডের সম্মেলন নিয়ে আমার সঙ্গে উনার (সংসদ সদস্য) কিছু মতপার্থক্য আছে। একটা বড় সংগঠনে এই মতপার্থক্য অস্বাভাবিক কিছু না। কিন্তু উনি যখন এ বিষয়ে অভিযোগ করলেন আমার বিরুদ্ধে, স্বাভাবিকভাবেই আমাদের মধ্যে কিছুটা বাকবিতণ্ডা হয়েছে। এটাও অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে উনি (সাংসদ) আমাদের দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি মফিজ ভাইকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে কিছু বক্তব্য দিয়েছেন। মোছলেম ভাইকে ইঙ্গিত করেও আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেন। এতে সভায় উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির এক সদস্য সারাবাংলাকে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘এমপি সাহেব মফিজ ভাইকে নিয়ে শিষ্টাচারবর্হিভুত বক্তব্য দেন। উনি বক্তব্যে বলেন, মফিজুর রহমান দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক মুজিবুর রহমানের দালালি করেন, তার কাছ থেকে টাকা নিয়ে বাঁশখালীতে আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করে দিচ্ছেন, এতে দল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই বক্তব্যে উপস্থিত নেতাদের প্রায় সবাই উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। তারা পানির বোতল ও খাবারের প্যাকেট থেকে কেক বের করে ছুঁড়ে মারেন এমপির দিকে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘সবার বক্তব্য ছিল একটাই- এমপি হয়েছেন বলে উনি দলের জেলা কমিটির একজন সাধারণ সম্পাদককে হেয় করে কথা বলতে পারেন না। এ সময় এমপির পক্ষে একজন নেতাও দাঁড়াননি। পুরো হাউজ ছিল এমপি সাহেবের বিপক্ষে। এক পর্যায়ে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হস্তক্ষেপ করে সবাইকে শান্ত থাকার নির্দেশ দিয়ে এমপি সাহেবকে অসহায় পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করেন।’

উল্লেখ্য, শিল্পপতি মুজিবুর রহমানের বাড়ি বাঁশখালী। তিনি ওই আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। এ কারণে সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে মুজিবের দূরত্ব আছে। বর্ধিত সভায় অপ্রীতিকর ঘটনার বিষয়ে দক্ষিণ জেলার সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান সারাবাংলাকে কিছু বলতে রাজি হননি।

জানতে চাইলে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের উপ-দফতর সম্পাদক বিজয় কুমার বড়ুয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাঁশখালী উপজেলায় আওয়ামী লীগের মধ্যে কিছুটা দ্বন্দ্ব আছে। সেই বিষয়টি বর্ধিত সভায় তুলে ধরতে গিয়ে উপজেলা কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী এমপি সাহেব ব্যক্তিগত আক্রমণ করে কিছু কথা বলেন। এতে সভায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। তবে বড়ধরনের কিছু হয়নি। একটি সাংগঠনিক সভায় এ ধরনের ছোটখাটো কিছু হতেই পারে।’

সভা শেষে সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কুতুব উদ্দিন চৌধুরী উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাঁশখালীর বিষয় নিয়ে সভায় একটু বাকবিতণ্ডা হয়েছে। সেখানে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে দূরত্ব আছে। উনারা দু’জনই দু’জনের বক্তব্য তুলে ধরেছেন। এরপর সামান্য উত্তেজনা হয়।’

বিজ্ঞাপন

সভা শেষে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটা ছিল একেবারেই ঘরোয়া মিটিং। এ ধরনের মিটিংয়ে বিভিন্ন মতপার্থক্যের বিষয় উঠে আসে। স্বাভাবিকভাবেই আলোচনা অনেক সময় শান্তিপূর্ণ হয়, অনেকসময় উত্তপ্ত হয়, বাকবিতণ্ডা হয়। আজকের (শনিবার) সভায়ও কিছু ‍উত্তেজনাকর বক্তব্য এসেছিল। কিন্তু আমরা সেগুলো সামাল দিয়ে সভার হ্যাপি এন্ডিং করেছি।’

এ বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীকে বারবার ফোন দিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি।

চট্টগ্রাম দক্ষিণের উপ-দফতর সম্পাদক বিজয় কুমার বড়ুয়া সারাবাংলাকে জানান, উত্তেজনাকর পরিস্থিতির কারণে কিছুক্ষণ সভায় বিশৃঙ্খলা দেখা দিলেও পরে আবার স্বাভাবিকভাবেই সভা শুরু হয় এবং বিভিন্ন সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। সিদ্ধান্তের মধ্যে আছে- ৩১ অক্টোবরের মধ্যে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে যেসব ইউনিয়ন ও উপজেলায় সম্মেলন বাকি আছে সেগুলো সম্পন্ন করতে হবে।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন