বিজ্ঞাপন

দৃঢ়তা, উন্নয়ন ও মানবিকতায় যিনি অদম্য, অদ্বিতীয়

September 28, 2022 | 1:44 pm

অনন্য প্রতীক রাউত

বাংলাদেশ? হোয়াট? হোয়াট ইজ দিস! বহিঃবিশ্বের কাছে আমাদের এক সময়কার নিয়মিত পরিচয় এটাই ছিল। তলাবিহীন ঝুড়ি হতে যাত্রা শুরু করা সেই দেশ আজ বিশ্বের অন্যতম একটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্র। এশিয়ার অন্যতম গতিশীল অর্থনীতির দেশ হিসেবেও তকমা কুড়িয়েছে দেশটি বহু আগেই। বলা হয় ‘ইমার্জিং টাইগার অব এশিয়া’। এমনি এমনি এরূপ দৃশ্যপট তৈরী হয় নি যদিও হবার কথা হয়তো ছিল বহু আগেই। ঘাতকের অভিশপ্ত বুলেট রোধ করে দিয়েছিল সে অগ্রযাত্রা। নানা ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে বিশ্ব দরবারে কলঙ্কিত হবার পর ফিরেছে রাজপথের পবিত্রতা, উন্থান ঘটেছে স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তির। সে রাজনৈতিক মহাকাব্যর নায়ক জননেত্রী শেখ দেশরত্ন শেখ হাসিনা ও লাখো ত্যাগীকর্মীবৃন্দ। দেশরত্নের সুযোগ্য নির্দেশনায় যারা অন্ধকারে ঝাঁপিয়ে জয় করেছে জীবনকে।

বিজ্ঞাপন

মুজিবকে হৃদয় ধারণ করে এদেশের জনগণ খুঁজছিল মুক্তির পথ, দাবানল থেকে বেরোবার রাস্তা। ঠিক তখনই পৌরাণিক ফিনিস্কের মতো মুক্তির আলোয় উদ্ভাসিত হবার বার্তা নিয়ে এদেশে পদধূলি দিলেন বঙ্গবন্ধু তনয়া দেশরত্ন শেখ হাসিনা। পরের গল্পটা শুধুই অগ্রগতির, বাঁধাহীন এমনটা ভাবার কারণ নেই। ২৯ বার অপশক্তি, মৌলবাদী ধর্মান্ধ’রা অসাম্প্রদায়িকতার বিমূর্ত প্রতীক বঙ্গবন্ধু তনয়াকে হত্যার অপচেষ্টা করেছে। উল্লেখ্য যে, ২১ শে আগট ২০০৪ সালে প্রিয় নেত্রী ও দল হিসেবে বাংলাদেশ বির্ণিমানের সাংগঠনিক কারিগর বাংলাদেশ আওয়ামীলীগকে ধ্বংসের নীলনকশা প্রণয়ন করা হয় তখনকার সময়ের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোশকতায়। সৌভাগ্যক্রমে, সৃষ্টিকর্তার অসীম দয়ায় প্রিয় নেত্রীর গায়ে এক চুলো আঘাত করতে পারে নি একাত্তরের ঘাতক দালালদের উত্তরসূরীরা। নেত্রীকে অক্ষত রাখতে নিজের প্রাণ বিলিয়ে দিতে একবারো ভাবে নি গাড়িচালক নেত্রীর স্নেহধন্য মাহাবুব। এই ভয়াবহতায় জাতি হারিয়েছে বেগম আইভি রহমানের মতো সংগ্রামী নারী নেত্রীকে এবং নাম না জানা রাজপথের ত্যাগী কর্মীদের। ঘাতকদের ধারণা ছিল হাওয়া ভবনের মতো হামলার ঘটনাকে হাওয়ায় মিলিয়ে দিবে, প্রমাণ লোপাট করে বাঁচাতে পারবে পোষা পাকপন্থী ক্যাডারদের। এবারেও সম্ভব হয়নি সে অপচেষ্টা।

অবশ্য অপ-রাজনীতির গল্পটা ওখানেই শেষ। পরের পথচলাটা শুধুই ইতিবাচকতার, মানবিকতার এবং দেশকে বির্ণিমানের। বদলে যাওয়া এক বাংলাদেশের নতুন ঠিকানা জনগণের জননেত্রী শেখ হাসিনা। অপশক্তির অপচেষ্টার কাছে বারবার জয়ী হয়ে যিনি গড়ে তুলেছেন নিজেকে, বাংলাদেশকে। দেখিয়েছেন দৃঢ়তা, সৃষ্টি করেছেন উন্নয়নের মহাত্ত্বতা। টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া কিংবা রূপসা থেকে পাথুরিয়া পুরোটাই আজ সমৃদ্ধ, উন্নত, ক্ষুধা-দারিদ্র‍্য মুক্ত। পাশাপাশি বসবাস অনুপযোগী হিসেবে স্বীকৃত রাজধানী ঢাকা শহরকে পরিকল্পিত নগরায়নের আওতায় আনতে শেখ হাসিনা বা তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকার হাতে নিয়েছে নানামুখী পদক্ষেপ।

বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এবং স্বপ্নের বাংলাদেশ বির্ণিমানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালে সদ্য স্বাধীন হওয়া দেশের মাত্র ৭৮৬ কোটি টাকার বাজেট আজ পরিণত হয়েছে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকায়। সেদিনের ১২৯ ডলারের মাথাপিছু আয়ের দেশে আজ মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৫৯১ ডলার। বিগত দুই যুগে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) সিঙ্গাপুর ও হংকংকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ এখন এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ১৩তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তীতে আমরা সল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আন্তজার্তিক স্বীকৃতি অর্জন করেছি। শুধু তাই নয়, যে অত্যাচারী শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে আমরা স্বাধীনতার সূর্য ছিনিয়ে এনেছিলাম, উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় মাত্র পঞ্চাশ বছরে সেই পাকিস্তানকে পেছনে ফেলেছি প্রায় সবদিক থেকে। নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবীদ অমর্ত্য সেন বলেছেন, ‘সামাজিক-অর্থনৈতিক সবক্ষেত্রেই বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে অনেক এগিয়ে’। আমাদের রফতানি রিজার্ভ, রেমিটেন্স, বিদ্যুৎ উৎপাদন আজ পাকিস্তান থেকে বেশি। বর্তমানে দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২৫ হাজার ৫১৪ মেগাওয়াট। যার সুফল এখন ১০০ শতাংশ জনগণ ভোগ করতে পারছে। রপ্তানি ও রেমিট্যান্স আয়ে আজ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৬ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। গড়আয়ু এবং নারীর ক্ষমতায়নেও আমরাই এগিয়ে। বর্তমান বাংলাদেশের জনগণের গড় আয়ু ৭২.৩ বছর। মাতৃ মৃত্যহার, শিশুমৃত্যু হার, জন্মহার পাকিস্তানের চেয়ে কম। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে, তৎকালীন পশ্চিম-পাকিস্তানের উন্নয়ন পুরোপুরি ভাবেই ছিলো পূর্ব-পাকিস্তান তথা বাংলাদেশ নির্ভর। আন্তজার্তিক মহলে তাই আজ পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশের মর্যাদা অনেক অনেক বেশি। এমনকি স্বাধীনতার পর ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ আখ্যায়িত করে যারা অপমান করেছিল, সেই তাদের কণ্ঠেই এখন বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসা। সরকার এসডিজি এবং জাতীয় অঙ্গীকারের ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০১৬-২০২০) প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করে চলেছে। যার মধ্যে সাক্ষরতা বিস্তার, দক্ষতা উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ এবং জীবনব্যাপী শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির জন্য উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টিতে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। বিগত কয়েক বছরে জনগণের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৭২.৩ বছর। প্রাথমিক পর্যায়ে ঝরে পড়ার হার কমে যাওয়ায় শিক্ষার হারও বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৯ পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা ছিলো ২২,২৫৯ মেগাওয়াট, দেশের শতভাগ জনগণ এখন বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। আইসিটি খাতে রপ্তানি বিষয়টি অবাস্তব মনে হলেও ২০১৯ সালে আইসিটি খাতে রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে রাজধানীতে ২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মেট্রোরেল স্থাপন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে, যা ১৬টি স্টেশন ঘণ্টায় প্রায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা রাখবে। বাঙালির স্বপ্নের সেতু ‘পদ্মা বহুমুখী সেতু’র কাজ প্রায় সমাপ্তির পথে, যা নিজস্ব বাজেটেই সম্পন্ন হচ্ছে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের মতে, লিঙ্গবৈষম্য দূরীকরণে দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে বাংলাদেশ। যেকোনো সময় জরুরি ভিত্তিতে সেবা পেতে আধুনিক বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও চালু হয়েছে ইমার্জেন্সি সার্ভিস ‘৯৯৯’ কল সেবা। এছাড়া জনগণের সেবাদানে অন্যান্য কল সেবাগুলো চালু হয়েছে; দুদক, নারী নির্যাতন বা বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, সরকারি তথ্যসেবা, স্বাস্থ্য বাতায়ন, দুর্যোগের আগাম বার্তা, জাতীয় পরিচয়পত্র তথ্য ও মানবাধিকার সহায়ক কল সেন্টার। দারিদ্র্য হ্রাস, সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, গৃহহীন ৯৯ লাখ মানুষকে ঘর তৈরি করে দেওয়া, সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দক্ষতা, শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি, তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন, মানবসম্পদ উন্নয়নসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করেছে বর্তমান বাংলাদেশ। অর্থনীতির প্রতিটি সূচকে সাধিত হয়েছে অপরিমেয় অগ্রগতি। স্বপ্নের পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলি টানেল, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প তার জলন্ত উদাহরণ।

বিজ্ঞাপন

সকল অর্জনকে ম্লান করতে ধেয়ে এসেছিল মহামারী করোনা৷ দেশদ্রোহী অপশক্তি একপ্রকার খুশি মনে বসেইছিল প্রাকৃতিক বাহানায় জনগণকে বিভ্রান্ত করতে৷ অর্থনৈতিক সংকট চরম আকার ধারণ করবে, অজস্র লোকের লাশের গন্ধে মৃত্যুপুরীতে পরিণত হবে গোটা দেশ এটা আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থার ভাবনা ছিল৷ কমপক্ষে ৩ কোটি লোক আক্রান্ত হবে প্রথম ধাক্কায় এবং ৫০ লক্ষ লোক মারা যাবে এমনটা বলা হচ্ছিল। অর্থনৈতিক সংকট, খাদ্যসংকট তো হয় ই নি বরং সে সময় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। কেননা সরকার সিস্টেমেটিক ওয়েতে চালু রেখেছে কলকারখানা সহ সব শিল্প প্রতিষ্ঠান। এমনকি করোনা প্রতিরোধে ভ্যাকসিন আমদানি ও ব্যবহারে দুর্দান্ত দূরদর্শিতা দেখিয়েছে শেখ হাসিনার সরকার। যার ফলশ্রুতিতে দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে৷

বর্তমানে শুধু জাতীয় নেতাই নন, তিনি আজ তৃতীয় বিশ্বের একজন বিচক্ষণ বিশ্বনেতা হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছেন অনন্য ভূমিকায়। রোহিঙ্গা সমস্যার যৌক্তিক সমাধানের জন্য হয়েছেন ভূয়সী প্রশংসিত, পেয়েছেন ‘Mother Of Humanity’ উপাধি । পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা ।

শেখ হাসিনা মানে শুধুই শেখ হাসিনা! তার কোন বিকল্প নাই । প্রিয় নেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু ও সুস্থতা কামনা করি। তার হাতেই নিরাপদ বাংলাদেশ। জন্মদিনে অনেক শুভেচ্ছা ও অবিরাম শুভ কামনা দেশরত্ন। আপনি বাংলাদেশকে নতুন মোড়কে নতুনত্বে পৌঁছে দেয়ার কারিগর, আপনি মমতাময়ী, আপনি দূরদর্শী, দুর্বিত্তের কাছে ভয়ংকর, দেশদ্রোহী অপশক্তির কাছে আতঙ্ক। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু। বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।

বিজ্ঞাপন

লেখক: শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

প্রিয় পাঠক, লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই ঠিকানায় -
sarabangla.muktomot@gmail.com

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব, এর সাথে সারাবাংলার সম্পাদকীয় নীতিমালা সম্পর্কিত নয়। সারাবাংলা ডটনেট সকল মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে মুক্তমতে প্রকাশিত লেখার দায় সারাবাংলার নয়।

সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন