বিজ্ঞাপন

‘বদলির চক্রান্ত’ ঠেকাতে ডিসি মমিনুরের পাশে উপজেলা চেয়ারম্যানরা

September 29, 2022 | 7:15 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিজয় কামনা করে মোনাজাতে অংশ নিয়ে রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পাওয়া চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমানের পক্ষে এবার ‘একজোট’ হয়েছেন উপজেলা পরিষদের জনপ্রতিনিধিরা। জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগ এনে তার সম্ভাব্য বদলি ঠেকাতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানরা। তাদের দাবি, মমিনুরকে বদলি করা হলে চট্টগ্রামবাসী ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল খালেক মিলনায়তনে ‘উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশন চট্টগ্রাম জেলা ও বিভাগ’র উদ্যোগে এই সংবাদ সম্মেলন করা হয়।

এতে অ্যাসোসিয়েশনের বিভাগীয় সভাপতি ও রাউজান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম এহেছানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল বলেন, ‘গত ১৫ সেপ্টেম্বর জেলা পরিষদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের পর মূলত মুসলিম ধর্মীয় বিধান মেনে মোনাজাতে শামিল হন জেলা প্রশাসক ও তৎকালীন রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ মমিনুর রহমান। মোনাজাত পরিচালনাকারীর বক্তব্যের সঙ্গে জেলা প্রশাসক কোনভাবেই সম্পৃক্ত নন। ওইদিন মোনাজাতে তিনি একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি।’

বাবুলের দাবি, জঙ্গল সলিমপুর এলাকায় অবৈধভাবে জমি বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া একটি সিন্ডিকেটের অর্থায়নে এবং একটি পেশাজীবী সংগঠনের পৃষ্ঠপোষকতায় জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হয়েছে। জঙ্গল সলিমপুরে ভূমিদস্যুতার বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের অবস্থান, পরীর পাহাড় সুরক্ষা, ভূমি অধিগ্রহণে দালাল চক্রকে শক্ত হাতে দমন- এই তিনটি বিষয় নিয়ে স্বার্থান্বেষী মহল, যারা নিজের স্বার্থ হাসিলে ব্যর্থ হয়েছেন, তারাই উদ্দেশ্যমূলকভাবে এই ধরনের নাটক মঞ্চায়ন করেছেন।

বিজ্ঞাপন

পেশাজীবী সংগঠনের পৃষ্ঠপোষকতার কথা বললেও নাম প্রকাশ করেননি এহছানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল। তিনি আরও বলেন, ‘নিজেদের স্বার্থ হাসিলে ব্যর্থ গোষ্ঠী সৎ ও যোগ্য জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমানকে চট্টগ্রাম থেকে সরিয়ে দিতে চায়। তাকে চট্টগ্রাম থেকে বদলি করা হলে চট্টগ্রামবাসীর স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমরা জনপ্রতিনিধিরা চট্টগ্রামবাসীর স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে কোনো ধরনের হীনস্বার্থ চরিতার্থ করতে দেব না।’ মোহাম্মদ মমিনুর রহমানের প্রতি ন্যায়বিচার করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানান বাবুল।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- আনোয়ারা উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরী, ফটিকছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান হোসাইন মো. আবু তৈয়ব, পটিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী ও ভাইস চেয়ারম্যান ডা. তিমির বরণ চৌধুরী, পটিয়ার পৌর মেয়র আইয়ুব বাবুল, রাউজানের পৌর মেয়র জমির উদ্দিন পারভেজ, চট্টগ্রাম জেলা পুজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শ্যামল কুমার পালিত, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার একেএম সরোয়ার কামাল প্রমুখ।

গত ১৫ সেপ্টেম্বর জেলা পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার হিসেবে জেলা প্রশাসক মোহাম্ম মমিনুর রহমানের একটি কর্মকাণ্ডে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। ওইদিন জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী এটিএম পেয়ারুল ইসলাম রিটার্নিং অফিসার অর্থাৎ জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে মনোনয়ন পত্র জমা দিতে যান। মনোনয়ন পত্র জমাদান শেষে নগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য শফর আলী প্রার্থীর বিজয় কামনা করে মোনাজাত ধরেন। এতে আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে রিটার্নিং অফিসারকেও হাত তুলে অংশ নিতে দেখা যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ও ছবিতে।

বিজ্ঞাপন

মোনাজাতের পর আওয়ামী লীগ প্রার্থী এটিএম পেয়ারুল ইসলামকে বাম পাশে এবং সাংসদ মোছলেম উদ্দিন আহমেদকে ডান পাশে বসিয়ে উপস্থিত দলটির নেতাদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন রিটার্নিং অফিসার মোহাম্মদ মমিনুর রহমান। বক্তব্যে তিনি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবার যাতে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়, সেজন্য বিএনপি-জামায়াতের দোয়া কামনা করেন। জেলা প্রশাসকের পর সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন সাংসদ মোছলেম উদ্দিন আহমেদ। মোনাজাত এবং জেলা প্রশাসকের বক্তব্যের ভিডিও এবং ছবির ভিত্তিতে সংবাদ প্রকাশিত হয় সারাবাংলায় এবং পরবর্তীতে আরও বিভিন্ন গণমাধ্যমে।

এরপর ১৭ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমানকে রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহার করে নিতে আইনি নোটিশ পাঠান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ মাহাবুবুর রহমান খান। ১৮ সেপ্টেম্বর মোহাম্মদ মমিনুর রহমানকে রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসানুজ্জামানকে সেই স্থলে বসিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন।

জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুরে সরকারি খাসজমি থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ অভিযান শুরু করায় জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে তাকে বদলির চক্রান্ত করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসকের পক্ষে বীর মুক্তিযোদ্ধা, এনজিওসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, আওয়ামী লীগ নেতা আ জ ম নাছির উদ্দীনসহ কয়েকজন রাজনীতিক, ক্রীড়া সংগঠক, সাংবাদিক নেতাদের একাংশ মাঠে নামেন। তাদেরও একই মত, জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন