বিজ্ঞাপন

ভাঙা হচ্ছে না সাফজয়ী মাসুরার ঘর

September 22, 2022 | 5:57 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: মেয়ে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জয় করে এসেছেন সেই আনন্দ ভাসছিলেন মাসুরা পারভীনের বাবা রজব আলী তবে সেই সঙ্গে চিন্তায় ভাঁজ হয়েছিল তার কপালও। রজব আলীর দুঃশ্চিন্তা স্বাদের বাড়ি ভেঙে ফেলার। সরকারি সাহায্য হিসেবে পাওয়া জমিতে বানানো ঘর ভেঙে ফেলার শঙ্কা প্রকাশ করেন জাতীয় দলের ডিফেন্ডার মাসুরার বাবা রজব আলী। ঘর ভাঙ্গার প্রাথমিক ধাপ হিসেবে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাড়িতে তিনটি ক্রস চিহ্ন দেওয়া হয়েছিল বলেও জানান রজব আলী।

বিজ্ঞাপন

তবে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের দেশের ফিরে আসার পরদিনই সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির জানান, মাসুরার বাড়িটি সড়ক ও জনপদ বিভাগ ভাঙবে না। যতদিন পরিবারটির স্থায়ী বসবাসের ব্যবস্থা করা না যায় ততদিন ঘরটি ভাঙা যাবে না। সড়ক ও জনপথ বিভাগকে ইতোমধ্যে এই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে মুছে দেওয়া হয়েছে সেই ক্রস চিহ্নও।

বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) সকালে মিষ্টি নিয়ে মাসুরার বাড়িতে তার পরিবারের সদস্যদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে এসব কথা বলেন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির।

বিজ্ঞাপন

সাতক্ষীরা শহর থেকে চার কিলোমিটার দূরে বেতনা নদীর তীরে বিনেরপোতা এলাকায় বাড়ি মাসুরাদের। সেখানেই মাসুরার মা-বাবা ও দুই বোন বসবাস করেন। সরকারি জমিতে অবৈধ স্থাপনা দাবি করে এই বাড়িতে ক্রস চিহ্ন সড়ক ও জনপথ বিভাগ।

তবে বৃহস্পতিবার সকালে জেলা প্রশাসকের শুভেচ্ছা বিনিময়ের পরে সওজ কর্তৃপক্ষের দেওয়া লাল ক্রস চিহ্ন মুছে ফেলা হয়। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উপস্থিতিতে সদর উপজেলার ১৩নং লাবসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো আব্দুল আলিম বাড়িতে দেওয়া ক্রস চিহ্নগুলো মুছে দেন।

মাসুরার বাবা রজব আলী সারাবাংলাকে বলেন, ‘এই দাগ দেওয়ার পর থেকে খুবই দুঃশ্চিন্তায় ছিলাম। যেকোনো সময় বাড়ি ভাঙতে পারে বলেও আশঙ্কা করছিলাম। তবে সাংবাদিকরা খবর ছাপানোয় আজ সেই চিন্তা দূর হয়েছে। ডিসি সাহেব বলেছেন ঘর ভাঙা হবে না।’

বিজ্ঞাপন

সাতক্ষীরা সদর ১৩ নং লাবসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল আলিম বলেন, ‘মাসুরা পারভীন আমাদের লাবসা ইউনিয়ন পরিষদের অহংকার। সে আমাদের এলাকার ও দেশের গর্ব। আর তাই আমি নিজে হাতে সওজের দেওয়া লাল ক্রস দাগ মুছে ফেলেছি। আমরা এই পরিবারের পাশে থাকবো সবসময়।’

ঘর ভাঙা হবে না— এমন সংবাদ নিশ্চিত হওয়ার পরে মাসুরার মা ফাতেমা বেগম বলেন, ‘মেয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশে ফিরবে। এমন অবস্থায় সবাই আনন্দ করলেও আমরা ভয়ে ছিলাম। একমাত্র ঘর যদি ভেঙে দেওয়া হয় তবে থাকবো কোথায়? মেয়ে দেশে ফিরে আসার পরে সে কোথায় যাবে— এমন দুঃশ্চিন্তা কাজ করছিল। কিন্তু আজ কিছুটা শান্তি লাগছে।’

সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির সারাবাংলাকে বলেন, ‘মাসুরা, সাবিনারা আমাদের সারাদেশের জন্য আনন্দের উপলক্ষ্য এনে দিয়েছে। তাই স্থানীয়ভাবে তাদের পরিবারের পাশে থাকা আমাদের দায়িত্ব। আমি আজ তাই শুভেচ্ছা জানাতে গিয়েছিলাম। একইসঙ্গে তাদের স্থায়ী বাসস্থান নিশ্চিত না করার আগ পর্যন্ত এই বাড়ি না ভাঙার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

পরবর্তীতে তিনি বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুনের বাড়িতেও মিষ্টি ও ফুল নিয়ে শুভেচ্ছা জানান পরিবারের সদস্যদের।

২০১৮ সালে দক্ষিণ এশিয়ার অনূর্ধ্ব-১৮ টুর্নামেন্টে মাসুরা পারভীনের একমাত্র গোলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে বাংলাদেশ। পরিবারের আর্থিক দুরাবস্থা বিবেচনায় নিয়ে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মাসুরার পরিবারের সদস্যদের জন্য সরকারি জায়গায় বাড়ি করে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।

মাসুরার বাবা রজব আলী বলেন, ‘মন্ত্রণালয় আমাদের যে জায়গা দেয় সেখানে ১৫ ফুট পানি জমে ছিল। বিভিন্ন দফতরে অনেকদিন ছোটাছুটি করার পরেও কোনো সাহায্য পাইনি। পরে বাধ্য হয়ে মাসুরার বঙ্গমাতা গোল্ড কাপের তিন লাখ টাকা দিয়ে মাটি ভরাট করি।’

তিনি বলেন, ‘মাসুরা বাধ্য হয়ে তার সঞ্চিত টাকা দিয়ে এই ঘর করেছে। আগে ভ্যানে করে এলাকায় ফল-মূল বিক্রি করে সংসার চালাতাম। অসুস্থতার কারণে এখন আর সেটাও করতে পারি না। মেয়ের খেলার টাকায় সংসার চলে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করবে শোনার পর থেকে যে দুঃশ্চিন্তায় ছিলাম সেটা আজ কমেছে।’

ক্রস চিহ্ন বিষয়ে সাতক্ষীরা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মীর নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই। অনেক সময় ভুল করেও ক্রস দিয়ে থাকতে পারে কেউ। তবে আজ ডিসি স্যার যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছে সেভাবেই কাজ করা হবে।’

সারাবাংলা/এসবি/এসএস

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন