বিজ্ঞাপন

গুজবি সম্প্রদায়

September 25, 2022 | 9:45 pm

গুজবিরা বড় বেপরোয়া। এরা গুজব ছড়ায় আওয়ামী লীগ সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন‍্য। এরা গুজব ছড়ায় রাষ্ট্রকে অকার্যকর প্রমাণ করার জন‍্য। মরিয়ম মান্নান নামে একজন গণঅধিকারকর্মীকে নিয়ে নেট দুনিয়া গরম। প্রথমে মরিয়ম নেট দুনিয়া ব‍্যস্ত রাখে- পুলিশ তার মাকে গুম করেছে এই বলে। এরপর আগুনে ঘি ঢালে তার মায়ের বস্তাবন্দি গলিত লাশ পেয়েছে এই বলে।

বিজ্ঞাপন

স্পর্শকাতর মানুষ ও সরকার বিরোধীরা স্বাভাবিকভাবেই তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠে। অবশেষে পুলিশ মরিয়মের মাকে জীবিত অবস্থায় আত্মগোপনদশা থেকে বের করে আনলো।

আমার ধারণা মরিয়মের মা নিজস্ব কোনো কারণে আত্মগোপনে গিয়েছিল। হতে পারে সেটি মরিয়মের কারণেই। এমনও হতে পারে মরিয়ম নিজ মাকে হত‍্যার পরিকল্পনা করেছিল সরকারকে ফাঁসাতে। এটি জেনে প্রাণ বাঁচাতে মরিয়মের মা আত্মগোপনে যান। আবার এমনও হতে পারে মা মেয়ে মিলেই সরকারকে বিপাকে ফেলতে ‘গুমের’ নাটক করে। মেয়ের আসল পরিকল্পনা জেনে যাওয়ার পর মা নিজেকে নিজে গুম করেন। আমার ধারণা মরিয়ম যদি জানত তার মা কোথায় আছে তবে লাশ পাওয়া নাটকের পর মরিয়ম অবশ‍্যই তার মাকে হত‍্যা করে লাশ গায়েব করে দিতো ‘লাশ পাওয়া’ নাটককে সত্য প্রমাণ করার জন্য।

মরিয়ম দাবি করেছিল- পুলিশের কাছে তার মায়ের খোঁজে যাওয়ার পর পুলিশ তার সঙ্গে রূঢ় আচরণ করেছে। তার ওপর পুলিশ নির্যাতন করেছে। অথচ নেটে ভাইরাল হওয়া একটা ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে থানায় মরিয়ম পুলিশের সঙ্গে অকথ‍্য ব‍্যবহার করছে! কী ভয়ংকর মানুষ এ মরিয়ম! মা যখন নিখোঁজ তখন সে নতুন গুজব তৈরি করেছে পুলিশ তার ওপর নির্যাতন করেছে বলে!

বিজ্ঞাপন

এই গুজবিরা জঙ্গিদের চেয়ে, উগ্রবাদী ধর্মীয় গোষ্ঠীর চেয়ে কম নয়। এরা মানুষের সরল আবেগকে ব‍্যবহার করছে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য, সরকারকে গদিচ্যুত করার জন্য। এরা ভবিষ্যতে সত‍্যি সত‍্যি সফলভাবে নিজের কোনো স্বজন বা দলীয় কোনো কর্মীকে হত‍্যা করে লাশ গুম করতে পারে গুমের নাটককে সত‍্য প্রমাণ করার জন‍্য। এদের কাছে এদের স্বজন এবং দলীয় সহকর্মীরা মাত্রাছাড়া অনিরাপদ।

ব‍্যক্তিগত বিরোধ, সম্পত্তি নিয়ে দ্বন্দ্ব বিভিন্ন কারণে দেশে খুনের ঘটনা ঘটে। এই গুজবি সম্প্রদায়ের কারও সঙ্গে যদি অরাজনৈতিক তৃতীয় কারও কঠিন শত্রুতা থাকে তবে তারাও সে সুযোগ নিতে পারে। ধরেন গণঅধিকার পরিষদের কেউ খুন হলেন তখন তার সহ গুজবিরা আন্দোলন করবে সরকার খুন করিয়েছে। খুনি এ তথ‍্য জেনেই সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করবে।

গুজবি সম্প্রদায়ের কারণে দেশের কম মানুষ মরেনি। সাঈদীকে চাঁদে দেখা যাওয়ার গুজব ছড়িয়ে ২০ জনের বেশি মানুষ খুন করেছে এ সম্প্রদায়। পদ্মা সেতুর জন‍্য বাচ্চাদের মাথা লাগবে। এ গুজব ছড়িয়ে এরা দশ জনের বেশি মানুষ পিটিয়ে মেরেছে।

বিজ্ঞাপন

নিরাপদ সড়ক আন্দোলন ছিল বাংলাদেশের অতি গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলন। স্কুলের বাচ্চাদের এ আন্দোলন সফলও হতে যাচ্ছিল। পরিবহন সেক্টরের অরাজকতা নিয়ে সরকার চরম উদাসীন। স্কুলের বাচ্চাদের এ আন্দোলনকে দলমত নির্বিশেষে সবাই সমর্থন দিচ্ছিল। সরকার পড়ে প্রবল চাপে। একপর্যায়ে গুজবি সম্প্রদায় এ আন্দোলনে ঢুকে পড়ে। আন্দোলনকে নিয়ে যেতে চায় সরকার পতনের আন্দোলনের দিকে। তাদের প্রধান অস্ত্র ছিল গুজব। পুলিশ ছাত্রলীগ আন্দোলনকারীদের গুলি করে মেরেছে, আওয়ামী লীগের অফিসে ধরে নিয়ে আন্দোলনকারী ছাত্রী ধর্ষণ হয়েছে। একদিন পরেই দেখা গেল, প্রমাণ হলে সব মিথ‍্যা, গুজব। সাধারণ মানুষ আন্দোলনের ওপর বিশ্বাস হারালো। ঘরে ফিরে গেল। ফলত সড়কের অরাজকতা আজও চলছে।

এসব গুজবকারীর কয়জনের বিচার হয়েছে? এরা সূক্ষ্ণ কৌশলে মানুষের প্রাণ নিচ্ছে। সরকারি সংস্থার ওপর মানুষের বিশ্বাস নষ্ট করার চেষ্টা করছে। এতে যে এদের খুব একটি লাভ হচ্ছে তা না কিন্তু সাময়িকভাবে ক্ষতি হচ্ছে রাষ্ট্রের, সাধারণ মানুষের প্রাণহানিও ঘটছে।

লেখক: লেখক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা

বিজ্ঞাপন
প্রিয় পাঠক, লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই ঠিকানায় -
sarabangla.muktomot@gmail.com

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব, এর সাথে সারাবাংলার সম্পাদকীয় নীতিমালা সম্পর্কিত নয়। সারাবাংলা ডটনেট সকল মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে মুক্তমতে প্রকাশিত লেখার দায় সারাবাংলার নয়।

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন