বিজ্ঞাপন

বিতর্কের মধ্যে অনুষ্ঠিত হচ্ছে আবের রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া

September 27, 2022 | 1:22 pm

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন দেশটির অতীত-বর্তমান নেতাসহ হাজার হাজার নাগরিক। মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দেবেন কয়েকশ বিদেশি নেতাসহ বিশিষ্ট ব্যক্তি। তবে এই অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে জাপানে। খবর এএফপি।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার বিকেলে টোকিওর বুডোকান ভেন্যুতে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য আবের দেহাবশেষ পৌঁছাবে। তবে শোক তাঁবুতে ফুল দেওয়ার জন্য সকাল থেকেই লাইনে দাঁড়িয়েছেন হাজারও জাপানি।

নয় বছরের ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে দেশটির উত্তর হোক্কাইডো থেকে আবেকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এসেছেন ৪৬ বছর বয়সী কোজি তাকামোরি। সংবাদ সংস্থা এএফপি’কে তিনি বলেন, ‘আমি তাকে ধন্যবাদ জানাতে চেয়েছিলাম। তিনি জাপানের জন্য অনেক কিছু করেছেন। তিনি (আবে) যেভাবে মারা গেছেন তা খুবই মর্মান্তিক ছিল।’

তিনি বলেন, ‘সত্যি বলতে, আমিও এসেছি কারণ অনেক বিরোধিতা হয়েছে। এটা প্রায় এমন যে আমি এখানে এসেছি তাদের বিরোধিতা করতে যারা এই (অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার) বিরোধিতা করছে।’

বিজ্ঞাপন

জাপানের সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদী প্রধানমন্ত্রী ছিলেন শিনজো আবে। দেশের অন্যতম স্বীকৃত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, আন্তর্জাতিক জোট এবং তার ‘অ্যাবেনোমিক্স’ অর্থনৈতিক কৌশলের জন্য বিশেষভাবে স্মরণীয় তিনি। ২০২০ সালে স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে পদত্যাগ করেছিলেন তিনি। গত ৮ জুলাই ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে প্রচারণা চালানোর সময় এক বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত হন তিনি।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শিনজো আবে দ্বিতীয় ব্যক্তি, যাকে রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার মাধ্যমে শেষ বিদায় জানানো হচ্ছে। যা নিয়ে প্রবল বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। সাম্প্রতিক ভোটে প্রায় ৬০ শতাংশ জাপানি এই রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার বিরোধিতা করেছেন।

আবের হত্যায় অভিযুক্ত খুনির ধারণা, ইউনিফিকেশন চার্চের সঙ্গে আবের সম্পর্ক ছিল। সেখানে তার মায়ের বিশাল অনুদান দেন। এতে করে অসন্তুষ্ট ছিলেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

এই হত্যাকাণ্ড দেশটিতে গির্জা এবং এর তহবিল সংগ্রহের ঘটনা নতুন করে তদন্ত করার বিষয়টি সামলে নিয়ে এসেছে। যা জাপানের রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য অস্বস্তিকর। প্রায় অর্ধেক আইন প্রণেতাদের এই ধর্মীয় সংগঠনের সঙ্গে সম্পর্ক থাকার কথা স্বীকার করেছে দেশটির ক্ষমতাসীন দল।

জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা অঙ্গীকার করে বলেছেন, ‘দলটি গির্জার সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করবে।’

তবে কেলেঙ্কারিটি রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার ওপর অসন্তোষ বাড়িয়ে তুলতে সহায়তা করেছে। হাজার হাজার মানুষ এই অনুষ্ঠানের প্রতিবাদ করেছে। এর প্রতিবাদে গত সপ্তাহে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কাছে শরীরে আগুন দিয়েছেন এক ব্যক্তি। এই অনুষ্ঠানের প্রতি তার আপত্তি জানিয়ে একটি নোট রেখে গেছেন। বিরোধী দলের কিছু আইনপ্রণেতাও শেষকৃত্য সম্পূর্ণভাবে বর্জন করছেন।

বিতর্কের বিভিন্ন কারণ রয়েছে, কেউ কেউ কিশিদাকে পার্লামেন্টের সঙ্গে পরামর্শ করার পরিবর্তে একতরফাভাবে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুমোদন করার জন্য অভিযুক্ত করেছেন। অন্যরা এই অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় প্রায় ১২ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ের সমালোচনা করেছেন।

বিজ্ঞাপন

তবে ব্যাপক বিরোধীতা সত্ত্বেও আবের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অনেক ভিড় দেখা গেছে। তাদের অনেকেই কালো পোশাক পরেছিলেন। বিভিন্ন বয়সের মানুষ এতে যোগ দিচ্ছেন।

এই অনুষ্ঠানের ৭০০ জন বিদেশি আমন্ত্রিত অথিতিসহ আনুমানিক ৪ হাজার ৩০০ জন উপস্থিত থাকবেন। আর এর মধ্যে দিয়ে এই বিতর্কের অবসান ঘটবে বলেও আশা প্রকাশ করেছে জাপান সরকার।

মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজসহ বিশ্ব নেতারা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।

মূলত মার্কিন-জাপানি জোটকে শক্তিশালী করার জন্য আবে ওয়াশিংটনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার কাজ করেছেন। জাপান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত এবং অস্ট্রেলিয়ার একটি শক্তিশালী জোট ‘কোয়াড’ গঠন করেছেন তিনি।

সারাবাংলা/এনএস

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন